ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মাদকসেবীদের আস্তানা বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের সমাধিস্থল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৬
মাদকসেবীদের আস্তানা বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের সমাধিস্থল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

যশোরের শার্শা উপজেলায় বীরশ্রেষ্ঠ শেখ ন‍ূর মোহাম্মদের সমাধিস্থল। পাশেই তার সহযোদ্ধা আরও ছয় মুক্তিযোদ্ধার সমাধি। নিয়মিত পরিচর্যা ও নজরদারীর অভাবে এই মুক্তিযোদ্ধার সমাধিস্থল এখন মাদকসেবীদের আস্তনায় পরিণত হয়েছে। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ফেনিসিডিলের বোতলসহ বিভিন্ নেশাজাতীয় দ্রব্য।

বেনাপোল (যশোর): যশোরের শার্শা উপজেলায় বীরশ্রেষ্ঠ শেখ ন‍ূর মোহাম্মদের সমাধিস্থল। পাশেই তার সহযোদ্ধা আরও ছয় মুক্তিযোদ্ধার সমাধি।

নিয়মিত পরিচর্যা ও নজরদারীর অভাবে এই মুক্তিযোদ্ধার সমাধিস্থল এখন মাদকসেবীদের আস্তনায় পরিণত হয়েছে। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ফেনিসিডিলের ন‍ূর মোহাম্মদের সমাধিস্থলের পাশেই তার ছয় সহযোদ্ধা বোতলসহ বিভিন্ নেশাজাতীয় দ্রব্য।

 

এ বিষয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও জনপ্রতিনিধিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য এ মহান দেশ প্রেমিকের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখাতে পারছিনা।

জানা যায়, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ যশোর ০৮ নম্বর সেক্টরের অধীনস্ত ৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নে (ইপিয়ারের সাবেক চতুর্থ উইং) বাঙালি সেনাদের নিয়ে গঠিত একটি কোম্পানিতে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যোগ দেন। ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় সেখানে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘর্ষ হয় সবচেয়ে বেশি। ৫ সেপ্টেম্বর শার্শা উপজেলার পাশ্ববর্তী গ্রাম গোয়ালহাটিতে পাকসেনাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন বীরশ্রেষ্ঠ শেখ নূর মোহাম্মদ। বুলেটে তার সমস্ত শরীর ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। বেয়নেট দিয়ে তার দু’টি চোখ উপড়ে ফেলেছিল হানাদার বাহিনী। পরে সহযোদ্ধারা তাকে উদ্ধার করে শার্শার কাশিপুর গ্রামে সমাহিত করেন। তার অসম্ভব সাহসিকতার কারণে দেশের শ্রেষ্ঠ সাত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তালিকাভুক্ত হন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরে মাত্র বিশেষ দু’দিনে উপজেলা প্রশাসন ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষ থেকে সমাধিস্থল পরিচর্যা করা হয়ে থাকে। পরে আর কাউকে সেখানে দেখা যায়না। এরপর মাদক ব্যবসায়ীরা সমাধিস্থলে প্রকাশ্যে মাদকের হাট বসায়। এসব মাদক ব্যবসায়ীরা ভয়ঙ্কর প্রকৃতির হওয়ায় এলাকাবাসী তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়না।

ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চার বছর আগে স্থানীয় সাংবাদিক জামাল হোসেন তাদের বিরুদ্ধে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। এরপর তাকে ‍কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

শার্শা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার নাসির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের গৌরবের বিষয় শার্শার মাটিতে একজন মুক্তিযোদ্ধার সমাধি রয়েছে। কিন্তু আমরা তাকে যথাযথ সম্মান দেখাতে পারছিনা, এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। সমাধিস্থলে মাদক সেবন এটা লজ্জাজনক বিষয়। জায়গাটি প্রাচীর দিয়ে সংরক্ষণের জন্য ইতোমধ্যে সংশিষ্ট দফতরে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোনো অগ্রগতি নেই।

ডিহী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হোসেন আলী বাংলানিউজকে বলেন, সমাধিতে মাদকের আড্ডা বসছে জেনেও কিছুই করার নেই। এখানকার মাদক সরবরাহকারীদের প্রধান হচ্ছে ১৮ মামলার আসামি ফেনসিডিল সম্রাট ফুলছদ্দি। তিনি বার বার আটক হয় আবার ছাড়া পেয়ে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যায়। আমরা এসবের প্রতিবাদ জানালে তারা উল্টো আমাদের ওপর চড়াও হয়। কিভাবে তারা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন জানি না।

ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শার্শা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, আমরা প্রায়ই ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করে থাকি। কিন্তু ওই এলাকা একেবারে ভারত সীমান্তবর্তী হওয়াতে অনেক সময় বিজিবির বাধায় অভিযান চালাতে পারিনা।

২৬ ব্যাটালিয়ন বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি যদি এমন হয় তা অবশ্যই খারাপ দেখায়। এ নিয়ে তিনি স্থানীয় বিজিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্রুত কথা বলবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৬
এজেডএইচ/এনটি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।