ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

১৪ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় সিরাজগঞ্জ 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৬
১৪ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় সিরাজগঞ্জ  সিরাজগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নাম ফলক। ছবি: বাংলানিউজ

বুধবার ১৪ ডিসেম্বর, সিরাজগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে আজকের দিনে মুক্ত হয় সিরাজগঞ্জ শহর। 

সিরাজগঞ্জ: আজ ১৪ ডিসেম্বর, সিরাজগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে আজকের দিনে মুক্ত হয় সিরাজগঞ্জ শহর।

 

এদিন সকাল ১০টায় বিজয়ের গর্বে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা তাদের প্রিয় শহরের দখল নেন। ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে উল্লাসে মেতে ওঠে বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি শহর ও শহরতলীর আশপাশ থেকে হাজার হাজার কৃষক-শ্রমিক-জনতা জাতীয় পতাকা হাতে শহরে প্রবেশ করে। বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠে সিরাজগঞ্জবাসী।  


আব্দুল আজিজ সরকার, গাজী জহরুল ইসলাম ও গাজী আশরাফুল ইসলাম চৌধুরীসহ সিরাজগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ শহরকে হানাদারমুক্ত করার লক্ষ্যে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রথমেই সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের শৈলাবাড়ী পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্প দখলের চেষ্টা করেন তারা। প্রচণ্ড যুদ্ধে ওইদিন শহীদ হন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মাহমুদ।  

হানাদার বাহিনীর অত্যাধুনিক অস্ত্রের সামনে টিকে থাকতে না পেরে পিছু হটেন মুক্তিযোদ্ধারা। ক্লান্ত মুক্তিযোদ্ধারা ১০ ডিসেম্বর বিশ্রাম নেন। এরপর ১১ ও ১২ ডিসেম্বর দফায় দফায় আক্রমণ চালাচ্ছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। ১৩ ডিসেম্বর থেকেই হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সিরাজগঞ্জ শহরকে হানাদার মুক্ত করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। তিন দিক থেকে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।  

মোজাম্মেল হক ও ইসহাক আলীর নেতৃত্বে পূর্ব দিক থেকে, সোহরাব আলী ও লুৎফর রহমান দুদুর নেতৃত্বে পশ্চিম দিক থেকে, আমির হোসেন ভুলু ও জহুরুল ইসলামের নেতৃত্বে উত্তর দিক থেকে আক্রমণ করে। এছাড়াও দক্ষিণ দিক থেকে ইসমাইল হোসেন ও আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ ব্যুহ গড়ে তোলেন। ওইদিন রাত তিনটা পর্যন্ত প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা কায়দায় সাড়াশি আক্রমণে টিকতে না পেরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ট্রেনে ঈশ্বরদীর দিকে পালিয়ে যায়।  

১৪ ডিসেম্বর ভোরে শহরের ওয়াপদা অফিসে পাকিস্তানি বাহিনীর মূল ক্যাম্প দখলে নেন মুক্তিযোদ্ধারা। ওইদিন কওমী জুটমিল, মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে উড়িয়ে দেওয়া হয় জাতীয় পতাকা। সম্পূর্ণরুপে হানাদার মুক্ত হয় সিরাজগঞ্জ। সিরাজগঞ্জ মুক্ত হবার পর মহুকুমা প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয় ইসমাইল হোসেনকে (বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী) এবং মুক্তিযুদ্ধে সিরাজগঞ্জে সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় মরহুম আমির হোসেন ভুলুকে।  

জেলা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার গাজী সোহরাব আলী সরকার বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে সিরাজগঞ্জে সেদিন যারা মুক্তিযোদ্ধাদের এক কাতারে সমবেত ও সংগঠিত করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম মরহুম আমির হোসেন ভুলু, তৎকালীন মহুকুমা প্রশাসক (এসডিও) শহীদ শামসুদ্দিন, মরহুম আব্দুল লতিফ মির্জা, মরহুম গাজী লুৎফর রহমান অরুন, গাজী আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, গাজী জহুরুল ইসলাম, আলাউদ্দিন সেখ, ইসমাইল হোসেন, ইসহাক আলী, আবু মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া, আব্দুল হাই তালুকদার, মরহুম এম এ রউফ পাতা, বিমল কুমার দাস, শফিকুল ইসলাম শফি, ফিরোজ ভুইয়া, মরহুম টিএম শামীম পান্না, মেজর মোজাফ্ফর, মরহুম মঞ্জুরুল হক তৌহিদ, আব্দুল বাছেদ খান, ফজলুল মতিন মুক্তা, সোহরাব আলী সরকার, ইসমাইল হোসেন প্রমুখ।  

সিরাজগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গাজী শফিকুল ইসলাম শফি বাংলানিউজকে জানান, ৯, ১১, ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর চারদিনব্যাপী যুদ্ধ চলে। এ যুদ্ধে শহীদ হন ইঞ্জিনিয়ার আহসান হাবিব কালু, সুলতান মাহমুদসহ ৬ মুক্তিযোদ্ধা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৬
পিসি/
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।