ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

উচ্চ ফলনশীল ধান চাষে ঝুঁকছে লক্ষ্মীপুরের কৃষক

সাজ্জাদুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৬
উচ্চ ফলনশীল ধান চাষে ঝুঁকছে লক্ষ্মীপুরের কৃষক ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লক্ষ্মীপুর: স্থানীয় জাতের ধান চাষে বেশি সময়ে কম ফলন, উচ্চ ফলনশীন ধানে কম সময়ে বেশি ফলন। যে কারণে লক্ষ্মীপুরের কৃষকরা উচ্চ ফলনশীল ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।



চলতি আমন মৌসুমে লক্ষ্মীপুরে প্রায় ৬০ ভাগ উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। ধান গবেষকদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে অর্জিত ফলন এবং কৃষকদের নিজস্ব জ্ঞানে অর্জিত ফলনের মধ্যে ব্যাপক ব্যবধান পরিলক্ষিত হয়। এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগের প্রচেষ্টায় কৃষকরা সচেতন হচ্ছেন। তারা এখন উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান আবাদ করছেন। এ ধান আবাদে স্থানীয় জাতের ধানের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি ফলন হয়।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট নোয়াখালী অঞ্চলের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মহিউদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ১০০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে কৃষক উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান কেটে ঘরে তুলতে পারে। হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয় ৪ থেকে ৪ দশমিক ৫ টন।

অপরদিকে, স্থানীয় জাতের ধান ১৪০ থেকে ১৪৫ দিনে ঘরে ওঠে। উৎপাদন হয় অর্ধেকেরও কম। স্থানীয় জাতের ধানের চেয়ে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান ২৫ থেকে ১ মাস আগে ঘরে তুলতে পারায় জমিতে রস থাকা অবস্থায় রবি ফসলের চাষ করা যায়। এতে অধিক রবিশস্যও উৎপাদন হয়ে থাকে। আগাম বর্ষা থেকে ফসলকে রক্ষা করা যায়। বীজ সংরক্ষণে সুবিধা হয়।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্রি-ধান চাষ করে তারা লাভবান হচ্ছেন। কম সময়ে অধিক ফলন পান। এ ধানের চাল তারা সারা বছর ধরে খান। বীজ সংরক্ষণ করেন। ধান বিক্রিও করতে পারেন। কিন্তু স্থানীয় জাতের ধান চাষ করলে বছরজুড়ে তাদের খাওয়ার চালই হতো না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি লক্ষ্মীপুর অফিস সূত্রে জানা যায়, আমন মৌসুমে এ জেলায় আবাদ হয়েছে উচ্চ ফলনশীল ধান- এগ্রো-১৪, ধানী গোল্ড, এসিআই-১, টিয়া। উফশী জাতের বিআর-৩, বিআর-১০, বিআর-১১, বিআর-২২, বিআর-২৩। ব্রিধান-৩০, ব্রিধান-৩২, ব্রিধান-৩৩, ব্রিধান-৩৯, ব্রিধান-৪০, ব্রিধান-৪১, ব্রিধান-৪৪, ব্রিধান-৪৬, ব্রিধান-৪৯, ব্রিধান-৫১, ব্রিধান-৫২, ব্রিধান-৫৪, ব্রিধান-৫৬, ব্রিধান-৬২, বিনা-৭, হরি, স্বর্ণা ও রঞ্জিত।

অপরদিকে, আবাদ কমেছে দেশীয় জাতের ধান কাজলশাইল, ঘিঘজ, মধুমালতি, কার্তিকশাইল, রাজাশাইল, আগুনিশাইল, কুটিয়ামনি, পিপড়ার লেইত, লক্ষীকাজল, সাদা মোটা, ভূষিহারা, কালিজিরা, মতিহারী, মইশামিরা, কাতিজাল, নাইজারশাইল, লতিশাইল ও কালোগোরা।

সূত্র আরও জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার রায়পুর উপজেলায় উচ্চ ফলনশীল উফশী জাতের আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ১৮৬ হেক্টর, স্থানীয় জাতের ২৪৩ হেক্টর। রামগঞ্জে উচ্চ ফলনশীল ২ হাজার ৭৭০ হেক্টর, স্থানীয় ধানের আবাদ হয়নি।

রামগতিতে উচ্চ ফলনশীল ১৬ হাজার ১৭০ হেক্টর, স্থানীয় জাতের ৬ হাজার ৯১০ হেক্টর। কমলনগরে উচ্চ ফলনশীল ১৩ হাজার ৪৪৫ হেক্টর, স্থানীয় ৯ হাজার ৬৬০ হেক্টর এবং লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় ১২ হাজার ৪১৫ হেক্টর উচ্চ ফলনশীল এবং ১১ হাজার ১শ’ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ধানের চাষ হয়েছে।

জেলায় মোট উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৪১ হাজার ২৮৫ মে.টন। অপরদিকে, স্থানীয় জাতের ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৬ হাজার ৫৩ মে.টন।

লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে জানান, নিবিড় বার্ষিক ফসল উৎপাদন কর্মসূচি ২০১৫-২০১৬ এর আওতায় খরিফ-২ মৌসুমের রোপা আমন ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি হয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষ করায় উৎপাদন বেশি হয়েছে। এছাড়া আবহাওয়া অনুকূলে ছিল।

কৃষি অফিস ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০২১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৬
পিসি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।