ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পেশাদারিত্ব ও সময়ানুবর্তিতা শেখার এক আনন্দঘন দিন

রাইসুল ইসলাম, এডিশনাল আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৬
পেশাদারিত্ব ও সময়ানুবর্তিতা শেখার এক আনন্দঘন দিন ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) ভোর ৫টা ৫৫ মিনিট, গাড়ি ছাড়বে ৬টায়। আর আমার অবস্থান নির্ধারিত স্থান থেকে হাঁটাপথে ৭ মিনিটের দূরত্বে।

শীতের ভোর ৬টা মানে অন্ধকার। রিকশা নেই। আশেপাশে একদুটো সিএনজি অটোরিক্সা। নিশ্চিত ছিলাম সকাল ৬টা মানে ৬টাই। এডিটর ইন চিফের নির্দেশ। সামান্য ২ মিনিটের দেরির কারণেও গাড়ি থামবে না। সিদ্ধান্ত নিতে দেরি না করে ‘প্ল্যান বি’ বাস্তবায়নের জন্য সিএনজি অটোরিকশাই সাব্যস্ত করলাম।

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেট থেকে ছাড়া বাস মিস হলে সিএনজি নিয়ে বসুন্ধরা সিটির সামনে দ্বিতীয় বাস ধরাই ছিলো প্ল্যান বি। তবে ভাগ্য সুপ্রসন্ন। সিএনজি অটোরিক্সায় ওঠার কারণে পথেই প্রথম বাসটির দেখা পেলাম, আর উঠলাম তাতে।

বাংলানিউজের পিকনিক ছিলো এদিন। দিনটি ছিলো নিছকই আনন্দের। তবে পুরো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কিছু শিক্ষা, কিছু উপলব্ধি আর কিছু জ্ঞানলাভ হয়েছে সেগুলো তুলে ধরতেই এই লেখার অবতারণা। আর শুরুতেই নিজের কথা কারণ, সময়ানুবর্তিতার এই দারুণ নিয়মটিই ছিলো আমার ও আমাদের সবার বড় শিক্ষা।
 
পরে জানা গেল, মাত্র এক মিনিট দেরি করার কারণে বাস ধরতে পারেননি চিফ অব করেসপন্ডেন্টস সেরাজুল ইসলাম সিরাজ। তাকেও বিকল্প পথে কতকটা পথ মোটরসাইকেল ছুটে পিকনিকের বাস ধরতে হয়েছে।

পিকনিকের তিনটি বাসের একটি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রধান গেট থেকে ছাড়ে সকাল ৬টায় আর অন্য দুটি ছিলো বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সের সামনে। সেখান থেকে ঠিক সকাল সাড়ে ছয়টায় ছেড়ে যায় তিনটি বাস।

পরে কারোই বুঝতে বাকি ছিলো না একটি আনন্দঘন পিকনিক আয়োজন উপভোগ করতে পারা ও নির্বিঘ্নে সবাই ঢাকায় ফিরে আসতে পারার পেছনে ওই সময়ানুবর্তিতার বিষয়টিই ছিলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যা মাননীয় এডিটর ইন চিফ আগেই উপলব্ধি করেছিলেন আর সে অনুযায়ী সকল কর্মী যে যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
 
নিউজ ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে এমনকি পিকনিক পর্যন্ত, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে ‘পজিটিভ প্রফেশনালিজম’এর চূড়ান্ত ও সার্থক প্রয়োগ দেখি তার মাঝে।
 
আর এর মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানের ‘অরগাইনাজেশনাল অ্যাটিচ্যুড’ বিনির্মাণের মূল কারিগর একজনই তিনি হলেন, বাংলানিউজের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন।
 
অর্কেস্ট্রোর মাস্টার যেমন কনসার্টের মধ্যমণি হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে  সমন্বয় করেন পুরো সঙ্গীতের, তেমনি এডিটর ইন চিফও প্রতিটি আয়োজনের মধ্যমণি হয়ে দাঁড়িয়ে সমন্বয় করেন প্রত্যেকটি খুটিনাটি বিষয়। তা সে পিকনিকই হোক কিংবা নিউজ অপারেশন।
 
মঙ্গলবারের পিকনিকের আয়োজনটিও তেমনই এক সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অনন্য উদাহরণ।
 
বাংলানিউজের পিকনিকের ‍বাস কাঁটায় কাঁটায় যথাসময়ে ছাড়ার সুফল পরবর্তীতে পেলাম আমরা সবাই। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুরের কুখ্যাত জ্যাম এড়াতে পারলাম বেঁধে যাওয়ার আগেই। পিকনিক স্পটেও পৌঁছুলাম সময়মতই। খাওয়া দাওয়া, খেলাধূলা, গানবাজনাসহ প্রত্যেকটি আয়োজনও সম্পন্ন হলো সুচারুভাবে।
 
পিকনিক শেষে পরিবার নিয়ে রাত নয়টার মধ্যে রাজধানীতে যার যার ঘরে ফেরাও হলো সময়মতোই।
 
