ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাঙালির বিজয়ের অবিস্মরণীয় দিন 

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
বাঙালির বিজয়ের অবিস্মরণীয় দিন 

মহান বিজয় দিবস আজ। বিজয়ের ৪৬তম উদযাপনে দেশ। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে। 

ঢাকা: মহান বিজয় দিবস আজ। বিজয়ের ৪৬তম উদযাপনে দেশ।

দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে।  

এই দিনটি বাঙালি জাতির জীবনে একটি অবিস্মরণীয় দিন। পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ থাকবে যতোদিন, বাঙালি জাতি থাকবে ততোদিন। এই দিনটির গুরুত্ব ও সম্মান অক্ষুন্ন থাকবে।

বাঙালি জাতির ইতিহাস লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস, আত্মত্যাগের ইতিহাস। সেই ইতিহাসের পথ ধরেই বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খলা ভাঙতে ১৯৭১ সালে সশন্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে।  

দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামক একটি অসম রাষ্ট্রকে বাঙালির উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। শুরু হয় পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন। দিন পর দিন বাঙালির উপর অত্যাচার নির্যাতন ও শোষণ চালাতে থাকে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী।  

শাসন-শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালি একে একে গড়ে তোলে আন্দোলন-সংগ্রাম। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান, ৭০ এর নির্বাচনে বিজয় লাভের মধ্যদিয়ে বাঙালি চুড়ান্ত বিজয়ের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠে। এই সব আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ও নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বাঙালি অবিসংবাদিত নেতা হয়ে উঠেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

৫২’ ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির যে আন্দোলন শুরু হয় ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সেই আন্দোলন চুড়ান্ত রূপ নেয়। চুড়ান্ত পরিণতি মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে।  

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) লাখ লাখ মানুষের সমবেশে দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। তিনি ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।  

বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে প্রস্তুতি নিতে থাকে বাঙালি জাতি। ২৫ মার্চ কালো রাতে নিরস্ত্র বাঙালির উপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঝাপিয়ে পড়ে এবং গণহত্যা শুরু করে এই প্রেক্ষাপটে তাৎক্ষণিকভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। এর পর পরই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ।  

দীর্ঘ ৯ মাস ধরে চলে এই যুদ্ধ। পাক হানাদার বাহিনী বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নকে ভেঙে দিতে শুরু করে বর্বর গণহত্যা। আধুনিক অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অদম্য সাহস ও জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে এদেশের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, যুব, নারীসহ সকল শ্রেণি-পেশার সর্বস্তরের বাঙালি।  
এই সময় বাংলাদেশের মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায় প্রতিবেশ দেশ ভারত। অস্ত্র, সৈন্য, খাদ্য, আশ্রয়সহ সার্বিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হন। সর্বস্তরের মানুষ মহানমুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও এদেশের কিছু মানুষ জাতির কুলাঙ্গার সন্তান পাক হানাদার বাহিনীর পক্ষ নেয়। রাজাকার, আল বদর, আল সামস বাহিনী গঠন করে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে গণহত্যা ও ধ্বংস যজ্ঞে মেতে উঠে।  

পাক হানাদার বাহিনী ও তার দোষররা পরাজয়ের চ‍ূড়ান্ত পর্যায় বুঝতে পেরে বিজয়ের দুই দিন আগে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদেরকে বেছে বেছে ধরে নিয়ে হত্যা করে।  
অবশেষে বাঙালির দূর্বার প্রতিরোধের মুখে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এর মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ চুড়ান্ত বিজয় লাভ করে।  

এবারের বিজয় দিবস পালিত হচ্ছে এমন একটি প্রেক্ষাপটে যখন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদমুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে জাতি এবারের বিজয় দিবস পালন করছে।  

বাংলাদেশ সময়: ০২২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৬ 
এসকে/বিএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।