ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ব্রিটিশ নাগরিক লুসি’র সঙ্গে দেখা করলেন বরিশালের ডিসি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৬
ব্রিটিশ নাগরিক লুসি’র সঙ্গে দেখা করলেন বরিশালের ডিসি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মহান মুক্তিযুদ্ধের নিরব সাক্ষী বরিশালে বসবাসরত ব্রিটিশ নাগরিক মিস লুসি হল্টের সঙ্গে দেখা করেছেন বরিশাল জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান।

বরিশাল: মহান মুক্তিযুদ্ধের নিরব সাক্ষী বরিশালে বসবাসরত ব্রিটিশ নাগরিক মিস লুসি হল্টের সঙ্গে দেখা করেছেন বরিশাল জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান।
 
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনে মিস লুসি হল্টের কক্ষে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন তিনি।

এসময় জেলা প্রশাসক সাইফুজ্জামান প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, লুসির সহযোগিতার জন্য সরকার সবসময় তার পাশে রয়েছে। প্রতিবছর লুসির ভিসা রিনিউ করার জন্য যে টাকা খরচ হয় সেটা মওকুফ করা এবং তাকে যাতে দ্বৈত নাগরিকত্ব দেওয়া হয় এজন্য তিনি তার পক্ষ থেকে চেষ্টা করবেন বলে সাংবাদিকদের জানান।
 
এদিকে, বিজয় দিবসের প্রাক্কালে মিস লুসির প্রতি জেলা প্রশাসকের এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয় বলে অভিমত জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত হোসেন চৌধুরী, এম জি কবিরসহ অনেকে।

জেলা প্রশাসকের সহায়তার আশ্বাসে বেশ খুশি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মিস লুসি হল্ট।
 
এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবুল কালাম আজাদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আহসান হাবিব, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) কাজী হোসনেয়ারা, অক্সফোর্ড মিশনের ম্যানেজার বেনডিক্ট বিমল বেপারী প্রম‍ুখ।

প্রায় ৫৬ বছর ধরে পছন্দের দেশ বাংলাদেশে আছেন বৃটিশ নাগরিক মিস লুসি হল্ট। এখন তিনি মরতেও চান বাংলাদেশ তথা বরিশালে।
 
পরিবার-পরিজন ফেলে বরিশাল অক্সফোর্ড মিশন হোস্টেলের ছোট একটি রুমে থাকেন লুসি। উপার্জন বলতে বাংলা-ইংরেজিতে অনুবাদ করা। বৃটিশ নাগরিক হওয়াতে ৭০ পাউন্ড বা হাজার ছয়েক টাকা পান মাসিক ভাতা হিসেবে। তাও আবার অসহায়দের মধ্যে বিলিয়ে দেন বলে জানান অক্সফোর্ড মিশনের ম্যানেজার বেনিডিক্ট বিমল ব্যাপারী। তিনি জানান, লুসির সঞ্চয় বলতে কেবলই বাঙালিদের ভালোবাসা।
 
একাত্তরের স্মৃতি রয়েছে লুসির চোখ জুড়ে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বেশ কয়েক মাস যশোরের ফাতেমা হাসপাতালে আহতদের সেবা করেছেন তিনি।
 
লুসি বলেন, কোন স্বীকৃতি বা কিছু পাওয়ার আশায় নয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় হাসপাতালে আমি বেসামরিকদের সেবা দিয়েছিলাম মানবিক দিক চিন্তা করে। আহতদের সেবা দেওয়ার অবদান হিসেবে সনদ নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে এক কথায় বলেন, না। তিনি বলেন, আমি চাই বাংলাদেশিরা একে অপরকে ভালোবাসবে, প্রশংসা করবে।

লুসি দ্বৈত নাগরিকত্ব চেয়েছিলেন, পাননি। শুধু বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিবেন তাও সাহস পাচ্ছেন না। কারণ বৃটিশ নাগরিক হওয়াতে তিনি ভাতা পান সেখান থেকে। সেটি বন্ধ হবে যদি তিনি সেখানকার নাগরিকত্ব ছেড়ে দেন। আর্থিকভাবে নিঃস্ব এ মানুষটির সরকারের কাছে আহ্বান, তাকে দ্বৈত নাগরিত্ব দেওয়াসহ বছরে ভিসা রিনিউয়ের ৩৮ হাজার টাকা মওকুফের।

তিনি বলেন, আমি অনেক বছর ধরে এদেশে আছি। বাংলাদেশকে ভালোবাসি। সরকার চাইলেই বছরের ওই ৩৮ হাজার টাকা কনসিডার করতে পারে। আমি খুব কৃতজ্ঞ থাকবো যদি টাকাটা কমানো হয়।
 
১৯৩০ সালে ইংল্যান্ডের সেন্ট হেলেন শহরে মিস লুসি হল্টের জন্ম। মাত্র ৩০ বছর বয়সে বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনের হাসপাতালে আসেন সেবায়েত হিসেবে। কথা ছিলো দু’বছর পরে ফিরে যাবেন। কিন্তু এখানকার প্রকৃতি, মানুষ, আর মানুষের ভালোবাসা তাকে আবৃষ্ট করে ফেলে। তাই তো দেখতে দেখতে এদেশে তার কেটে গেলো ৫৬ বছর। বিনে পয়সায় কখনো সেলাই শেখানো, তাঁত প্রশিক্ষণ, পথ শিশুদের পাঠদান, আবার কখনো বা হাসপাতালে সেবা দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন জেলায়।

বাংলাদেশ সময় : ১৮৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৬
এমএস/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।