ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার নামে এ কী অসম্মান!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৬
বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার নামে এ কী অসম্মান! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাংলাদেশের এক গভীর শোকের দিন। পরাজয় নিশ্চিত জেনে ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আল-বদল, আল-শামস মিলে নির্মমভাবে হত্যা করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের। 

ঢাকা: ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাংলাদেশের এক গভীর শোকের দিন।

পরাজয় নিশ্চিত জেনে ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আল-বদল, আল-শামস মিলে নির্মমভাবে হত্যা করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের।  

প্রতি বছরের মতো এদিন সকালেও বীরদের শ্রদ্ধা জানাতে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আসেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর স্থানটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।  

কিন্তু তখন থেকেই সেখানে যেন শুরু হয় এক অরাজক পরিস্থিতির। যা দেখে লজ্জা-গ্লানিতে কুঁকড়ে উঠেছেন শ্রদ্ধা জানাতে আসা মুক্তিযোদ্ধারা।

জাতির বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা এখন কেবল আনুষ্ঠানিকতায় রূপ নিয়েছে জানিয়ে আক্ষেপ করে তারা বলেন, শ্রদ্ধা দেখানোর নামে বুদ্ধিজীবীদের অসম্মানিতই করা হচ্ছে।

অসচেতনতা-অব্যবস্থাপনা আর কিছু মানুষের স্বেচ্ছাচারিতাকেই এর কারণ হিসেবে দোষারোপ করেন তারা।  

সকাল থেকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে অবস্থান করে দেখা যায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দলে দলে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হচ্ছে।  

কিন্তু বেদিতে ফুলগুলো রাখার পরপরই সেসব উধাও হয়ে যাচ্ছে। সেসব ফুল নিয়ে কাড়াকাড়িও লেগে যাচ্ছে অনেকের মাঝে।  আর বেদিতে জুতা পায়ে উঠে মোবাইলে সেলফি তোলার প্রতিযোগিতা ছিল সবচেয়ে বেশি লজ্জার। যারা ফুল আনেননি, তাদের এখানে পড়ে থাকা ফুল দিয়ে ফটোসেশন করতেও দেখা গেছে।

বিভিন্ন স্কুল থেকে আসা শিক্ষার্থীদের কাছে এই স্মৃতিসৌধে আসার কারণ জানতে চাইলে অনেকেই সঠিক কারণ বলতে পারেনি। কেউ কেউ জানিয়েছে, শিক্ষকরা আসতে বলেছেন বলেই এসেছে তারা।  

এসব দেখে হতাশা প্রকাশ করেন শ্রদ্ধা জানাতে আসা মুক্তিযোদ্ধা ওবায়দুল হক। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এখানে এসে অবাক হয়েছি, হাতাশ হয়েছি, ক্ষুব্ধ হয়েছি। বুদ্ধিজীবীদের প্রতি এ কী অসম্মান! যেভাবে ফুল নিয়ে মারামারি হচ্ছে, জুতা দিয়ে মাড়ানো হচ্ছে, তাতে একে কি শ্রদ্ধা দেখানো বলা যায়?

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে বুদ্ধিজীবীদের অবদান তুলে সঠিকভাবে ধরা হয় না। আর এ কারণেই তারা এখানে সেলফি-ছবি তুলতে আসে শুধু। শ্রদ্ধা জানাতে নয়।  

মো. হেলালউদ্দিন নামে একজন শিক্ষক ক্ষোভে ফেটে পড়ে বলেন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি এত অবহেলা কেন। কেন এখানে ফুল দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। স্কুলের শিক্ষার্থীরা পর্যন্ত জুতা পায়ে দিয়ে বেদিতে উঠছে।  

তার মতে, একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর সময় যেমনভাবে কিছুক্ষণের জন্য সঠিক ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেওয়া হয়, এখানেও তেমন ব্যবস্থা রাখা জরুরি।
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দায়িত্বরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল আজিজ বাংলানিউজকে বলেন, “স্মৃতিসৌধে ওঠার বিষয়ে আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি। সকাল থেকেই দেখছি লোকজন উঠছে, নামছে। যে যার মতো। ”

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “ছোটবেলায় আমরা ২১ ফেব্রুয়ারিসহ এ ধরনের দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে বাড়ি থেকেই খালি পায়ে রওনা হতাম। এখন কেন জানি সব নিয়ম-শৃঙ্খলা শিথিল হয়ে আসছে। ”

বাংলাদেশ: ০২২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
জেপি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।