ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

তালগাছ এক পায়ে ‘যন্ত্রণায়’ দাঁড়িয়ে!

সাজ্জাদুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৬
তালগাছ এক পায়ে ‘যন্ত্রণায়’ দাঁড়িয়ে! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লক্ষ্মীপুর: তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে/সব গাছ ছাড়িয়ে/উঁকি মারে আকাশে/মনে সাধ, কালো মেঘ ফুঁড়ে যায়/একেবারে উড়ে যায়/কোথা পাবে পাখা সে।

রবি ঠাকুরের ‘সেই’ তালগাছ-আর ছবির তালগাছ এক নয়।

এ তালগাছের মনে সাধ নেই। অন্তর পুড়ে যায়। উড়তে চায় না; মুক্তি চায়।

তালগাছের সারা দেহে পেরেকের ক্ষত। গাছের যন্ত্রণা-চিৎকার মানব কানে পৌঁছায়না বলেই এ যন্ত্রণা কেউ বুঝতে পারে না। ফেস্টুনে-ফেস্টুনে যখন একটা গাছ ঢেকে যায় তখন দূর থেকে দেখে ফেস্টুন বৃক্ষই মনে হতে পারে!

ফেস্টুন-পেরেক ‘যন্ত্রণার’ শিকার এমন কয়েকটি তালগাছের দেখা মিলেছে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ের সামনে। গাছে লাগোনো ফেস্টুনগুলো দেখলে বোঝা যায় আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আগাম প্রচারণা ও নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা-অভিনন্দনের বলি হচ্ছে এসব তালগাছ।

তালগাছের কোনো অংশ বাকী নেই। নিচ থেকে ওপর পর্যন্ত সারাদেহ পেরেক ঢুকেছে। ফেস্টুনে বন্দী হয়ে গেছে সারা শরীর। তবুও নিস্তার নেই। আরও যন্ত্রণা দিতে ফাঁক খুঁজছে প্রচারপ্রিয় মানুষ!

ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও মেম্বর পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে স্থানীয় নেতাকর্মীরা তালগাছের এ হাল করেছে। এছাড়া অনেকের শুভেচ্ছা-অভিনন্দনের ফেস্টুনও দেখা গেছে ওইসব তালগাছে। রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে সামনে থাকায় তালগাছের এখন এ বেহাল দশা। পাশে থাকা নারকেল-সুপারি গাছও রেহাই পায়নি পেরেক ও ফেস্টুনের নির্মমতা থেকে।

২০১৪ সালে ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগ নেতারা হাজিরহাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমনে একটি ভবন দলীয় কার্যালয়ের জন্য ভাড়া নেয়। ওই কার্যালয়ের সামনে ও পাশে ৮টি তালগাছ, ২টি নারকেল ও ২টি সুপারি গাছ রয়েছে। ওই অফিস থেকে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা হওয়ার পর থেকে গাছগুলোর গায়ে (দেহে) পেরেক ঢুকতে শুরু হয়। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

তাল গাছের অপর পাশে হাজিরহাট সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের শিশুদের পড়ানো হয়- ঐ দেখা যায় তালগাছ/ ঐ আমারদের গাঁ/ ওই খানেতে বাস করে কানা বগীর ছা...।

অবুঝ শিশু শিক্ষার্থীরা তালগাছে কানা বগীর ছা খুঁজে; তবে পায় না। তাল গাছের দিকে তাকালেই শিশুদের চোখে পড়ে বিভিন্ন রংচঙ্গা মানবদেহের রঙ্গিন ছবি। শিশুদের কাছে ফেস্টুনের ছবিগুলোই হয়তো কানা বগীর ছা!

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট নোয়াখালী অঞ্চলের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মহিউদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, মানুষের মতো গাছেরও অনুভূতি আছে। পেরেক মারলে গাছের কোষ নষ্ট হয়, সেন্সলেস হয়। গাছকে ফেস্টুন দিয়ে ঝাঁপিয়ে রাখলে গাছে আলো-বাতাস লাগে না। এতে গাছে বেড়ে ওঠা ও বেচে থাকাটা আশঙ্কার মধ্যে পড়ে। অক্সিজেন দিতে ও কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে বাধাগ্রস্ত হয়। সৌন্দর্য্য ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গাছে পেরেক লাগানোর কারণে এর গায়ে যে ছিদ্র হয় তা দিয়ে পানি ও এর সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও অণুজীব ঢোকে। এতে গাছের ওই জায়গায় পচন ধরে। ফলে তার খাদ্য ও পানি শোষণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। ফলশ্রুতিতে গাছটি মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৬
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।