ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ময়মনসিংহে শিক্ষকদের কোচিং-প্রাইভেট বাণিজ্য চলছেই

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৬
ময়মনসিংহে শিক্ষকদের কোচিং-প্রাইভেট বাণিজ্য চলছেই ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নগরীর বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাত্র ৫০ গজ দূরে আসন্ন ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক কোচিং করাচ্ছেন বিদ্যালয়টির ইসলাম ধর্মের শিক্ষক মঞ্জুরুল হক মঞ্জু।

ময়মনসিংহ: নগরীর বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাত্র ৫০ গজ দূরে আসন্ন ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক কোচিং করাচ্ছেন বিদ্যালয়টির ইসলাম ধর্মের শিক্ষক মঞ্জুরুল হক মঞ্জু।

রিফেক্স কোচিং সেন্টারের পঞ্চম তলায় প্রাইভেটের নামে প্রতিদিন দু’শিফটে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীকে কোচিং করাচ্ছেন তিনি।

নিজে ইসলাম ধর্মের শিক্ষক হলেও ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন বাংলা, ইংরেজি ও গণিত।

সূত্র মতে, ভর্তি কোচিং করাতে শিক্ষার্থীপ্রতি শিক্ষক মঞ্জু নিচ্ছেন ১ হাজার ২শ’ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। আবার অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার ফরম পূরণ করিয়ে একসঙ্গে পরীক্ষার হলে আসন ফেলার কথা বলে অভিভাবকদের কাছ থেকে নিচ্ছেন ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা।


বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাছিমা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল। তদন্ত কমিটির রিপোর্টেও কোচিং বাণিজ্যে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। এবারও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১২ সালের আগস্টে ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা’ জারি করে। নীতিমালা অনুসারে, সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসার কোনো শিক্ষক তার নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে বা প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না।
ময়মনসিংহে শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য

এমনকি শিক্ষকেরা বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টারেও পড়াতে পারবেন না। তবে দিনে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে নিজ বাসায় পড়াতে পারবেন।

তবে এজন্য প্রতি বিষয়ে শিক্ষার্থী প্রতি সর্বোচ্চ ১৮০ টাকা নিতে পারবেন। একই সঙ্গে অবশ্যই প্রতিষ্ঠান প্রধানকে শিক্ষার্থীদের নাম, রোল ও শ্রেণি উল্লেখ করে তালিকা পাঠাতে হবে।

এ নীতিমালা অমান্য করেই নগরীর সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষক কোচিং ও প্রাইভেট পড়ানোর বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছেন।

সরকারি ল্যাবরেটরি বিদ্যালয়ের শিক্ষক আমিনুল ইসলাম একই কোচিং সেন্টারের চতুর্থ তলার একটি কক্ষে গণিত, বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে কোচিং করাচ্ছেন। জিলা স্কুল ও বিদ্যাময়ী বিদ্যালয়েও চান্স পাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তিনিও।

বিদ্যাময়ী বিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক চম্পা রাণী জানান, মেয়েকে ইসলাম ধর্মের শিক্ষকের কাছে ব্যাচে আর অন্য বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে ভর্তি কোচিং করাচ্ছেন তিনি। এতে কয়েক হাজার টাকা গুণতে হচ্ছে।

এদিকে ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের চিত্রাঙ্কনে প্রাইভেট পড়ান শিক্ষক বুলবুল। তার কাছে প্রাইভেট না পড়লে কম নম্বর দেওয়ার অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। হাতে-কলমে চিত্রাঙ্কন না শিখিয়ে ফটোকপি ধরিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীপ্রতি ১ থেকে দেড় হাজার টাকা নিচ্ছেন- এমন অভিযোগও তাদের।

বিদ্যাময়ী বিদ্যালয়ের দিবা শাখার শিক্ষক আশরাফুল আলমও নিজের বাসায় বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়ান। তবে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি বাসায় মাত্র কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পড়াই’।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) উপ-পরিচালক এ এইচ এম আব্দুল খালেক বাংলানিউজকে জানান, কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটিও করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০১ ঘন্টা, ডিসেম্বর ২০ ২০১৬
এমএএএম/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।