ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘এমন পরিণতি যেন কারো না হয়’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৬
‘এমন পরিণতি যেন কারো না হয়’ মারিয়া / ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাজবাড়ী: যে বয়সে সঙ্গী-সাথীরা দল বেঁধে স্কুলে যেতো, সে বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় মারিয়াকে। বিয়ের পর থেকেই শুরু হয় যৌতুকলোভী স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতন।



নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়া মারিয়া এখন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পড়ে আছেন হাসপাতালে। পাষণ্ড স্বামী তার কোনো খোঁজ নেয়নি, উল্টো ৪ বছর বয়সী ছেলেকেও তার মায়ের কাছে ফিরতে বাধা দিয়েছেন।

শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) এমনটাই জানালেন রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের মহিলা সার্জারি বিভাগে ১৩ নম্বর বেডে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়া মারিয়া বেগম (২৬)।  

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারিয়া বলেন, তার মতো এমন পরিণতি যেন আর কারো না হয়। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিচার চেয়ে তিনি ‍বলেন, তার মতো এ অবস্থা যেন কোনো মেয়ের না হয়।

মারিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৬ বছর আগে মাত্র ১৬ বছর বয়সে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বেতেঙ্গা গ্রামের গফুর মোল্লার ছেলে নসিমন চালক রাসেল মোল্লার (২৬) সঙ্গে বিয়ে হয় একই উপজেলার চর ফরিদপুর গ্রামের হতদরিদ্র আজাহার জোয়াদ্দারের মেয়ে মারিয়ার। বিয়েতে তার বাবা ২০ হাজার টাকা, কানের দুল ও স্বর্ণের চেইন যৌতুক হিসেবে দেন। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন না যেতেই স্বামী ও শাশুড়ি আরো যৌতুক চেয়ে মারিয়াকে মারধর ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। কিন্তু গবির বাবা টাকা দিতে না পারায় চলতে থাকে মারিয়ার ওপর নির্যাতন।

সর্বশেষ গত ২৬ সেপ্টেম্বর মারিয়াকে মারধর করে ও শিশুসন্তান রাজুকে রেখে বাড়ি থেকে তাকে তাড়িয়ে দেয় শ্বশুরবাড়ির লোকজন। নিরুপায় হয়ে অসুস্থ অবস্থায় মারিয়া তার হতদরিদ্র বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন। দিন-দিন অসুস্থতা বাড়তে থাকলে গত ৫ জানুয়ারি রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি হয় মারিয়া। কিন্তু বেডে জায়গা না পেয়ে তার স্থান হয় হাসপাতালের ফ্লোরে।

হাসপাতালের ফ্লোরে অনেকটা অবহেলায় পড়ে থাকার তিনদিন পর স্থানীয় রক্তদাতাদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অধিকার’ তার পাশে এসে দাঁড়ায়। তারা সদস্যরা মারিয়ার পাশে দাঁড়ায়। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শ অধিকারের সদস্যরা ফরিদপুর থেকে মারিয়ার কয়েকটি টেস্ট করিয়ে আনেন। এতে ধরা পড়ে তার ব্লাড ক্যান্সার।

অধিকারের সদস্য আশরাফুর রহমান সোহান জানান, তারা ওষুধ থেকে শুরু করে মারিয়ার রক্ত দেওয়া সব কাজ করছেন। মৃত্যুপথযাত্রী মারিয়ার স্বামী ও তার ওপর নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. এস এম এ হান্নান জানান, মারিয়া দুরারোগ্য ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। রাজবাড়ীতে তার চিকিৎসা সম্ভব নয়, তাকে দ্রুত ঢাকায় ক্যান্সার হাসপাতালে নিতে হবে।

বালিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, মারিয়ার স্বামী রাসেল মোল্লা, শ্বশুর আব্দুল গফুর ও শ্বাশুড়ি সাফিয়া বেগমকে আসামি করে নারী নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে। গত ১৩ জানুয়ারি তার স্বামী ও শ্বশুরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সময় মারিয়ার ছেলে রাজুকে উদ্ধার করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৬
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।