ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এক কিলোমিটার ‘ভয়ঙ্কর’

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৬
এক কিলোমিটার ‘ভয়ঙ্কর’ সাবিহা আক্তার সোনালী ও খাদিজা সুলতানা মিতু

ঢাকা: সাপ্তাহিক ছুটির পুরো দিন, কিংবা অন্য যে কোনো দিন সকাল আর বিকেল- পথচারীর জন্য ভয়ঙ্কর রাজধানীর মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ মোড়। এই এক কিলোমিটারের পথে বেপরোয়া বাসের গতিতে প্রায় সময়ই ঘটে দুর্ঘটনা, রাস্তা পারাপারে প্রাণ হারান অনেকে।


 
আট ঘণ্টার ব্যবধানে শনিবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে মৎস্য ভবন মোড় ও বিকেলে শাহবাগ মোড়ে বেপরোয়া গতির বাস কেড়ে নেয় দুই স্কুলছাত্রীর প্রাণ।
 
দুর্ঘটনার পর মৎস্য ভবন, হাইকার্ট ও রমনা পার্ক এলাকা এবং শাহবাগে প্রায় সময়ই থাকা মানুষজন বলেন, বেপরোয়া গতির সঙ্গে নগ্ন প্রতিযোগিতায় বাস চলাচলের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। মৎস্য ভবন এলাকায় একটি ফুটওভার ব্রিজ করারও দাবি করেছেন স্থানীয়রা।
 
প্রথমে ধাক্কা, পরেরটি যায় ওপর দিয়ে
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মৎস্য ভবন এলাকায় সাবিহা আক্তার সোনালী (১৫) নামে সেগুনবাগিচার রহিমা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী নিহত হন। এরপর ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বাংলানিউজকে জানান, বার কাউন্সিল সংলগ্ন রাস্তা পারাপারের সময় প্রেসক্লাব থেকে শাহবাগগামী ৮ নম্বর যাত্রীবাহী বাসটি স্কুলছাত্রীকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
 
মৎস্য ভবনের মোড়ে ফুটপাতে প্রতিদিনই চা-সিগারেট বিক্রি করেন ফালু মিয়া। সন্ধ্যায় তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে শুনি একটা বাস ধাক্কা দিয়েছে, আর একটা মাথার ওপর দিয়ে চলে যায়।
 
‘এই রাস্তায় বাস পাড়াপাড়ি করে; কে কার আগে যাবে। সকালে খুব জোরে ছাড়ে, বন্ধের দিন রাস্তা ফাঁকা থাকে, আরও জোরে চালায়, মাঝে মধ্যে এক্সিডেন্ট হয়’।
 
মৎস্য ভবনের কাছে গণপূর্ত অফিসের ফুটপাতের পাশে মোবাইল রিচার্জ পয়েন্টের এক ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে বলেন, এটি (মৎস্য ভবন-হাইকোর্টের সামনের সড়ক) খুব খারাপ রাস্তা। যখন তখন এক্সিডেন্ট হয়। কয়েক দিন আগেও দুর্ঘটনায় একজন মারা গেছেন।
 
মৎস্য ভবন অফিস, হাইকোর্ট, বার কাউন্সিল, গণপূর্ত বিভাগসহ আশেপাশের অফিসের জন্য সকালে কর্মজীবীরা মৎস্য ভবন মোড়ে নেমেই রাস্তা পার হন। কিন্তু ফুট ওভারব্রিজ বা আন্ডারপাস না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পারাপার হন তারা।

প্রতিযোগিতা করে বাস চলাচলে যে তার মৃত্যু হয় ফরেনসিক প্রতিবেদনেও তা বোঝা যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বাংলানিউজকে জানান, ওই ছাত্রীর মাথার ‍ওপর দিয়ে গাড়ির চাকা যাওয়ার কারণে মাথা থেঁতলে গিয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়েছে।
 
এই এলাকায় একটা ফুট ওভারব্রিজ বা আন্ডার পাস দিলে ভালো হবে বলে মনে করেন গণপূর্তের কর্মচারী জহির আলী।

