ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দক্ষ কর্মী চান হোটেল মালিকরা

সাজেদা সুইটি, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৬
দক্ষ কর্মী চান হোটেল মালিকরা ছবি: রানা / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: পর্যটন শিল্পের বিকাশে হোটেল সুব্যবস্থাপনা, দক্ষ কর্মী গড়তে মনোযোগী সরকার। আতিথেয়তা ও সেবার মন্ত্রে পর্যটক আকৃষ্ট করতে কৌশলী সংশ্লিষ্টরা।

আর এতে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাওয়ার আশা করছেন হোটেল মালিকরা।  
 
দক্ষ কর্মী গড়তে আগ্রহী তরুণদের নিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। আগেও এমন প্রশিক্ষণ ছিল, তবে নতুন বছরটি ‘পর্যটন বর্ষ’ হওয়ায় যোগ হয়েছে আধুনিকতা, যুগোপযোগিতা।   
 
কাজে যোগ দেওয়ার পর কাজ শেখানোর চেয়ে, শুরুতেই তৈরি ও দক্ষ কর্মী পাচ্ছেন বলে আনন্দিত মালিকরা।  
 
ট্রেনিং ইনস্টিটিউটটির প্রিন্সিপাল পারভেজ এ. চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, প্রশিক্ষিত কর্মীর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এখনো বিভিন্ন হোটেল-মোটেল-প্রতিষ্ঠান থেকে আমাদের কাছে প্রশিক্ষিত কর্মী চেয়ে আসা ১৭০টি চিঠি জমা রয়েছে। প্রশিক্ষণের পর চাকরির সুযোগ অনেক বেড়ে যায়। মালিকরা প্রশিক্ষিত কর্মী চান।  
 
তিনি বলেন, হোটেলের মালিক বা প্রধান কর্মকর্তা যদি বাইরে থেকে আসা অনভিজ্ঞ কেউ হন, সব পরিস্থিতি সামাল দেওয়া তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু যিনি ডিশ ওয়াশিং থেকে শুরু করে হোটেলের সব কাজ করেছেন কখনো না কখনো, ধীরে ধীরে উচু পর্যায়ে এসেছেন, তিনি যেকোনো পরিস্থিতি ভালোভাবে সামলাতে পারেন। অতিথি সেবা, অতিথির প্রয়োজন, অভিযোগ-অনুযোগ অনুসারে সন্তুষ্টির ব্যবস্থা- তিনিই সবচেয়ে ভালো বোঝেন।  
 
সোমবার (১৮ জানুয়ারি) মহাখালীর হোটেল অবকাশে (পর্যটনের ট্রেনিং হোটেল) সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।  
 
প্রশিক্ষক ও পর্যটন কর্মকর্তারা বাংলানিউজকে বলেন, কর্মীদের যুগোপযোগী করে তোলা হচ্ছে। প্রোডাকশন, হাউজ কিপিং, সার্ভিস, ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস, ব্রেড অ্যান্ড পেস্ট্রি, ফ্রন্ট ডেস্ক- এমন কয়েকটি বিষয়ে কর্মীরা পাচ্ছেন নানা কৌশলী শিক্ষা। বছরে হাজারো কর্মী প্রশিক্ষিত হয়ে বের হচ্ছেন, তারা বাস্তবে কাজ করতে গিয়ে আরও অভিজ্ঞ হচ্ছেন। তাদের অভিজ্ঞতায় অন্যরাও উপকৃত হচ্ছে।  
 
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে এমন প্রশিক্ষণ উদ্যোগের প্রশংসা করলেন প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের হিউম্যান ক্যাপিটাল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পরিচালক শরীফ হোসাইন খান।  
 
তিনি বলেন, যখন হোটেলে ট্রেনিং নিতে যাবেন, সময়ানুবর্তিতা মেনে চলবেন। অতিথির সন্তুষ্টির জন্য কাজ করবেন সবাই। তাদের সন্তুষ্টিই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। প্রশিক্ষণের উদ্যোগ অবশ্যই ভালো। একজন অতিথি হোটেলে এলে তাকে গ্রহণ, প্রয়োজন ও রুচি বুঝে সেবা দিতে হবে এমনভাবে, যাতে সে নিজেকে নতুন আগন্তুক না ভাবেন। তাকে বোঝাতে হবে, ‘উই আর হেয়ার অনলি ফর ইউর প্লেজার!’ এখানে আন্তরিকতা, বুদ্ধিমত্তার অদ্ভুত এক মিশেল থাকা চাই।  
 