এছাড়া পিকনিক স্পটেও জেনারেটর চালিয়ে, ল্যাপটপের মাধ্যমে মিনি নিউজরুম বানিয়ে প্রতি মুহূর্তের আপডেট দেয়া। (সেদিন বাংলানিউজের নিউজরুম ছিলো ফাঁকা, সবাই ছিলেন পিকনিকে) সব কিছুতেই ছিলো পরিকল্পিত দক্ষতার ছাপ।
 
সব মিলিয়ে একটি সার্থক আয়োজন। আর এর মূলে ছিলো ম্যানেজমেন্ট প্রফেশনালিজম। আর এই ম্যানেজমেন্ট প্রফেশনালিজমের সার্থক প্রয়োগ ঘটিয়েই বিন্দু থেকে বাংলানিউজকে বিশাল বৃত্তে পরিণত করেছেন এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন।
 
কোথায় যেন পড়েছিলাম ‘গ্রেট লিডারস ডোন্ট টেল ইউ হোয়াট টু ডু, দে শো ইউ হাউ ইটস ডান’। এই উদ্ধৃতির সার্থক প্রয়োগটাই যেন দেখা যায় এডিটর ইন চিফের মাঝে।
 
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হরতাল, অবরোধ, চারিদিকে জ্বালাও, পোঁড়াও। অফিসে সকাল সাতটায় পৌঁছে দেখি নিচে দাঁড়িয়ে এডিটর ইন চিফের গাড়ি। তিনি পৌঁছেছেন আমাদের আগেই। একদিনের উদাহরণ নয়, এটা ঘটে নিত্যদিনই।
 
ঠিক তেমনিই পিকনিক স্পট ‘নীলাচল’ টিলায় স্থাপিত অস্থায়ী নিউজরুম ‘ঢেঁকিঘরে’ অন্যান্য সহকর্মীদের সঙ্গে বসে যখন কাজে মগ্ন। পেছন ফিরে দেখি দাঁড়িয়ে আমাদের কাজ দেখছেন, এডিটর ইন চিফ।
 
দুপুরের রান্নার আয়োজনের জায়গায় প্লেটে খাবার নিতে গিয়ে দেখি, সেখানেও এডিটর ইন চিফ। নজর রাখছেন সবাই যেন সবকিছু ঠিকঠাক পায়।
 
দুপুরে ঢেঁকিঘরে বসেই খাচ্ছিলাম। খাওয়া প্রায় শেষ, এমন সময় এডিটর ইন চিফের ডাক, বললেন ‘খাওয়া ঠিকমতো হয়েছে তো, যাও আরও মাংস নাও’।
 
ঢেঁকিঘর থেকে মাঝে মাঝে ঘাড় ফিরিয়ে দেখছি, পিঠে খাওয়ার অায়োজন, শিশু ও বড়দের খেলাধুলা, এমনকি গাছে ওঠা প্রতিযোগিতাতেও  প্রত্যেকটি আয়োজনেই নিজে দাঁড়িয়ে থেকে নজর রাখছেন তিনি।
 
এছাড়া পিকনিক স্পটের পরিবেশ নষ্ট না করতে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা না ফেলতে, এমনকি বার্ডের শালবনের শুকনা পাতাতেও যেন কারও অসাবধানতায় আগুন না ধরে, সে ব্যাপারেও ছিলো তার তীক্ষ্ম দৃষ্টি।
 
এভাবেই নিজে উদাহরণ সৃষ্টির মাধ্যমে প্রত্যেকটি কর্মীকে অনুপ্রাণিত করেন এডিটর ইন চিফ। এর মধ্য দিয়েই বাংলানিউজের কর্মীদের মাঝে গড়ে উঠেছে অসাধারণ টিম স্পিরিট।
 
স্পিরিটটা যেন এমনই-‘যদি বিষয়বস্তু হয় নিউজ, তবে বাংলানিউজের কর্মীদের কাছে অসাধ্য নয় কিছুই’।
 
এই টিম স্পিরিটের ব্যাপারেও কিছু কথা না বললেই নয়। একদিনে ৬০৮টি ফুল নিউজ আপলোড করা, কিংবা সারাদিনে একজন নিউজরুম কর্মীরই ৫৭টি নিউজ সাব এডিটিং করা, এসব কীর্তি অন্য কোনো মিডিয়া হাউজ কিংবা অনলাইন পত্রিকায় সম্ভব কি না জানি না, তবে বাংলানিউজে সম্ভব হয়। (নজির এবারের পৌর নির্বাচনের দিন)।
 
বাংলানিউজের একজন জুনিয়র নিউজরুম এডিটরও ইন্টারন্যাশনাল থেকে শুরু করে কান্ট্রি, বিনোদন থেকে শুরু খেলাধুলা যে কোনো টপিকসেই নিউজমেকিংয়ে পারদর্শী। তেমনিই রিপোর্টাররাও যে কোনো অ্যাসাইনমেন্ট তা সে যে বিটেরই হোক না কেন, সর্বাধিক দ্রুততায় তা কাভার করতে পারদর্শী।
 
