ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

লালপুর থেকে আসিফ ও শুভ্রনীল

নতুন বইয়ে নতুন উদ্যম

আসিফ আজিজ ও শুভ্রনীল সাগর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৬
নতুন বইয়ে নতুন উদ্যম ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লালপুর (নাটোর) থেকে: নতুন বই হাতে স্কুলে যাচ্ছিলো একদল শিশু-কিশোর। শিশিরভেজা সবুজ ঘাসের ডগায় মৃদু রোদের লুটোপুটি তখন।

চোখে-মুখে স্বপ্নবোনা আনন্দ-উচ্ছ্বাস। মুহূর্তেই শৈশবে ফিরে যাওয়া। নতুন বই, নতুন ছাপা কাগজের গন্ধ- সেই যে নানা রঙের দিনগুলি।
 
নাটোর সদর থেকে ৪০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের উপজেলা লালপুরের দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নে আমরা। উদ্দেশ্য গোসাঁইবাড়ি আশ্রম দর্শন। কিন্তু এ দৃশ্য দেখে যাত্রাপথে ভেল্লাবাড়িয়া আব্দুল ওয়াহেদ উচ্চ বিদ্যালয়ে ঢুঁ মারা।
 
শিক্ষকরা সবাই মাঠে টেবিল-চেয়ার নিয়ে বসে। উষ্ণতম জেলা হলে কী হবে,শীত তো কোনো অংশে কম নয়। দাফতরিক কাজও চলছে মৃদু রোদেই।
 
প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুল হলেও শিক্ষার্থীরা নতুন বই হাতে পেয়েছে আগেই। নতুন বছরের ১ জানুয়ারি বই পেয়ে ২ জানুয়ারি থেকে ক্লাস।
 
৬ষ্ঠ শেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজি পড়াচ্ছেন সহকারী শিক্ষক সঞ্জয় কুমার। শ্রেণিকক্ষে ঢুকে দেখা গেলো হাজির প্রায় সব শিক্ষার্থী।
 
প্রথম বেঞ্চে দাঁড়িয়ে তানজিদা আক্তার নিদ্রা গলা ফাটিয়ে রিডিং পড়ছে। অন্যরা শুনছে উৎসাহ নিয়ে। সবার সামনে খোলা নতুন বই।
 
সবার চোখে-মুখে খুশির ঝলক। শুধু নিদ্রা কেন, সবাই পড়তে চায় নতুন বইয়ের গল্প-কবিতা। কে পড়বে কে পড়বে, সবার হাত উপরে। কিন্তু সবাইতো আর এক সঙ্গে পড়তে পারবে না, সঞ্জয় স্যার নিজেই বেছে নিলেন পরবর্তী দু-তিনজনকে।

ষষ্ঠ শ্রেণি ঘোরা শেষ, এরপর কোন ক্লাস? বারান্দায় দাঁড়িয়ে বেশ মুশকিলেই পড়তে হলো! সব ক্লাসই তখন জমজমাট। একেবারে সুনসান নীরবতা। শুধু শিক্ষকের সস্নেহ আওয়াজ।
 
কে বলবে, একটু আগেই বারান্দা-মাঠজুড়ে লুটোপুটির হাট ছিলো। ক্যামেরা ঝোলানো দুই সাংবাদিক যেতেই কতো না কৌতুহল! গ্রুপ ছবি তোলার জন্য স্যাররা ডাক দিতেই, হুল্লোড় বেড়ে গেলো আরও কয়েক গুণ। কার আগে কে যাবে সেই প্রতিযোগিতা। ক্লিক করার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ফ্রেমে ঢোকার তাড়া থামলো না। মাঝখানে সব শিক্ষক, তাদের ঘিরে বাকিরা- দূর থেকে দেখলে মনে হবে মণি-মুক্তা খচিত চন্দ্রহার। এরপর ক্লাসের ঘণ্টা বাজতেই নিমেষেই যেনো হাওয়া!
 
কোথায় যেনো ছিলাম, হ্যাঁ, কোন ক্লাসে যাবো। অগত্যা রশিদ স্যারই পথ দেখালেন, চলেন এবার একটি বড় ক্লাসে যাওয়া যাক।
 
পায়ে পায়ে আমরা তখন নবম শ্রেণি। সেখানেও চলছে পাঠদান। পদার্থ বিজ্ঞান পড়াচ্ছেন স্বয়ং প্রধান শিক্ষক এনামুল হক।
 
স্যারই পড়া থামিয়ে সুযোগ করে দিলেন কথা বলার। পদার্থ বিদ্যার মতো সিরিয়াস পড়াশোনা চলছে, বেশি কালক্ষেপণ না করাই ভালো। স্যারের যদিও হাসিমুখ।
 
ঝটপট প্রশ্ন, কেমন লাগছে নতুন বই-নতুন ক্লাস। লাজুক হাসি দিয়ে রাজিব ইসলামের উত্তর, নতুন বই হাতে পেয়ে আগেই পছন্দের বিষয়গুলো পড়ে ফেলেছি। এখন স্যাররা পড়াচ্ছেন, খুব ভালো লাগছে।
 
সহপাঠী অনিক হোসেন, হালিমা খাতুনেরও প্রায় একই মত। জানালো, নতুন বইয়ের ছাপা ও বাঁধাই বেশ ভালো হয়েছে। মানও ভালো। সব মিলিয়ে তারা খুশি।
 
এর আগে, কথায় কথায় এনামুল স্যার বলছিলেন স্কুলের কথা, একটু লিখবেন আপনারা। আমাদের পর্যাপ্ত ভবন, চেয়ার-টেবিল-বেঞ্চি নেই। নতুন একটি ভবনে প্লাস্টারও হয়নি। সরকার যেনো আমাদের একটু দেখে। আর আমাদের স্কুলে কোনো বেতন নেওয়া হয় না, তাই গরিব শিক্ষার্থীরাও পড়তে পারে।
 
আপনারা এসেছেন, খুব ভালো লাগলো, আবার আসবেন সময় করে- ফিরে আসার পথে এ কথাটিও যোগ করে দিলেন।
 
এরপর যেতে হবে লম্বা পথ। পরম আতিথেয়তায় যথারীতি এগিয়ে দিচ্ছেন রশিদ স্যার। শিক্ষকের চোখ এড়িয়ে আমাদের দিকে সেই কৌতূহলী চোখগুলো। তাদের সবকিছুতেই যেনো পূর্ণ উদ্যম। আর হবেই বা না কেন, হাতে যে নতুন বই!

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৬
এসএস/এএ/জেডএম

** সুধীরের সন্দেশ-ছানার জিলাপির টানে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।