ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৬
ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক

ঢাকা: ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে এমন ২০টি শহরের মধ্যে রাজধানীর ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। বৈজ্ঞানিক ব্যাখা অনুযায়ী, বড় মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানতে বেশি দেরি নেই।

আগামী ২০১৮ সালের পরে বা তার আগে যেকোনো সময় বাংলাদেশে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে বলে মনে করেন বিশেজ্ঞরা।

সোমবার (১৮ জানুয়ারি) রাজধানীর স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত “ভূমিকম্প মোকাবেলা: আমাদের করণীয়” শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।

বেসরকারি সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও সিপ এর সহযোগিতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এই কর্মশালার আয়োজন করে।

কর্মশালায় ভূমিকম্প, নগরের ঝুঁকি এবং পরিণতি বিষয়ক আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এ কে এম মাকসুদ কামাল বলেন, বৈজ্ঞানিক ব্যাখা অনুযায়ী, একটি বড় মাত্রার ভূমিকম্প ঘটে যাওয়ার ১০০ বছর পর ফের বড় মাত্রার ভূমিকম্প হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে একশ’ বছর পূর্ণ হওয়ার ২০ বছর আগে হলে পূর্বের মাত্রার চাইতে কম মাত্রার ভূ-কম্পন অনুভূত হয়, আর ২০ বছর পরে হলে তার মাত্রা আগের চেয়ে বেশি হয়।

আগামী ২০১৮ সালে সেই একশ’ বছর পূর্ণ হচ্ছে, তাই যেকোনো সময় বড় মাত্রার ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে ১৯১৮ সালে বাংলাদেশে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল।

তিনি ২০০৯ সালের এক পরিসংখ্যানের তথ্য তুলে ধরে বলেন, আমাদের দেশে ৮ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহরের ৭২ হাজার ভবন ভেঙে পরবে এবং ১ লাখ ৩৫ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ঢাকা শহর ধ্বংস্তুপে পরিণত হবে।

টাঙ্গাইলের মধুপুরসহ দেশের ১৩টি স্থান অধিক ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা বলে জানান তিনি।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ বলেন, ঢাকা শহরের ৭৬ শতাংশ রাস্তা সরু হওয়ায় ভূমিকম্প হলে উদ্ধার তৎপরতা চালানো কঠিন হয়ে যাবে। রাস্তাগুলো যেমন সরু, তেমন ২৪ শতাংশ রাস্তা নরম মাটি দিয়ে তৈরি।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা শহরে ভূমিকম্প হলে ফ্লাইওভার ব্রিজ ভেঙে পড়বে, বিদ্যুৎ-গ্যাস লাইনে আগুন ধরে যাবে, পানির লাইন ফেটে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে উদ্ধার কার্যক্রম চালানো কঠিন।

ঢাকা শহরে অনুমোদনহীন ভবনের সংখ্যা অনেক বেশি। এখানে ভবনগুলো অপরিকল্পিত। তাই ভূমিকম্প হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটির ওপর আরেকটি গিয়ে পড়বে, এতে বড় বিপর্যয় নেমে আসবে, যোগ করেন ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা।

শাকিল বলেন, ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবেলায় বেশি করে স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে, থানায়, কমিউনিটিতে স্বেচ্ছাসেবকরা যেন ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার কাজে সহায়তা করতে পারে।

কর্মশালার উদ্বোধন করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। এতে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর সেনায়েত গেব্রেজেবিয়ার।
 
এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহমেদ, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রি. জে. আলী আহমেদ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেসবাহুল ইসলাম, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল কাইয়ুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর একেএম মাকসুদ কামাল, সম্প্রতি বিধ্বস্ত নেপালের সহায়তা কাজে অংশগ্রহণকারী শশাঙ্ক সাদী।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র বলেন, ভূমিকম্পের যেহেতু কোনো পূর্ব সংকেত হয় না, তাই আমাদের ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবেলায় বেশি সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এজন্য প্রতিটি ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে তাদের ওয়ার্ডে দুই শ’ জন স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত করার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৬
এসএম/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।