ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দুর্গন্ধে শ্বাস বন্ধ, ট্রেন আসলেই স্বস্তি (ভিডিও)

রীনা আকতার তুলি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
দুর্গন্ধে শ্বাস বন্ধ, ট্রেন আসলেই স্বস্তি (ভিডিও) ছবি: শাকিল- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাজধানীর তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করেছেন অথচ ময়লার স্তুপ ও দুর্গন্ধ পাননি এরকম যাত্রীর সংখ্যা খুঁজে পাওয়া খুই দুষ্কর।

ঢাকা: রাজধানীর তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করেছেন অথচ ময়লার স্তুপ ও দুর্গন্ধ পাননি এরকম যাত্রীর সংখ্যা খুঁজে পাওয়া খুই দুষ্কর। ময়লার স্তুপে তেজগাঁও লেখা সাইনবোর্ডটিও দেখার কোনো ফুসরত নেই।

ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে নাকাল স্টেশনে অপেক্ষারত যাত্রীরা। যাত্রীদের কথা একটাই ‘ট্রেন আসলেই স্বস্তি’।

বুধবার (১৪ নভেম্বর) ঘরির কাটায় বেলা ১টা। রাজধানীর তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন নেওয়াজ ফরহাদ। এভাবেই বর্ণনা দেন স্টেশনের।

তিনি বলেন, তিনি গাজীপুর যাবেন। গাজীপুরে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে কাজ করেন তিনি।  
তেজগাঁও প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষমান যাত্রীরা।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন সকালে নাকে রোমাল চেঁপে ধরে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আর ট্রেন আসলেই সে দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা মেলে। এই অভিযোগ শুধু নেওয়াজের নয় আমিন, ফামিদ, লাবিব নামে আরো অসংখ্য যাত্রীর।  

আমিন, ফামিদ, লাবিবের অভিযোগ, রেলওয়ে স্টেশন ও তার আশে পাশে জায়গায় মূলমূত্র ত্যাগ করা হয়। দায়িত্বরত হাবিলদার দেখেও না দেখার ভান করেন। এছাড়া স্টেশনের তেজগাঁও লেখা সাইনবোর্ডের জায়গায় ময়লার স্তুপ।

তারা আরো অভিযোগ করেন, ময়লা-আবর্জনার উৎকঠ দুর্গন্ধে নাকাল রেলওয়ে স্টেশনে অপেক্ষারত যাত্রীরা। স্টেশন কর্তৃপক্ষের এমন উদাসীনাতায় খুব ক্ষুব্ধ তারা।
 
ওই যাত্রীদের দাবি, স্টেশনে যেন একটি পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়। রাজধানীর অনেক জায়গায় এখন নতুন পাবলিক টয়লেট তৈরি করছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু স্টেশন কেন্দ্রিক একটি টয়লেট অতিব জরুরি। পাবলিক টয়লেট দিলেই কেবলমাত্র এই সমস্যার সমাধান হতে পারে বলেও জানান তারা।  

স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা তাসলিমা জামান বাংলানিউজকে বলেন, স্টেশনে দাঁড়ানোর কোনো উপায় নেই। উৎকঠ দুর্গন্ধে নিঃশ্বাস নেওয়ার উপায় নেই। ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।
ট্রেন আসার আগে খোলা জায়গায় প্রাকৃতিক কাজ সারছেন এক যাত্রী।

সরেজমিনে তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনের পশ্চিম পাশে একটি  ময়লার স্তুপ। বাতাসে ময়লা উড়ছে, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এছাড়া স্টেশনে পাবলিক টয়লেট না থাকায় দুর্গন্ধে দাঁড়ানো যায় না।  

সরেজমিনে আরো দেখা মেলে, ময়লার স্তুপের পাশে বেশ কয়েকটি ঝুপড়ি ঘর। সেখানে  প্রায় ২০টির মত পরিবার বসবাস করছে। রেল লাইনের পাশে এভাবে বসবাস অনৈতিক হলে স্টেশন কর্তৃপক্ষের কোনো দৃষ্টি নেই।

ফুটপাতের উপরে খাবারের দোকানদার মো. বাহাউদ্দিন জানান, তিনি এই স্টেশনে ৮ বছর ধরে ব্যবসা করেন। এই এলাকায় এই ময়লার স্তুপ তিনি এভাবেই দেখে আসছেন। এছাড়া মলমুত্র ত্যাগ করার ঘটনাও নতুন নয়। গন্ধে তার বেচাবিক্রি করতে সমস্যা হয় বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে স্টেশন মাস্টার এম এ আজিজ বাংলানিউজকে বলেন, ময়লার স্তুপ ও স্টেশনের পাশে মলমুত্র ত্যাগ করায় মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন স্টেশনে দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও অপেক্ষমান যাত্রীরা।
স্টেশন মাস্টার এম এ আজিজ

তিনি বলেন, সমস্যা সমাধানের জন্য আমি উত্তর সিটি করপোরেশনের কমিশনারের বরাবর অনেক বার লিখিতভাবে সমস্যা তুলে ধরেছি। তিনি সমাধানের  কোনো উদ্যোগ নেননি। এছাড়া এই স্টেশনে দায়িত্ব পালনের জন্য ২১ জন প্রহরী থাকলেও তারা এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় না।

স্টেশনে দায়িত্বরত সিপাহী মো. খোরশেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। কিন্তু পারি না। নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে অনেক সময় তার গায়ে অনেকে হাত তুলতে এসেছে বলেও জানান তিনি।

স্টেশনের ময়লার স্তুপের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক এম এ রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নগরীর ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা তৈরি করে করে দিয়েছি।   নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেললে তা সিটি করপোরেশন অবশ্যই পরিস্কার করবে।

তিনি বলেন, রেলওয়ে স্টেশনের জায়গার ময়লা রেলওয়েকেই পরিষ্কারের দায়িত্ব নিতে হবে। নিজ দায়িত্বে পরিষ্কারও করতে হবে।

রেলওয়ের লিখিতভাবে জানানোর বিষয়ে তিনি জানান, কমিশনার নয় লিখিতভাবে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
আরএটি/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।