ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

তিস্তা যেন মরা খাল!

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৬
তিস্তা যেন মরা খাল! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লালমনিরহাট: চির চেনা তিস্তা নদীর অতীতের সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে। বর্ষা শেষ হতে না হতেই শুকিয়ে গেছে পানি।

দেখে মনে হয়, এ যেন নদী নয়- মরা খাল।

শীতের শুরুতেই খরা স্রোতস্বিনী তিস্তা ধূ-ধূ বালুচরে পরিণত হয়েছে। পানি শূন্য তিস্তায় মাছ ধরতে না পেরে কষ্টের সীমা নেই জেলেদের। বাধ্য হয়ে অনেক জেলেই জীবন-জীবিকার তাগিদে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অন্য পেশায়।

জানা গেছে, ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী নীলফামারী জেলার কালীগঞ্জ সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। যা লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদীর সঙ্গে মিশেছে। এর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার হলেও বাংলাদেশ অংশে রয়েছে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার।
‌‌
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের বিরুদ্ধে সে দেশের গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে একতরফাভাবে তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ রয়েছে।   

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ কারণেই বর্ষা শেষ হতে না হতে বাংলাদেশ অংশের তিস্তা মরা খালে পরিণত হয়। ফলে পরিবর্তীত হয়ে যাচ্ছে লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী জেলার ১২৫ কিলোমিটার তিস্তা পাড়ের জীবনযাত্রা, জীববৈচিত্র্য। দেশের অন্যতম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ আজ  মৃত প্রায়।

তিস্তা নদীর উপর নির্মিত তিস্তা রেল সেতু, তিস্তা সড়ক সেতু ও নির্মাণাধীন দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু রয়েছে। ঢেউহীন তিস্তায় রয়েছে শুধু বালুকণা।

দেশের পাঁচটি জেলার অর্ধ লক্ষাধিক জেলে পরিবারের দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে। তিস্তার বুক জুড়ে জেগে উঠা বালুচরে লাগানো বিভিন্ন সবজি প্রয়োজনীয় সেচের অভাবে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে।

তিস্তা নদীতে মাছ ধরে শুটকি করে  বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন এ অঞ্চলের জেলেরা। তারাও আজ কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় তিস্তা পাড়ের মাঝি-মাল্লাদেরও একই অবস্থা।

তিস্তা পাড়ের জেলে মহির উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, বর্ষার সময় মাছ ধরে মোটামুটি ভালোই ছিলেন পরিবার পরিজন নিয়ে। কিন্তু বর্তমানে নদীতে বেশি পানি না থাকায় মাছও নেই। তাই কষ্টে চলছে দিন।

তিস্তা নদীর খেয়াঘাটের মাঝি মাজহারুল আক্ষেপের সুরে বাংলানিউজকে জানান, পানি না থাকায় এক সময়ের খরস্রোতা তিস্তা দিনে দিনে খালে পরিণত হচ্ছে। শুধুমাত্র বর্ষায় চার/পাঁচ মাস নৌকা চালালেও বছরের বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে। ফলে তখন তিন বেলা খাবার জোটানো মুশকিল হয়ে পড়ে।

হবিবর রহমান, শফি, নজির হোসেনসহ তিস্তার তীরবর্তি লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ এলাকার অনেক কৃষক  বাংলানিউজকে জানান, তিস্তায় তেমন পানি না থাকায় ধান, পাট, ভুট্টা ও আলুসহ বিভিন্ন সবজি খেতে দূর থেকে প্রতিদিন পানি সেচ দেওয়া হলেও তা যথেষ্ট নয়। ফলে পানির অভাবে ফসলের ক্ষেত ধূসর হয়ে যাচ্ছে।

তিস্তা পাড়ের কৃষাণী লাকী বেগম বলেন, বর্ষার সময় বন্যায় কষ্ট, আর শুষ্ক সময়ে পানির অভাবে ফসল শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। সব কষ্ট যেন আমাদের কপালেই লেখা।

তাই জীবন ও জীবিকার জন্য তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা চান তারা। দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজার রহমান বাংলানিউজকে জানান, প্রয়োজনের তুলনায় তিস্তার পানি প্রবাহ অনেক কম। যে পরিমাণ পানি রয়েছে, তা দিয়ে সেচ প্রকল্পের আওতায় শুধু নীলফামারী জেলায় সেচ দেওয়াও কষ্টকর হবে। তবে বর্তমানে তিস্তায় কি পরিমাণ পানি আছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ০০১৫  ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৬
এসএইচ/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।