ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দলতন্ত্র থেকে সাংবাদিকতাকে মুক্তি দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ (ভিডিও)

বিশেষ সংবাদদাতা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৬
দলতন্ত্র থেকে সাংবাদিকতাকে মুক্তি দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ (ভিডিও) ছবি: জিএম মুজিবুর রহমান/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

দলতন্ত্র থেকে সাংবাদিকতাকে বসুন্ধরা গ্রুপ মুক্তি দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের স্রষ্টা, বরেণ্য ভাষা সংগ্রামী ও পথিকৃৎ সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী।

ঢাকা: দলতন্ত্র থেকে সাংবাদিকতাকে বসুন্ধরা গ্রুপ মুক্তি দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের স্রষ্টা, বরেণ্য ভাষা সংগ্রামী ও পথিকৃৎ সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী।
 
শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ প্রতিদিনের আজীবন সম্মাননায় অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।

 
 
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের মিডিয়া হাউজে বাংলাদেশ প্রতিদিনের অফিসের কনফারেন্স রুমে এ সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
 
বরেণ্য সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী বলেন, দেশের সাংবাদিকতা আজ নতুন মাত্রা পেয়েছে। সাংবাদিকদের মধ্যে এসেছে নতুন প্রেরণা। অতীতের সাংবাদিকতা চর্চার সঙ্গে আজকের সাংবাদিকতা চর্চায় এসেছে গুণগত পার্থক্য।
 
জীবন্ত কিংবদন্তির এই সাংবাদিক-কলাম লেখক তাকে দেওয়া আজীবন সম্মাননার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের ছয়টি সংবাদ মাধ্যম নিয়ে গঠিত মিডিয়া হাউজের প্রশংসা করে বলেন, এ গ্রুপের সবগুলো সংবাদপত্র তার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পেরেছে। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান দেশের সাংবাদিকতাকে দলতন্ত্র থেকে মুক্তি দিয়েছেন।
 
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বসুন্ধরা চেয়ারম্যানের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের জন্য তিনি এক সাম্রাজ্য গড়ে দিয়েছেন। কিন্তু তার অধিপতি হয়ে বসেননি। এটি একটি অসাধারণ বিষয়।

সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান।
 
শুরুতেই আবদুল গাফফার চৌধুরীকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান।
 
আজীবন সম্মাননা হিসাবে বসুন্ধরার চেয়ারম্যান আবদুল গাফফার চৌধুরীকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন। তাকে ক্রেস্ট ও চেক প্রদান করা হয়।
 
‘আমি গর্বিত, আনন্দিত’- বলেন গাফফার চৌধুরী।
 
সাংবাদিকতার শুরুর ইতিহাস তুলে ধরে গাফফার চৌধুরী বলেন, ‘সাহিত্য দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেছিলাম। তখন প্রকাশনা শিল্প ছিল অত্যন্ত দরিদ্র। তখনও যদি আজকের বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের মতো একজন প্রকাশক থাকতেন, তাহলে সাংবাদিক না হয়ে সাহিত্যিক হতাম’।
 
সাংবাদিকতার শুরুর দিনগুলোতে মাত্র পাঁচ টাকা নিয়েও বাড়ি যেতে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সে অবস্থা থেকে আজকে বসুন্ধরার এখানে বসে আছি, মনে হচ্ছে যেন নিউইয়র্ক টাইমসের এখানে বসে আছি। এই যে একটা উন্নয়ন দেখে গেলাম, সাংবাদিকতা করে যে টাকা পাওয়া যায়, কালের কণ্ঠ থেকে বেশি টাকা পাই। অন্যান্য কাগজে হস্তক্ষেপ হয়। যারা বলেন, সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক, তারা বলতেন, তারেক রহমান সম্পর্কে নামটা উল্লেখ করে কিছু বলবেন না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখতে গেছি, আমি উদ্ধৃতি দিয়েছি, তারপরও লাইনটা বাদ দেওয়া হয়েছে। ড. ইউনূস সম্পর্কে লিখতে গেছি- এটি লিখবেন না। এভাবে বহু বাধা অতিক্রম করে লিখেছি। কিন্তু কালের কণ্ঠে প্রথম দিন থেকে আমি লিখছি, আজ পর্যন্ত পেইনফুল হইনি যে, এই লেখাটা বাদ দেন। আমাকে এই স্বাধীনতা দিয়েছে’।
 
বাংলাদেশ প্রতিদিন বাংলাদেশে মনোপলি ব্যবধান অতিক্রম করে সর্বাধিক প্রচারে এসেছে উল্লেখ করে গর্ববোধ করেন গাফফার চৌধুরী।
 
বর্তমান সাংবাদিকতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা পড়ানো হয়। আমাদের সময় সাংবাদিক হলে মেয়েকেও কেউ বিয়ে দিতে চাইতেন না। সাংবাদিকতা করেন, বেতন ক’টাকা পান? তখন বেতনও ছিল কম’।
 
তখনকার সংবাদপত্রের মালিকরা দলীয় ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানিক ভাই আওয়ামী লীগের কথা বলতেন, মুসলিম লীগের কাগজ ছিল আজাদ।
 
বসুন্ধরা গ্রুপের সাংবাদিকতা দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে যাওয়ার মুক্তি দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি সংবাদপত্র নয়, একটি সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। এখানে টেলিভিশন, বেতার, ইংরেজি দৈনিক, অনলাইন- অসম্ভব ব্যাপার’।
 
‘একটি হাউজের মধ্যে বিরাট ব্যবস্থাপনা একমাত্র লন্ডনে দেখেছি, টাইমস গ্রুপ অব পাবলিকেশন। কিন্তু ব্যবস্থাপনায় আরও অনেক বেটার, ঢাকায় লন্ডনের গার্ডিয়ান, টাইমসের চেয়ে এ অফিস অনেক বেশি অথোরাইজড। কাগজের মান অনেক উন্নত’।

ভারতের আনন্দ বাজার, টাইমসের ব্যবস্থাপনা থেকে ঢাকার সাংবাদিকতা অগ্রসর বলেও প্রশংসা করেন গাফফার চৌধুরী।  
 
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম এবং ডেইলি সান এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আমির হোসেন।
 
সাংবাদিকতা, বাংলা সাহিত্য ও বাংলা ভাষায় বিশাল অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ প্রতিদিন এই প্রথিতযশা ব্যক্তিত্বকে সম্মান জানানো হলো।


** আবদুল গাফফার চৌধুরীকে আজীবন সম্মাননার অনুষ্ঠান শুরু (ভিডিও)

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৬
এমএমকে/এএসআর/এমআইএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।