ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে রচিত উন্নয়নের ক্যানভাস (অডিও)

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৬
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে রচিত উন্নয়নের ক্যানভাস (অডিও) মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) জাতির উদ্দ্যেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিএমও

ঢাকা: স্বপ্ন জাগানিয়া এক ভাষণে জাতির উদ্দেশ্যে উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতি জানলো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতির বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থানের কথা, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষকারীদের প্রতি তার নিন্দা, রাজনৈতিক সহনশীলতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলার কৌশলের কথা, দেশের অব্যাহত উন্নয়নের কথা, আর সেই উন্নয়নের সোপান ধরে ২০২১ সালে পূর্ণ মধ্য আয়ের দেশ আর ২০৪১ সালে একটি উন্নত বাংলাদেশ নিশ্চিত করা হবে তারই অঙ্গীকার।



পুরো ভাষণের মধ্য দিয়ে ২০১৪ থেকে ’৪১ পর্যন্ত উন্নয়নের ক্যানভাস রচিত হলো। টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠনের দুই বছরের পূর্তিতে ১২ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) জাতির উদ্দ্যেশে দেওয়া ভাষণে এসব বক্তব্য তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বিএনপি-জামাত জোট সারাদেশে যে ঘৃণ্য ও পৈশাচিক সন্ত্রাস চালায় তার ভয়াবহতার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বললেন, এই নৃশংসতা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হায়েনা ও তাদের দোসরদের নির্মমতার সাথেই কেবল তুলনা করা চলে।

এমনই এক ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ পরিস্থিতিতেই দেশকে নতুন করে এগিয়ে নেওয়ার শপথ নেন শেখ হাসিনা। সেই দিনগুলোর কথা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি-জামাত জোটের সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ ও পেট্রোল বোমার শিকার হয়ে নিরীহ বাসড্রাইভার, বাস-টেম্পো-সিএনজি যাত্রী, প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিশ-বিজিবি-আনসার, সেনাবাহিনীর সদস্য, এমনকি স্কুলের শিক্ষক ও শিশুও নিহত হয়েছে। অনেকে আগুনে দগ্ধ হয়েছেন, জীবনের তরে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছেন।

দেশবাসির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সন্ত্রাস বোমাবাজি উপেক্ষা করে সেদিন আপনারা গণতন্ত্রকে বিজয়ী করেছিলেন। আর সে কারণেই দেশগড়ার সুযোগ তৈরি হয়।   জনগণকে দেওয়া ওয়াদা পূরণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে তার সরকার।

শেখ হাসিনা বলেন, সারাবিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোলমডেল, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুশাসন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ডিজিটাইজেশন, এমডিজির লক্ষ্যসমূহ অর্জন, জলবায়ুর প্রতিকূল প্রভাব মোকাবেলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি ও পুরস্কারে ভূষিত করছে।

প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, এই উন্নয়ন সহ্য হয়নি বিএনপি-জামায়াতের । আর সে কারণেই ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি তারা  আবারও দেশে সন্ত্রাস, সহিংসতা শুরু করে। সারাদেশে তাণ্ডব ও হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। পেট্রোলবোমায় ২৩১ জন নিরীহ মানুষ নিহত এবং ১ হাজার ১৮০ জন আহত হয়। ২ হাজার ৯০৩ টি গাড়ি, ১৮টি রেল গাড়ি ও ৮টি লঞ্চে আগুন দেয়।

পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করে ৭০টি সরকারি অফিস ও স্থাপনা ভাঙচুর এবং ৬টি ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়। জনগণকে ভোগান্তিতে রেখে, অমানবিক কষ্ট দিয়ে তাদের জীবন বিপন্ন করে বিএনপি নেত্রী নাটক করে ৬৮ জনকে নিয়ে আরাম আয়েশে ৯২ দিন অফিসে থাকেন। হত্যাযজ্ঞ ও তাণ্ডবের হুকুম দেন।

তাদের সেই সন্ত্রাসের উদ্দেশ্য ছিলো যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা এবং বিএনপি নেত্রী আদালত হাজিরায় অনুপস্থিত থাকা। কিন্তু সেই সন্ত্রাসী কর্মকা- জনসমর্থন পায়নি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অগ্নি-সন্ত্রাসীদের আটক করে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের বিচার কাজ চলছে। যারা আপনাদের আপনজনকে কেড়ে নিয়েছে, জানমালের ক্ষতিসাধন করেছে সেই অপরাধীরা অবশ্যই শাস্তি পাবেই।

