ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ফিরে দেখা-২০১৫

জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে আরও সমৃদ্ধ তিন বাহিনী

সাজেদা সুইটি, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে আরও সমৃদ্ধ তিন বাহিনী

ঢাকা: বিশ্বের বুকে নিজেদের দৃঢ় অবস্থানের জানানটুকু আরও আগেই দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী। সে ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে ২০১৫ সালেও।

বিদায়ী বছরটি জুড়ে নিজেদের শক্তি-সমৃদ্ধি আরও ব্যাপক পরিসরে তুলে ধরেছে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী।
 
বলা হয়, দেশের কল্যাণে অকাতরে জীবনদানের স্বভাব মজ্জায় রাখেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। বিদেশেও আর্তের সহযোগিতায় তারা ছিলেন বরাবর নিরলস। সাফল্যের পাল্লা তাই ক্রমশ ভারি হয়েছে। সবুজ বাংলার নিরাপত্তার অতন্দ্র প্রহরীরা বাসিন্দাদের স্বস্তি দিতে রয়েছেন মরিয়া।  
 
সব দেখে-শুনে তাই রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন বাহিনীর প্রতি আস্থা জানিয়েছেন বারবার।

বাংলার নারীর অন্তরীক্ষ জয়
অক্টোবরের ২৮- সামরিক বাহিনীর ঐতিহাসিক একটি দিন। এদিন সেনাবাহিনীর শিক্ষানবিশ দুই নারী পাইলট প্রথমবারের মতো সফলভাবে প্রশিক্ষণ বিমানে একক ও দ্বৈত উড্ডয়ন পরিচালনা করলেন। দেশমাতৃকার সেই বীর সেনানিরা হলেন- ক্যাপ্টেন নাজিয়া নুসরাত হোসেন ও ক্যাপ্টেন শাহরিনা বিনতে আনোয়ার।
 
ঢাকার তেজগাঁওয়ে আর্মি অ্যাভিয়েশন গ্রুপে সেসনা ১৫২ অ্যারোপেক প্রশিক্ষণ বিমানে তাদের উড্ডয়ন পরিণত হয়েছে বাংলার নারীদের অনুপ্রেরণার উৎস।

জলে অবিচল ‘সমুদ্র অভিযান’
যুদ্ধজাহাজ ‘সমুদ্র অভিযান’ এখন বাংলাদেশে। বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা যুদ্ধজাহাজটি চট্টগ্রামের নৌ-ঘাঁটিতে এসে পৌঁছে গত ২৮ নভেম্বর।   সাড়ে তিন হাজার টন ওজনের জাহাজটি ২৯ নট গতিবেগে চলতে সক্ষম।
 
গত ১১ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড ঘাঁটি আলামেগা থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে জাহাজটি। ‘সমুদ্র অভিযান’ শক্তি বাড়িয়েছে নৌ-বাহিনীর। এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে (ইইজেড) অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে আরও ভালোভাবে সাপোর্ট দিতে পারবে জলসীমার অতন্দ্র প্রহরী বাহিনীটি।

‘পুতিনের ইয়াক-১৩০ শেখ হাসিনার বাংলাদেশে’
বিদেশি সংবাদমাধ্যমেও গুরুত্বের সঙ্গে এসেছে খবরটি।

ভারতের একটি পত্রিকা লিখেছে, ‘বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে সর্বাধুনিক সংযোজন রাশিয়ার এ কমব্যাট ট্রেনার এয়ারক্রাফট ইয়াকভলেভ ইয়াক-১৩০।   পুতিনের রাশিয়ার কাছ থেকে ১৬টি ইয়াক-১৩০ কিনছে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষায় নতুন বর্মের অবতারণা ঘটল’।
 
রাশিয়ার সরকারি হাইটেক কোম্পানি রোজবোর্ন এক্সপোর্টের (রোস্টেক) সের্গেই শেমেজভ সেদেশের সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, বাংলাদেশকে প্রথম দফায় ছয়টি ইয়াক-১৩০ হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ১০টি ২০১৬ সালের মধ্যেই হস্তান্তর হবে।
 
দেশি সংবাদমাধ্যম লিখেছে, রাশিয়া থেকে কেনা ইয়াক-১৩০ বিমানগুলোর মধ্যে প্রধম দফায় ৬টি ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে এসেছে। বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নে রাশিয়া থেকে ১৬টি ইয়াক-১৩০ যুদ্ধপ্রশিক্ষণ বিমান কেনার সিদ্ধান্ত সরকারেই। প্রথম দফায় ৬টি এসেছে এএন-১২৪ পরিবহন বিমানে।

