ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নাটোর থেকে আসিফ ও শুভ্রনীল

হঠাৎ বৃষ্টিতে শীতের দাপট

আসিফ আজিজ ও শুভ্রনীল সাগর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৬
হঠাৎ বৃষ্টিতে শীতের দাপট ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নাটোর থেকে: সত্যি হঠাৎ বৃষ্টি! বলা যায় মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। চলনবিলের বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির হাত ধরে ছুটে চলতে চলতে এক চিলতে বাধা।

মেঘ ও কুয়াশাকে মনে মনে গালিই চলছিলো। কারণ হাতে ছিলো ক্যামেরা, ব্যাগে ল্যাপটপ। এমনিতে ছবিতে পাওয়া যাচ্ছিলো না শার্পনেস। দূরে ঘোলাটে মেঘের ছদ্মবেশী রূপ বুঝিনি। আলগা ইঞ্জিনচালিত ভ্যানগাড়ি যখন চলনবিলের নাটোর অংশের শেষ প্রান্তে, তখনই মুক্তার মতো পানির ফোঁটা লেন্সে। পরক্ষণেই ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি।
 
রক্ষে তখন ঢালিয়া বাজারে। পলিব্যাগ কিনে তাই ক্যামেরা, ল্যাপটপ বাঁচানো। কিন্তু সিংড়া পৌঁছাবো কীভাবে রিজার্ভ করা এ খালি ভ্যানে! এ ভাবনার মধ্যেই হাজির ‘বাঘহীন বনে শিয়াল রাজার’ মতো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। সিদ্ধান্ত হলো এতেই যাবো। উঠে পড়লাম সব গুটিয়ে। অপেক্ষাকৃত বড় যন্ত্রের কাছে সাময়িক হার মানলো মোডিফায়েড যান।
 
কিন্তু গা ভেজা সামান্য বৃষ্টি হলেও সমস্ত প্রকৃতি যেন নিলো ভিন্ন রূপ।
 
বাহনের চলার গতিতে বেড়ে যাচ্ছিলো ক্ষুদ্রকণার তীব্রতা। ছিঁটিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছিলো শরীর।

তখন ফোঁটাগুলো বিঁধছিলো সুচের মতো। মুহূর্তে যেন রূপ নিলো বরফে। বিলের দুপাশের প্রকৃতি পাল্টে গেলো চোখের সামনে। মাত্র ঘণ্টাখানেক আগে দেখে আসা বক, পানকৌড়ি কিংবা চাষের জমি, খড়গাদার ভিন্ন রূপ। রাস্তা ভিজে কালচে। কাকগুলো জড়োসড়ো। মনে করিয়ে দিলো কাকভেজা বৃষ্টির কথা।
 
ফিঙে শালিক বেশ কষ্টই পাচ্ছিলো হঠাৎ এ বৃষ্টিতে। যে চলনবিল এলাকায় গত দু’দিন শুধু একটি জ্যাকেট গায়ে দিন পার হয়েছে, সেখানেই নামলো কড়া শীত। তাতে হালকা স্যাঁতসেঁতে ভাব শরীরকে করে দিচ্ছিলো আরও আড়ষ্ট।
 
নাটোর সদর ও বাগাতিপাতা থেকে ফোন এলো প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের অবস্থা জানতেই ফোন তাদের। তখন মনে মনে ভাবলাম তাহলে ভালোই আছি!
 
যে বৃষ্টি তাতে বিলের রূপ যৌবন ফিরে আসার কথা নয়। তবে, সামান্যতেই যে বিশাল এ বিল হেসে বৃষ্টিকে স্বাগত জানালো তা বুঝতে বাকি রইলো না। রাস্তার পাশের কচি কলার পাতায় তখন সত্যি দেখা মিলছিলো বৃষ্টিভেজা আলোর নাচোন।
 
সিংড়া সদরে পা রাখতেই বৃষ্টি একটু বাড়লো, সঙ্গে শীত। দ্রুত বাসে উঠে নাটোরে এসে বৃষ্টি অনুপস্থিত। তবে রাস্তাঘাটে বৃষ্টির চিহ্ন স্পষ্ট। পথের ধারের হকার, গত ক’দিনের উৎপেতে ভিক্ষুকদের আনাগোনা নেই। সন্ধ্যায় দুপুরের খাবার পেটে পুরে বাগাতিপাড়া রওয়ানা হতেই বিপত্তি বাড়লো। বৃষ্টি ফের বাড়ছে। কোনো অটো যেতে চায় না। সবার কথা, ‘বৃষ্টি আইছে মাম্মা, বাড়িত যাবার লাগচি। ’
 
অনেক কষ্টে ডাবল ভাড়ায় পিটিআই। কিন্তু দয়ারামপুর কিছুতেই আসবে না অটো। লোক নেই। বৃষ্টি সবাইকে ঘরবন্দি করেছে। আর শীতের তীব্রতা বাড়ায় নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া পথে রাত আটটায়ও দেখা মিলছে না কারও। অটোচালক তো বলেই ফেললো, ‘আইজ জমা দেইনি তাই এ শীত বরষার রাতি যাতিচ্ছি। ’
 
 অবশেষে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে সুনসান অন্ধকারে কাদা ছিরছিরে রাস্তায় দিয়ে আধাঘণ্টার পথ একঘণ্টায় পৌঁছালাম। বৃষ্টি ততক্ষণে নেই। হেঁটে বাসায় পৌঁছে শুনি এখানকার অধিকাংশ বাসার কেউ গোসল করেনি। কারণ শীতবৃষ্টি।
 
তারপর রাত ১২টার পর থেকে যখন নিঝুম রাতে শো শো হাওয়া ছেড়ে ফের বৃষ্টি এলো তখন টিনের চালে বাতাস আর বৃষ্টির গান। আড়স্ট করা আনন্দে চলছে সে গান। কিন্তু শীতে তখন চোখ মুখ ঢাকা। কথা বের হচ্ছে না। মুখ দিয়ে উঠছে ধোঁয়া।
 
বাংলাদেশ সময়: ০২১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৬
এএ/এসএস/পিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।