ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ময়মনসিংহ হিসাব রক্ষণ অফিস

১০ টাকায় আগে সিরিয়াল!

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৬
১০ টাকায় আগে সিরিয়াল! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ:  ময়মনসিংহ জেলা হিসাব রক্ষণ অফিস। অফিসের পেনশন শাখার সামনে দীর্ঘ লাইন।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছেন বয়োবৃদ্ধারা। জানালা দিয়ে জমা নেওয়া হচ্ছে তাদের পেনশন বই। অনেকে আবার লাইনে না দাঁড়িয়ে ঠিক পাশের দরজা দিয়েও মুনাফা বা পেনশন বই জমা দিচ্ছেন।

এ দৃশ্য দেখে যে কেউ প্রথমেই ভাবতে পারেন ভোগান্তি এড়াতেই ওই দরজা দিয়েও বুঝি পেনশন বই জমা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সেখানে চলছে টু-পাইসের কারবার। তবে টু-পাইসের অঙ্ক বেশি নয়। মাত্র ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা।

লাইনে দাঁড়িয়ে যারা পেনশন বই জমা দিতে মুখিয়ে আছেন তাদের ভাষ্যমতে লাইনটি ‘দু’নম্বরি লাইন’।

অর্থাৎ, টু-পাইসের বিনিময়ে অফিসের পিয়নদের ম্যানেজ করেই ওই দরজায় পরে এসে আগে কাজ সেরে ফেলছেন অনেকেই। পেনশন বইয়ের ভেতর ওই টাকা গুঁজে দিলেই আর হুড়োহুড়ি করে লাইনে দাঁড়ানোর দরকার হচ্ছে না।

রোববার (১০ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা নাগাদ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচতলার ওই অফিসের সামনে দেখা গেল এ চিত্র।

পেনশনের টাকা তুলতে এসেছেন আনোয়ারা খাতুন। বয়স ষাটের কোটায়। তার স্বামী পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের পিয়নের চাকরি করতেন। স্বামীর টাকা তুলতেই ঘণ্টা দেড়েক ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। তিনি জানান, সকাল ১০টা থেকে লাইনে দাঁড়ানো। এখন পর্যন্ত পেনশন বই জমা হয়নি তার।

১০ টাকা দিলে আর লাইনে দাঁড়াতে হতো না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

আনোয়ারা খাতুনের মতোই অভিযোগ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অন্যদের। তাদেরই একজন ফাতেমা খাতুন (৫৫)। তিনি বলেন, ‘এই লাইনে না দাঁড়িয়ে দরজার সামনে অনেকেই দাঁড়িয়েছেন। তারা পিয়নদের ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা দিয়ে পরে এসে আগে কাজ শেষ করে চলে যাচ্ছেন’।

‘সবখানে দু’নম্বরি। টাকা পাইলে মজিবুর (অফিসের পিয়ন) আগে কাম কইরা দেয়। আমরা তারে টাকা দিমু না বইল্ল্যাই এ লাইনে দাঁড়াইছি’ চেচিয়ে উঠলেন আঞ্জুমান নেছা। তার স্বামী মো. হোসেন কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের কনস্টেবল ছিলেন। স্বামীর পেনশনের টাকা উঠাতে এসেছেন এখানে।

তার সঙ্গে কন্ঠ মেলাতে দেখা গেলো মজিদা আক্তার (৬০) নামের আরেক বৃদ্ধাকেও।

এসব বৃদ্ধা মহিলাদের বেশিরভাগেরই স্বামী নেই। পেনশনের টাকায় চলে তাদের সন্তানের ভরণ-পোষণ, সংসার। শীতের সকালে কুয়াশা মাথায় নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। এখানে কাজ শেষ করে টাকা তুলতে আবার ছুটতে হবে ব্যাংকে। এতো কাজ শেষ করে কখন বাসায় ফিরবেন তারা?
 
স্ত্রীর পেনশনের টাকা তুলতে আসা আবুল কাশেম নামের একজনকে দেখা গেলো ওই দরজার সামনে অপেক্ষা করতে। লাইনে দাঁড়াননি কেন জানতে চাইলে খানিকটা হেসে বলেন, ‘সবাই বলতাছে, এইহানে কিছু চা-পান খাওনের টেহা দিলে কাম হয়। এই লেইগ্যা লাইনে দাঁড়াই নাই’।

পাশ থেকেই একজন বললেন, ‘এইগুলা লেইখ্যা কিছু হইবো না। সরকারি অফিস। যেমনে চলতাছে, তেমনেই চলবো’।

আবুল কাশেমের সঙ্গে আলাপের সময় একজনকে দেখা গেলো ভেতরে নগদ কিছু গুঁজে দিয়ে পেনশনের রিসিটের বই বারান্দায় এনে কাজ সারছেন। একই পন্থায় আরো কয়েকজন দ্রুত কাজ শেষ করে অফিসের ওই পাশের বারান্দার বেঞ্চে গিয়ে বসলেন।
Mymensingh_Accounts_office
এসব বিষয়ে জেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. আজগর আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংশ্লিষ্ট অফিসের এসএএস সুপারিনটেনডেন্ট প্রদীপ কুমার চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

পরে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অফিস পিয়ন মজিবুর রহমানকে গিয়ে বলেন, ‘আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে কেন?’ উত্তরে মজিবুর বলেন, ‘আমি রেভিনিউ স্ট্যাম্প বিক্রি করে ১০ টাকা নিচ্ছি’।

অথচ মজিবুর রহমানের সামনের দেয়ালে এ-ফোর আকারের সাদা কাগজে কম্পিউটার কম্পোজে লেখা রয়েছে, ‘এখানে কোনো রেভিনিউ স্ট্যাম্প পাওয়া যায় না। ’

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৬
জেডএফ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।