দেশের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরতে একটু পেছনে ফিরে যান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন ছিল বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, চরম খাদ্যাভাব। বিএনপি-জামাতের দুঃশাসন. দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং পরের দুই বছরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দমননীতির ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল বিপর্যস্ত, বিশৃঙ্খলাপূর্ণ। কিন্তু তার সরকার দায়িত্বভার গ্রহণ করে সবক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনি। মানুষের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস ফিরে আসে।
 
সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শেষ হয়েছে। এখন শুরু হয়েছে ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা।
বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল, বলেন শেখ হাসিনা।

দেশের অর্থনীতি এখন জিডিপি’র ভিত্তিতে বিশ্বে ৪৫তম এবং ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে ৩৩তম, মাতৃসূচকে ১৩০তম, বিশ্বশান্তি প্রতিবেদনে ৮৪তম আর ইকোনমিস্ট- সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৫তম, এই ভাষণের মধ্য দিয়ে জাতিকে আরেকবার স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতিসংঘ মহাসচিব বান-কি মুনের উদ্ধৃতি তুলে ধরেন যাতে তিনি  বলেছেন: ‘দুর্যোগ প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে’।

বিশ্বের খুব কম দেশই একটানা এত দীর্ঘ সময় ধরে ৬ শতাংশের উপর প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে সে কথা গর্বের সঙ্গে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন অচিরেই প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।

দেশ যে এরই মধ্যে মধ্য আয়ের স্তরে সে কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে জানিয়ে দেন, চলতি ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা, মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৩১৪ মার্কিন ডলার। ৫ কোটি মানুষ নিম্ন-আয়ের স্তর থেকে মধ্যম আয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ৪১.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২.৪ শতাংশে নেমে এসেছে। আর অতি দারিদ্রের হার নেমে এসেছে  ৭.৯ শতাংশে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মানুষের আয় ও কর্মসংস্থান বেড়েছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে দেড় কোটি মানুষের চাকুরি দেওয়া হয়েছে। তার সরকারের সময়ে ৩৫ লাখ ৭৫ হাজার ৩৪৮ জন কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। আর তারই বদৌলতে ২০০৬ সালের যে রেমিট্যান্স আয় ছিল মাত্র ৪.৮০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ১৫.২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩.৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। রপ্তানি আয় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এসে দাঁড়িয়েছে ৩২.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১৪ হাজার ৭৭ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ১০০ অতিক্রম করেছে। দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। রাশিয়ার সহায়তায় ১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ৪০০ মেঘাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প - রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র - স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।

২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাবে বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।
 
তুলে ধরেন গ্যাসের খতিয়ানও। বলেন, ২০০৬ সালে গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন ছিল মাত্র ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ২০১৫ সালে গ্যাস উৎপাদন গড়ে দৈনিক ২ হাজার ৭২৮ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে।

জাতিকে জানিয়ে দেন, সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। যার মধ্যে ১৬টির কাজ চলছে।

প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নিজস্ব অর্থায়নে দেশের ইতিহাসের বৃহত্তম নির্মাণ প্রকল্প পদ্মাসেতুর কাজ চলছে। ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে, ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর। পাশাপাশি যোগাযোগ খাতে উন্নয়নে ঢাকায় হাতিরঝিল প্রকল্প, কুড়িল-বিশ্বরোড বহুমুখী উড়াল সেতু, মিরপুর-বিমানবন্দর জিল্লুর রহমান উড়াল সেতু, বনানী ওভারপাস, মেয়র হানিফ উড়াল সেতু, টঙ্গীতে আহসানউল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু এবং চট্টগ্রামে বহদ্দারহাট উড়াল সেতু উদ্বোধনের কথা তুলে ধরেন। জানিয়ে দেন, মগবাজার-মালিবাগ উড়ালসেতুর নির্মাণ কাজ অচিরেই শেষ হবে। ঢাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলছে। নবীনগর-ডিইপিজেড-চন্দ্রা সড়ক এবং ঢাকা-চট্রগ্রাম এবং জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়ক ৪-লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ,  চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, নারায়ণগঞ্জের ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতুর নির্মাণের উদ্যোগের কথাও জাতিকে জানান প্রধানমন্ত্রী।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে নতুন স্বপ্ন দেখা প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মাওয়া, শিবচর ও জাজিরাকে ঘিরে আধুনিক স্যাটেলাইট শহর গড়ে তোলা হবে। যার মধ্য দিয়ে মাদারিপুর, শরীয়তপুর ও কেরানিগঞ্জ জেগে উঠবে নতুন উদ্যমে।