ফলে গড় বয়স হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে জুনিয়র নিউজরুম এবং রিপোর্টিং টিম নিয়ে দেশের সাংবাদিকতার জগতে নজির সৃষ্টি করতে খুব একটি বেগ পেতে হয়নি বাংলানিউজকে, তা এই টিম স্পিরিটের কারণেই।
 
এর নেপথ্য কারিগর অবশ্যই বাংলানিউজের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন। তাকে যোগ্য সহচার্য দিচ্ছেন হেড অব নিউজ অপারেশনস মাহমুদ মেনন খান, কনসালট্যান্ট এডিটর জুয়েল মাজহার, আউটপুট এডিটর (বাংলা) জাকারিয়া মন্ডল ও অশোকেশ রায়, আউটপুট এডিটর (ইংলিশ) সালাহউদ্দিন আহমেদ, চিফ অব করেসপন্ডেন্টস সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, চিফ অব ফটো করেসপন্ডেন্টস কাশেম হারুন এবং ওয়েব ইনচার্জ অমিয় দত্ত ভৌমিক।
 
বাংলানিউজের আমরা যারা কর্মী তারা সবাই জানি, এডিটর ইন চিফকে সন্তুষ্ট করা একমাত্র কাজ দিয়েই সম্ভব। এই অর্গানাইজেশনে মূল্যায়নের একমাত্র মাপকাঠি, প্রথমত কাজ, দ্বিতীয়ত কাজ এবং তৃতীয়ত কাজ।
 
বাংলানিউজে কাজের মাধ্যমেই কর্মীরা শেখে, নি‍উজরুম ম্যানার, অরগাইনাজেশনাল বেহেভ্যিয়ার, সিনিয়রদের শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং জুনিয়রদের প্রতি স্নেহ প্রদর্শনের শিক্ষা। নিউজরুমে কাজ করার মধ্য দিয়েই বাংলানিউজের একজন কর্মী হয়ে ওঠে নিউজের এক একজন পোক্ত পাকা খেলোয়াড় হিসেবে।
  
এ রকম একটি অসাধারণ পারিবারিক মিলনমেলা আয়োজনের জন্য মাননীয় এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেনকে জানাই সশ্রদ্ধ ধন্যবাদ।

পাশাপাশি মিলন মেলা সার্থক করতে এই আয়োজনের ব্যবস্থাপনার সাথে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন সেই- সুলতানা জাহান (ম্যানেজার অ্যাডমিন এইচ আর), সেরাজুল ইসলাম সিরাজ (চিফ অব করেসপন্ডেন্টস), এরশাদুল আলম প্রিন্স (ল এডিটর), মুফতি এনায়েতুল্লাহ ( বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম পাতা), হ্যাপি রাংসা (এক্সিকিউটিভ, নিউজ রেফারেন্স), ডিএইচ বাদল (ডেপুটি চিফ অব ফটো করেসপন্ডেন্ট), আজাদ ভাই ( কালাম আজাদ বেগ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর), শামীম হোসেন মজুমদার (সিনিয়র নিউজরুম এডিটর), ইসমাইল হোসেন (সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট), মফিজুল সাদিক (সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট), উর্মি মাহবুব (সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট), মুশফিক পিয়াল (নিউজরুম এডিটর), সাজ্জাদ হোসেন (স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট), ফররুখ ‍বাবু (স্টাফ করেসপন্ডেন্ট), শেখ জাহাঙ্গীর আলম (স্টাফ করেসপন্ডেন্ট), প্রণব চৌধুরী (ওয়েব এডিটর), রাধু মনি দে (নিউজরুম এডিটর, আইভিআর) তাদের প্রত্যেকের প্রতি ‘থ্যাংকস’।

সবশেষে অন্তরের অন্তস্থল থেকে ‘থ্যাংকস’ আসিফ আজিজ (অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর), হুসাইন আজাদ (সিনিয়র নিউজরুম এডিটর), মাহবুব আলম (সিনিয়র নিউজরুম এডিটর) সৈয়দ ইফতেখার আলমকে (নিউজরুম এডিটর)।
 
মূলত মঙ্গলবার সকালে বার্ডে গিয়ে বাংলানিউজের পিকনিক যাত্রীরা সবকিছু হাতের কাছে রেডি অবস্থায় পেয়েছিলো, তার মূল কৃতিত্ব এই চার জনের দলের।
 
কুমিল্লায় বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ইমতিয়াজ আহমেদ জিতু’র সর্বাত্মক সহযোগিতায় তারা আগের দিন থেকেই বার্ডে অবস্থান নিয়ে সবকিছু প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। যেন পিকনিক যাত্রীরা কোনো অসুবিধায় না পড়েন।

সব মিলিয়ে বাংলানিউজ পরিবারের সব কর্মীকে ধন্যবাদ জানিয়ে লেখাটি উৎসর্গ করছি আমাদের প্রয়াত নিউজরুম এডিটর মাহমুদুল ইসলাম রনিকে, বাংলানিউজে কর্মরত অবস্থায় যিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন অনেক দূরে, না ফেরার দেশে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০১২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৬
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।