হোটেল ‘দ্যা অলিভস’-এর মালিক মারুফ ইউ ইসলাম বলেন, রাগী পর্যটক কথায় কথায় অপমান করতে পারেন হোটেল কর্মীকে, তার জবাবে মিষ্টি হাসি আর ধৈর্য্য দেখাতে হবে। কিছুতেই পেরে না উঠলে আরও সিনিয়র কারও সহযোগিতা নিতে হবে। এখানে প্রশিক্ষণ নেওয়া ছেলেমেয়েরা এসব জানে। তাই সুবিধা হয়।  
 
এমন দক্ষ কর্মীদের কাজে নিতে হোটেল মালিকরা মুখিয়ে আছেন বলে জানান বিবিকিউ’র পরিচালক আশরাফ উদ দৌলা।  
 
তিনি প্রশিক্ষণার্থীদের সামনে পেয়ে বলেন, আমি এখানে এসেছি আপনাদের জব সিকিউরিটি দিতে। রেস্টুরেন্টে মূল বিষয় রান্নাঘর। প্রথমে পার্সোনাল হাইজিন প্র্যাকটিস করতে হবে। আপনারা ঘোড়া, মালিক হিসেবে আমি শুধু জকি। আমাদের পর্যটন খাতে হোটেল বড় ব্যাপার। এরপর বাক্সের বাইরের কাজ করতে হবে।
 
হোটেল এয়ার ইন’র পরিচালক ও এক্সিকিউটিভ শেফ হানিফ হোসাইন টিটু বলেন, আমি একসময় শেফ ছিলাম, আজ হোটেল মালিক। এখানে উৎসাহ দিতে এসেছি।
 
বাংলাদেশ হোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচজিএইচওএ) প্রেসিডেন্ট সাইফ আহমেদ বলেন, অতিথির প্রয়োজন বুঝে সেবা দিতে হবে, তিনি চাওয়ার আগেই। যাতে তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। বারবার তিনি যেন সেই হোটেলে ফিরে আসেন বা অন্যদের কাছে এ হোটেলের সেবার প্রশংসা করেন। সেবা পাওয়া অতিথির প্রশংসায় যতটা প্রসার ও প্রচার হয়, তা আর কোনোভাবেই হয় না। এক্ষেত্রে দক্ষ কর্মীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
 
খুলনার ছেলে সোহাগ একটি ভালো চাকরির খোঁজ করছিলেন হন্যে হয়ে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে কাজ করেন তার চাচা। তার পরামর্শেই এ প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন তিনি।  
 
প্রশিক্ষণ প্রায় শেষের দিকে, নিজেকে আগের চেয়ে আত্মবিশ্বাসী ভাবছেন সোহাগ। বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে জানালেন, দেশেই বড় হোটেলে বা দেশের বাইরে কাজ করতে চান তারা। এসএসসি পাশ হলেই এখানে প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়া যায়। বয়স ১৮ বা তার চেয়ে বেশি যাদের। দুই দফায় এখানে ক্লাস নেওয়া হয় বলে জানালেন তিনি। সাড়ে ৯টা থেকে ২টা এবং বিকেল ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত চলে এসব ক্লাস।  
 
পর্যটন চেয়ারম্যান অপরূপ চৌধুরী বলেন, পর্যটন বিশ্বাস করে, অতিথি সেবার মূলমন্ত্র হলো- হাসি। সে শিক্ষাই এখানে দেওয়া হয়। দেশের পর্যটনে সরকার খুব মনোযোগী, তাই আমাদের সবার উচিৎ সরকারকে সহযোগিতা করা। যার যার অবস্থান থেকে যদি এ বিষয়ে আন্তরিক থেকে কাজ করি, বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম শীর্ষ একটি পর্যটন-গন্তব্যে পরিণত হবেই।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৬
এসকেএস/এমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।