দেশবাসিকে সচেতন বলেই মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তাদের সে নামেই সম্বোধন করে বলেন, তার সরকারের আমলে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৪ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য-শস্য উৎপাদন হয়েছে। মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত।

আমরা এখন চাল রপ্তানি শুরু করেছি, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশের বর্তমানে শিক্ষার হার ৭১ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকার গত ৭ বছরে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে ১৯২ কোটি বই বিতরণ করেছে। এবছরই ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ ৬২ হাজার ৭২২ টি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। প্রাথমিক থেকে ডিগ্রী পর্যন্ত ১ কোটি ২১ লাখ ৭৮ হাজার ১২৯ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি ও উপ-বৃত্তি আওতায় আনা হয়েছে। ২৬ হাজার ১৯৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ এবং ১ লাখ ২০ হাজার শিক্ষকের চাকুরি সরকারি করা হয়েছে। সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩ হাজার ১৭২ টি কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।

প্রতিটি জেলায় একটি করে সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে, ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর।   নতুন ১১ টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ চালু করা হয়েছে।

আর স্বাস্থ্যসেবা এখন মানুষের দোরগোড়ায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাড়ে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে গ্রামের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। মানুষ বিনামূল্যে ৩২ পদের ঔষধ পাচ্ছেন। সাড়ে ১২ হাজারের বেশি ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ১৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ পেয়েছে। আরও ১০ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হবে। দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭১ বছরের বেশী।   শিশু ও মাতৃ-মৃত্যুর হার  কমেছে।

সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী। ৫ হাজার ২৭৫ টি ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ২০০ ধরণের ডিজিটাল সেবা দেওয়া হচ্ছে। মোবাইল সীম গ্রাহকের সংখ্যা ১৩ কোটির বেশি। ইন্টারনেট গ্রাহক ৫ কোটি ৭ লাখ ৭ হাজারের বেশি। আশা করা হচ্ছে ২০১৬ সালেই মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপন করা হবে।

গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর এবং যশোরে হাই-টেক পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। বিভাগীয় শহরে সিলিকন সিটি স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ওয়াই-ফাই-এর মাধ্যমে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া শুরু হয়েছে, জানান প্রধানমন্ত্রী।

২৫ হাজার ওয়েবসাইট নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েব পোর্টাল “তথ্য বাতায়ন” বাংলাদেশের যা যা আর্ন্তজাতিকভাবে পুুরস্কৃত হয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহারে এখন ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। থ্রীজি সেবা চালু করা হয়েছে। এবছরই ফোর জি চালু করা হবে, জানান প্রধানমন্ত্রী।

নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা বাস্তবায়ন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ আইন, মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাসে বৃদ্ধি করা, স্থানীয় সরকারে নারীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা এসবের মধ্য দিয়েই  বাংলাদেশ এবারও লিঙ্গ সমতায় দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পদে নারীর অবস্থানের দিক থেকে বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

গণকর্মচারীদের অবসর গ্রহণের বয়স ৫৯ বছর এবং মুক্তিযোদ্ধা কর্মচারিদের ৬০ বছর করা হয়েছে। সামরিক-অসামরিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন ১২৩ ভাগ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। পদমর্যাদা বৃদ্ধি ও  ব্যাপক পদোন্নতির সুযোগ করে হয়েছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকা করা হয়েছে।

জাতির পিতা প্রণীত ১৯৭৪ সালের প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে আর্মড ফোর্সেস গোল- ২০৩০ নির্ধারণ করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীকে অত্যাধুনিক যুদ্ধসরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও সশস্ত্রবাহিনীর ঝুঁকিভাতা দেওয়া হচ্ছে। ৮ হাজার ৫০৭ টি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে।

প্রায় ৪৭ লাখ ১৩ হাজার মানুষ বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ও প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। এজন্য বছরে প্রায় ২১০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। সরকার হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দিয়েছে। হিজড়া, বেদে, হরিজন, দলিতসহ অনগ্রসর জনগোষ্ঠির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।   চা শ্রমিকদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থানসহ বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।

জাতীয় সংসদকে সকল কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বিরোধীদল বিভিন্ন বিষয়ে তাদের অভিমত দিচ্ছে, আলোচনায় অংশ নিচ্ছে। দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে। কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশের মিডিয়া এখন সম্পূূর্ণ স্বাধীন। গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে সরকারের সমালোচনা করতে পারছে।