প্রথম তিনটি গত ২০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের বিমানঘাঁটি জহুরুল হকে নিয়ে যাওয়া হয়। বাকি ১০টি বিমানও একই প্রক্রিয়ায় রাশিয়া থেকে আনা হবে বলে বাহিনী থেকে জানানো হয়েছে।

ইয়াক-১৩০ শুধু যুদ্ধ প্রশিক্ষণ বিমানই নয়, শত্রুবিমান মোকাবেলায়ও পারদর্শী। রাশিয়ার এভিয়েশন প্রতিষ্ঠান ইরকুত কর্পোরেশন বিমানগুলো তৈরি করেছে।
 
নতুন বেতন কাঠামোতে তিন বাহিনী
বেসামরিক কর্মচারীদের সঙ্গে মিল রেখে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যও নতুন বেতন কাঠামো অনুমোদন করেছে সরকার।
 
এতে ২০টি গ্রেডে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বিন্যস্ত থাকবে। সর্বোচ্চ পদের একজন চার তারকা জেনারেল (বাহিনী প্রধান) মূল বেতন হিসেবে মাসে ৮৬ হাজার টাকা বেতন পাবেন। বাড়ি ভাড়াসহ সশস্ত্র বাহিনীর জন্য প্রযোজ্য অন্যান্য ভাতা-সুবিধাও পাবেন।
 
লেফটেনেন্ট জেনারেল পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের মূল বেতন হবে সিনিয়র সচিবদের সমান ৮২ হাজার টাকা। মেজর জেনারেল ও সমান র‌্যাঙ্কের কর্মকর্তারা বেতন পাবেন মাসে ৭৮ হাজার টাকা। সেকেন্ড লেফটেন্যান্টের মূল বেতন হবে মাসে ২২ হাজার টাকা।

তিন বাহিনী প্রধানই ‘ফোর-স্টার’ মর্যাদায়
দীর্ঘ ২৭ বছরেরও বেশি সময়ের ব্যবধান ঘোচানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেনাপ্রধানের সমান মর্যাদা পেতে চলেছেন নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধান। সেনাপ্রধানের মতো তারাও পাবেন ফোর-স্টার মর্যাদা।
 
নতুন বেতন কাঠামো অনুসারে জুলাই থেকে সেনাপ্রধানের সমান বেতন-ভাতা পাবেন তারা।
 
মন্ত্রিপরিষদে পে-স্কেল অনুমোদনের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সব বাহিনীই গুরুত্বপূর্ণ, বাহিনী প্রধানরাও। তাই তাদের সমান মর্যাদা ও সুবিধা প্রাপ্য।

নতুন প্রধান পেল সেনাবাহিনী
২৫ জুন দেশের ১৪তম সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক। আগামী ৩ বছরের জন্য এ দায়িত্বে এলেন তিনি।

ওইদিন দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাসদরে শফিউল হকের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন বিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া। সেনাপ্রধান হওয়ার আগে শফিউল হক সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২৫ জুন দায়িত্ব নিলেও তার পদোন্নতি হয়েছিল ১০ জুন।  
 
নতুন প্রধান বিমান বাহিনীরও
১২ জুন থেকে বিমান বাহিনীর এয়ার ভাইস মার্শাল আবু এসরার এয়ার মার্শাল পদে রয়েছেন। তিন বছর মেয়াদে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাকে। এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারীর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন তিনি।

কঙ্গো মিশনে ৩৫৮ বিমান সদস্যে ৯ দুর্দান্ত নারী
বিশ্বের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ একটি প্রশংসিত নাম। ২০১৫ সালেও সে ধারাবাহিকতা বজায় ছিল।
 
নভেম্বরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কঙ্গো গেছেন বিমান বাহিনীর ৩৫৮ সদস্য। এ দলে রয়েছেন ৯ নারী সেনাও।
 
নারী সেনাদের মধ্যে স্কোয়াড্রন লিডার রয়েছেন চারজন। তারা হলেন- মনজিলা, রুমানা, সাইফা, মৌলি। আর নওরীন, মধুরিমা, ফারিহা, হীরা ও হামিদা- এই পাঁচজন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
এসকেএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।