ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আলোচনায় পৌরসভার অনিয়ম

ইউপি নির্বাচনের প্রস্তুতি বৈঠক ইসি’র

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৬
ইউপি নির্বাচনের প্রস্তুতি বৈঠক ইসি’র

ঢাকা: সারাদেশের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন নিয়ে অনানুষ্ঠানিক প্রস্তুতি বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে পৌরসভা নির্বাচনের অনিয়ম।


 
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে রোববার (১৭ জানুয়ারি) নির্বাচন কমিশনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ইসির সিনিয়র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
 
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন ইউপি নির্বাচনের প্রস্তুতি মূলক বৈঠক হলেও এতে প্রাধান্য পেয়েছে পৌরসভা নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনিয়ম ও গাফিলতি। এক্ষেত্রে নির্বাচনী প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অংশ নেওয়া থেকে শুরু করে ভোটের দিন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তব্যে অবহেলার কথাও উঠে এসেছে।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির উপ-সচিব পর‌্যায়ের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ইউপি নির্বাচন ছোট হলেও সারাদেশের অনেকগুলো ইউপিতে ভোটগ্রহণ করতে হবে। সংখ্যাগত দিক দিয়ে এটি অনেক বড় নির্বাচন। এছাড়া একেবারে গ্রাম পর্যায়ে নির্বাচন বলে এর চ্যালেঞ্জও কম নয়। তাই সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনের মতো অনিয়ম যেন না হয়, সে বিষয়ে আরো কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে।
 
অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ২৮ এপ্রিলের পৌরসভা নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছিলো ব্যাপক সংখ্যক। কিন্তু তারা অনেক পৌরসভায় ঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারেনি। কারণ হিসেবে গাড়ির অপর্যাপ্ততার কথা বলেছে।

এ বিষয়টি যেন ইউপি নির্বাচনে না হয়, সে বিষয়েও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উঠে এসেছে বৈঠকে।
 
এছাড়া বিভিন্ন স্থানে পুলিশের এসআই, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদেরও কেউ কেউ নির্বাচনী অনিয়মের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছিলেন। পৌরসভা নির্বাচনের দিনও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। আসন্ন ইউপিতেও যেন এ বিষয়টির পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়েও কঠোর হওয়ার কথা বলেছেন সিইসি।
 
এদিকে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, সার্বিকভাবে পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনায় কমিশনকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। তাই আসন্ন ইউপি নির্বাচনেও সে ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সেজন্য সকল ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

পৌরসভা নির্বাচনের সময় বিভিন্ন অনিয়মের কারণে একটি পুরো পৌরসভায় এবং ১৮টি পৌরসভার ৩৯ কেন্দ্রে পুনঃভোট করতে হয়েছে ইসিকে।
 
অন্যদিকে ইউপি নির্বাচন বিধিমালার খসড়া অনুমোদনের (ভেটিং) জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ইসি। রোববার ইসির বিশেষ দূত মারফত আইন মন্ত্রণালয়ে খসড়া বিধিমালাটি পাঠানো হয়েছে। সরকার আইন সংশোধন করে দলীয়ভাবে ইউপি নির্বাচনের বিধান করায় সে আলোকে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালাও সংশোধন করতে হচ্ছে ইসিকে।
 
খসড়া বিধিমালায় দলগুলোকে একটি ইউপিতে একজন মাত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীকেই প্রথম থেকে মনোনয়ন দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো ইউপিতে দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা সম পর্যায়ের পদাধিকারী বা তাদের কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট দলের প্রার্থী হিসেবে কাউকে মনোনয়ন দিতে পারবেন। আর কোনো ইউপিতে একটি দল একের অধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দিলে সংশ্লিষ্ট দলের সবগুলো মনোনয়নপত্রই বাতিল বলে গণ্য হবে। দল কাউকে প্রার্থী মনোনয়নে ক্ষমতা দিলে সে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম ইসি ও রিটার্নিং কর্মকর্তাকে তফসিল ঘোষণার সাতদিনের মধ্যে জানাবে।
 
খসড়া বিধিমালায় জোটগতভাবে প্রার্থী দেওয়ার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সংখ্যক ভোটারের সমর্থন রাখার বিধানও নেই, যা দলীয়ভাবে অন্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে রয়েছে। ফলে এ নির্বাচনে যে কেউ ইচ্ছা করলেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে বা প্রার্থী হতে পারবেন। নির্বাচনে কোনো বৈধ চেয়ারম্যান প্রার্থী মৃত্যুবরণ করলে সংশ্লিষ্ট ইউপির নির্বাচন বন্ধ করা হবে। এক্ষেত্রে পুনরায় তফসিল দেবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এতে আগের বৈধ প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে তাকে আর মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে না। এ বিধান সদস্য (মেম্বার) পদের নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
 
এসব বিধান রেখে প্রস্তত করা খসড়া বিধিমালাটি আইন মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে শিগগিরই তা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।
 
ইসির উপ-সচিব সামসুল আলম বাংলানিউজকে জানান, রোববার সন্ধ্যা নাগাদ আমরা ইউপি নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক বৈঠক করেছি। এতে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালাও আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে।
 
ইসি’র নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে জানা গেছে, আগামী মার্চের শেষের দিকে সারাদেশে ইউপি নির্বাচন শুরু করা হবে। কয়েক দফায় সারাদেশের প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উপকূলীয় অন্তত ২১ উপজেলার পাঁচ শতাধিক ইউপিতে নির্বাচন আগামী মার্চে অনুষ্ঠিত হবে।
 
দেশের সর্বশেষ ইউপি নির্বাচন হয়েছিলো ২০১১ সালের মার্চ থেকে জুলাইয়ের মধ্যে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৬
ইইউডি/ এএসআর

** ইউপি নির্বাচনেও বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকছে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।