সরকার নতুন বেসরকারি ৩২টি টেলিভিশন, ২২টি এফএম রেডিও এবং ৩২টি কমিউনিটি রেডিও চ্যানেলের অনুমোদন দিয়েছে।   জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালাসহ তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সাংবাদিকদের সহায়তায় এ পর্যন্ত ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে, বক্তব্যে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে সাফল্যগাঁথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,  বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথমবারের মত বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়েকে পরাজিত করেছে বাংলাদেশ। আমাদের মেয়েরা এএফসি অনুর্ধ্ব-১৪ ফুটবলে আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। জাতীয় নারী ক্রিকেট দল জায়গা করে নিয়েছে আগামী বছরের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে।

আমরা এমডিজি ১ থেকে ৬ অর্জন করেছি। বাংলাদেশ এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড এবং ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি’ পুরস্কার পেয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করায় জাতিসংঘ আমাকে পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে।

এমডিজির মত জাতিসংঘ গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ, ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা শান্তি এবং সহ-অবস্থানে বিশ্বাসী। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল বৈশিষ্ট “সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়”।   এই মূলনীতির উপর ভিত্তি করে প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্ক এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন পথ রচনায় সক্ষম হয়েছি। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে  শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশ এখন একটি ‘ব্র্যান্ড নেম’। এটি আমাদের জন্য গৌরবের।

শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘ ৪৪ বছর পর ২০১৫ সালে ভারতের পার্লামেন্টে স্থলসীমানা চুক্তি অনুমোদিত হয়। ফলে ৫২ হাজার ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের মানবেতর জীবনের অবসান হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে আমরা ভারতের সাথে স্থলসীমানা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। ছিটমহল বিনিময়ে ১০ হাজার ৫০ একর জমি বাংলাদেশের ভূখ-ে যোগ হয়েছে।

সমুদ্রে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকায় দেশের নিরঙ্কুশ অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এরফলে বিশাল সমুদ্র এলাকায় সমুদ্রসম্পদ আহরণের পথ সুগম হয়েছে। যা জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, হাজার বছর ধরে সব ধমের্র মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে সবাই নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে কাউকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে দেওয়া হবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিপথগামীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর হব। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তির আসল উদ্দেশ্য হল জঙ্গিবাদ উস্কে দেওয়া, যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারী, রাজাকার-আলবদরদের রক্ষা করা।

আমাদের ওয়াদা ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি, রায় কার্যকর করা হচ্ছে, কেউই বিচার বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না, জনগণ তাদের প্রতাখ্যান করেছে এই ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, একটি দলের নেত্রী ও তার নেতারা মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দানকারী ৩০ লাখ শহীদের প্রতি কটাক্ষ করেছে, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অপমান করেছে। আমি এই ঘৃণ্য বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

যারা দেশের ইতিহাসকে বিকৃত করবে তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটাক্ষ সহ্য করা হবে না ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর প্রতি এদের বিরুদ্ধে ঐকমত্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা আপনাদের পাশে আছি। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ২০০৮ সালে বলেছিলাম, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করব। আমরা নি¤œ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। ইনশাআল্লাহ ২০২১ সালের আগেই আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হব।

তিনি বলেন, গ্যালোপের হোপ ইনডেক্সে এসেছে, সুইজারল্যান্ডের পরেই বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে আশাবাদী মানুষের দেশ। আশাবাদী এবং আত্মবিশ্বাসী দেশবাসীকে সাথে নিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশে পরিণত করব, ইনশাআল্লাহ। আমি আপনাদের সর্বাতœক সহযোগিতা চাই।

আমাদের লক্ষ্য দেশের মানুষের জন্য কাজ করা, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করা।
 
শেখ হাসিনা বলেনম আওয়ামী লীগ দেশকে স্বাধীনতা দিয়েছে। গণতন্ত্র দিয়েছে। যখনই সরকার গঠন করেছে দেশের উন্নয়ন করেছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের এক ঐতিহাসিক দিকসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। আসুন, দল-মত ও বিভক্তির উর্ধ্বে উঠে এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখি। দেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করি।

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি আমরা। কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না, বলেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর পূর্ণাঙ্গ ভাষণ পড়তে এখনে ক্লিক করুন

বাংলাদেশ সময় ২১০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৬
এমএমকে/

** মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ সহ্য করা হবে না
** ডিজিটালে ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ
** সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা চাই
** বিপথগামীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
** আওয়ামী লীগের সময় মিডিয়া সম্পূর্ণ স্বাধীন
** ২০১৮ সালে পদ্মাসেতু দিয়ে যান চলাচল
** খালেদার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড জনসমর্থন পায়নি
** ‘বিএনপি জামায়াতের তাণ্ডবের তুলনা চলে ৭১’র সঙ্গে’
** সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।