ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সুস্থ জীবনে ফিরতে হৃদয়ের আকুতি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৬
সুস্থ জীবনে ফিরতে হৃদয়ের আকুতি বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

হৃদয়, বয়স ১১। এ বয়সে তার স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করার কথা থাকলেও শরীরে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে চিকিৎসার টাকা যোগাড় করার জন্য পথে পথে ঘুরছে সে।

বেনাপোল (যশোর): হৃদয়, বয়স ১১। এ বয়সে তার স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করার কথা থাকলেও শরীরে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে চিকিৎসার টাকা যোগাড় করার জন্য পথে পথে ঘুরছে সে।

একটি সড়ক দুর্ঘটনায় আজ সে এই  দূর্বিসহ জীবনযাপন করছে। চিকিৎসার জন্য ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও বিজিবিকে অনুনয়-বিনয় করে ঘুরে এসেছে ভারত থেকে। এখন চিকিৎসা শেষ করতে তার আরো টাকার প্রয়োজন।

রোববার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে বেনাপোল স্থলবন্দরের সামনে ফুটপাতে দেখা যায়, একটি শিশু শরীরে আঘাতের ভয়ঙ্কর চিহ্ন নিয়ে চিকিৎসার জন্য সাহায্য প্রার্থনা করছে। তার পায়ে এমন ভাবে লোহার শিক ঢোকানো রয়েছে যা দেখলে গা শিউরে উঠে। কেউ এ দৃশ্য দেখে পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে আবার কেউ আতঙ্কিত হয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে।

কথা বলে জানান যায়, তার পুরো নাম সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়। বাড়ি চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামির ছিন্নমূল ১ নম্বর কলোনি এলাকায়। তার বাবার নাম আলমগীর হোসেন। ৪ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট সে। বাবা ওই এলাকায় ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। সংসারে অভাব অনটনের জন্য আর লেখাপড়া করা হয়নি হৃদয়ের। তাই সংসারের খরচ জোগাতে তাকেও হাল ধরতে হয়েছিল। মাত্র আট বছর বয়সেই একটি খাবারের হোটেলে সে বয়ের কাজ নিয়েছিল। ৭ মাস আগে হোটেলে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে একটি বাস চাপা দিলে তার একটি পা ভেঙে যায়।

চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে বাবার জমানো সব টাকা দিয়ে তাকে সাধ্যমত চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু আরো টাকার দরকার হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তিনি চিকিৎসা শেষ করতে পারেন নি। এতে হৃদয়ের  শারীরিক অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাচ্ছিল। এসময় তীব্র যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে সে নিজেই সাহায্যের জন্য পথে নামে।

হৃদয় আরো জানায়, সে যখন অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার অভাবে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলো তখন তাদের এক প্রতিবেশী পরামর্শ দেয় ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করালে ভালো হয়ে যাবি। কিন্তু পা সম্পূর্ণ ভেঙে যাওয়ায় নিজে নিজে পথ চলার মত অবস্থা নেই হৃদয়ের।

পরিবারের দূরবস্থার কারণে বাবাও ছেলেকে সুস্থ করার চেষ্টা ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু বাঁচার স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধে নামে হৃদয়। প্রস্তুতি নেয় ভারতে যাওয়ার। কাঠ, বিয়ারিংয়ের ঠেলা গাড়ি বানিয়ে মাস খানেক আগে বিভিন্ন মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত সে এসে পৌঁছায় বেনাপোলে। পরে সাহায্য তুলে সীমান্তের বিজিবি ও বিএসএফকে অনুনয় বিনয় করে কলকাতায় গিয়ে চিকিৎসা করায়। এতে তার ৮ হাজার রুপি খরচ হয়।

এখন সে আগের চেয়ে কিছুটা সুস্থ। তবে তার চিকিৎসা শেষ করতে আরো টাকার প্রয়োজন। এ কারণে সে সাহায্যের জন্য আরো কিছুদিন বেনাপোলে অবস্থান করছে। এই বয়সে আত্মবিশ্বাস নিয়ে বাঁচার জন্য তার এ সংগ্রাম অবাক করেছে পথচারীদের।

আমাদের সমাজে এমন অনেক হৃদয়বান মানুষ এখনও আছেন যারা কেউ হৃদয়ের জন্য চিকিৎসার সাহায্যে এগিয়ে এলে সে আবার নতুন জীবন ফিরে পাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৬
এজেডএইচ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।