ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

১৮ ডিসেম্বর সৈয়দপুর হানাদার মুক্ত দিবস

উপজেলা করসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৬
১৮ ডিসেম্বর সৈয়দপুর হানাদার মুক্ত দিবস

১৮ ডিসেম্বর নীলফামারীর সৈয়দপুর হানাদার মুক্ত দিবস। এদিন ভারতের হীম কুমারী ক্যাম্প থেকে মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনী যৌথভাবে প্রবেশ করে সৈয়দপুর আক্রমণ করলে অবাঙ্গালি ও খান সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়।

সৈয়দপুর (নীলফামারী): ১৮ ডিসেম্বর নীলফামারীর সৈয়দপুর হানাদার মুক্ত দিবস। এদিন ভারতের হীম কুমারী ক্যাম্প থেকে মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনী যৌথভাবে প্রবেশ করে সৈয়দপুর আক্রমণ করলে অবাঙ্গালি ও খান সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়।

এ বিজয়ে মুক্তি পাগল হাজার হাজার মানুষ গ্রাম থেকে শহরে প্রবেশ করে। সেদিন মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম কাজী ওমর আলী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতৃত্বে শহরে আনন্দ মিছিল হয়।

মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে বাঙালি-বিহারীর মিশ্র শহর সৈয়দপুর উপজেলা সদরকে ‘নিউ বিহার’ হিসাবে ঘোষণা দেয় অবাঙ্গালিরা। অবাঙ্গালি অধ্যুষিত সৈয়দপুরে সেনানিবাস থাকার সুবাদে পাক সেনাদের সঙ্গে অবাঙ্গালিদের মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠে। পাকসেনাদের সহায়তায় একশ্রেণির অবাঙ্গালি সৈয়দপুর শহরে হত্যা, ধর্ষণ প্রচুর লুট চালায়। যার স্মৃতি সৈয়দপুরে এখনো বিদ্যমান।

৭ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স মাঠে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গোটা এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য ডা. জিকরুল হকের নেতৃত্বে গোটা সৈয়দপুরে সমস্ত বাঙ্গালি এক কাতারে সামিল হয়। সৈয়দপুর সেনানিবাসের প্ররোচণায় কতিপয় অবাঙ্গালি প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে গোটা শহরে তাণ্ডব চালায়।

২৩ মার্চ রাতে পাকসেনাদের প্ররোচণায় অবাঙ্গালিরা অবরুদ্ধ বাঙ্গালি পরিবারদের ওপর হামলা চালিয়ে লাখ লাখ টাকার সম্পদ লুটসহ নারী নির্যাতন, অগ্নি সংযোগ করে। গোলাহাট এলাকায় অবাঙ্গালিদের হাতে আহত হয় কয়েকশত মানুষ। অবরুদ্ধ বাঙ্গালিদের উদ্ধারের জন্য অস্ত্রহাতে এগিয়ে আসেন চিরিরবন্দর উপজেলার আলোকডিহি ইউপি চেয়ারম্যান মাহাতাব বেগ। অবাঙ্গালি ও পাক সেনাদের সঙ্গে প্রচণ্ড গোলাগুলির এক পর্যায়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে শহীদ হন। মূলত তিনিই সৈয়দপুরের প্রথম শহীদ।

২৪ মার্চ প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য ডা. জিকরুল হক, তুলসীরাম আগরওয়ালা, ডা.সামছুল হক, ডা.বদিউজ্জামান, ডা.ইয়াকুব আলী, যমুনা প্রসাদ কেডিয়া, রামেশ্বরলাল আগরওয়ালা, নারায়ন প্রসাদ, কমলা প্রসাদ প্রমুখকে সৈয়দপুর সেনানিবাসে হাত-পা বেঁধে রাখা হয় এবং ১২ এপ্রিল তাদের চোঁখমুখ বেঁধে রংপুর সেনানিবাসের উত্তর পার্শ্বে উপশহরে সারিবদ্ধভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার পদস্থ কর্মচারীদের বাড়ি থেকে ডেকে এনে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পাকসেনা ও তাদের  অবাঙ্গালি দোসরদের হাতে নিহত হয়েছে অসংখ্য রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, চাকুরে ও সাধারণ মানুষ।

১৯৭১ সালের ১৩ জুন মুক্তিযুদ্ধকালীন সৈয়দপুর শহরে সবচেয়ে বৃহৎ গণহত্যা সংঘঠিত হয়েছে। এদিন শহরের ৪৭৭ জন মাড়োয়ারী পরিবারের সদস্যকে ভারতের হলদিবাড়ি সীমান্তে পৌঁছে দেওয়ার নামে ট্রেনে তুলে রেলওয়ে কারখানার উত্তর প্রান্তে-সবাইকে  নির্মমভাবে হত্যা করে লুটে নেওয়া হয় তাদের সর্বস্ব। শিশুদের বায়োনেট দিয়ে খুচিয়ে হত্যা করা হয়।

স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও সৈয়দপুরে এখনো স্মৃতিসৌধ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ হয়নি। গেল বছর এই দুটোর কাজ শুরু হলেও অদ্যাবধি শেষ হয়নি। ফলে প্রজন্ম-৭১’র তৈরি স্মৃতি অম্লানে সব আনুষ্ঠানিকতা সারছেন।

দিবসটি পালনে উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড র‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। শহীদদের স্মরণে কোরআনখানি ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে প্রজন্ম-৭১।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৬
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।