বার কাউন্সিলের সামনে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দেখতে যান রমনা গণপূর্ত বিভাগের উপ-প্রকৌশলী অফিসের সামনের এক চায়ের দোকানদার। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘গিয়ে দেখি মাথার মগজ বের হয়ে গেছে, চাকা ওপর দিয়ে গেছে। বাসগুলা সাবধানে চলা উচিত’।

সরেজমিনে দেখা যায়, মৎস্য ভবন মোড়ে চার রাস্তার সংযোগ থাকলেও জেবরা ক্রসিং নেই।
 
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের উদ্যোক্তা ইলিয়াস কাঞ্চন বাংলানিউজকে বলেন, ওই মোড়ে আগে জেবরা ক্রসিং ছিল, সেটি থাকলে চালকরা সাবধানে চলতো।
 
পাশাপাশি মৎস্য ভবন মোড়ে আন্ডারপাস করা যেতে পারে বলে মনে করেন ইলিয়াস কাঞ্চন।
 
এছাড়া অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন এই অভিনেতা।
 
শিশুপার্ক ফুটপাতে হ-য-ব-র-ল
সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে শিশুপার্কে আসে রাজধানীর শিশুরা, অভিভাবক আর স্বজনদের ভিড়ে মুখর হয়ে ওঠে শাহবাগ এলাকা। শনিবার শিশুপার্কে এসে খাদিজা সুলতানা মিতুর (১২) মৃত্যু হয় বাসের ধাক্কায়।

বিকেল সোয়া ৪টার দিকে শাহবাগ মোড়ে দ্রুতগামী বাস ধাক্কা দিলে নিহত হন মনোহরগঞ্জের লক্ষ্মণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে জিপিএ-৫ পাওয়া মিতু।
 
মিতুর দুলাভাই ওমর ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, রাজধানীর শ্যামপুরের বাসা থেকে বিকেলে সপরিবারে শিশুপার্কে আসেন তারা। শিশুপার্ক থেকে বের হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাসপাতালের দিকে একটি রেস্টুরেন্টে নাস্তা করার জন্য বের হন। শাহবাগ মোড় পার হওয়ার সময় দ্রুতগামী একটি বাস খাদিজাকে ধাক্কা দেয়। তৎক্ষণাৎ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কয়েক দিন আগে দুলাভাইয়ের সঙ্গে ঢাকায় বেড়াতে এসেছিল মিতু।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক জানান, দুর্ঘটনার পরপরই চালকসহ বাসটি আটক করে জনতা। শিশুপার্কের সামনে থেকে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত প্রায় পাঁচশ’ গজজুড়ে ফুটপাত দখল করে মিষ্টান্ন, আচার, রকমারী পণ্যের দোকান আর হাজার হাজার মানুষের আগমনের সঙ্গে রাস্তার যান দুর্ঘটনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
 
কয়েক দিন আগে এই শাহবাগ মোড়ে বারডেম হাসপাতালের এক কর্মী দুর্ঘটনায় নিহত হন।

শাহবাগে শিশুপার্কের সামনের শিশু ও নারীদের রকমারী পণ্যের এক দোকানদার বাংলানিউজকে বলেন, যেমন হাজার হাজার মানুষ আসে, তেমনি দুর্ঘটনাও ঘটে।
 
‘বাসও হুড়োহুড়ি করে চলে। কে কখন দুর্ঘটনায় পড়ে তার ঠিক নাই’।
 
শাহবাগ মোড়ের কাছে শিশুপার্কের পাশে যে ফুটওভার ব্রিজটি আছে তা বেশির ভাগ সময় দখলের কারণে পথচারীরা উঠতে চান না বলে জানান সেখানকার লোকজন।
 
জাতীয় জাদুঘরের সামনে আরেকটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মিত হচ্ছে, পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে সচেতনতা জরুরি বলে মনে করেন নিরাপদ সড়ক চাই’র ইলিয়াস কাঞ্চন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৫০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৬
এমআইএইচ/আইএ

** শাহবাগে বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল আরও এক ছাত্রীর
** ‘ডাক্তার তো হতে পারলো না, লাশ হয়ে গেলো’
** রাজধানীতে বাসচাপায় স্কুল ছাত্রী নিহত, ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ
** রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নবম শ্রেণির ছাত্রী নিহত

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।