ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ছবি তুলছেন, কম্বল কই?

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৬
ছবি তুলছেন, কম্বল কই? পাতলা একটি কম্বল গায়ে দিয়ে বটতলায় আধমোড়া হয়ে বসে আছেন মধ্যবয়সী এক নারী

পাতলা একটি কম্বল গায়ে দিয়ে বটতলায় আধমোড়া হয়ে বসে আছেন মধ্যবয়সী এক নারী। শাড়ি দিয়ে মাথা ঢাকা। পাশে আরেকজন আর একটি কম্বল অর্ধেক গায়ে জড়িয়ে বাকিটুকুতে ঢেকে দিয়েছেন শিশুর গা।
 

ঢাকা: পাতলা একটি কম্বল গায়ে দিয়ে বটতলায় আধমোড়া হয়ে বসে আছেন মধ্যবয়সী এক নারী। শাড়ি দিয়ে মাথা ঢাকা।

পাশে আরেকজন আর একটি কম্বল অর্ধেক গায়ে জড়িয়ে বাকিটুকুতে ঢেকে দিয়েছেন শিশুর গা।
 
ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক শব্দে মধ্যবয়সী ওই নারী বললেন, ‘ছবি তুলছেন। কম্বল কই? শীত তো’।
পাশের জন বলে উঠলেন, ‘ছবি তুললেই কম্বল আসবে। বেশি বেশি তোলেন, কম্বল দরকার। ’
 
মধ্যবয়সী ওই নারীর নাম তানিয়া। কথা বলে জানা গেল এসেছেন তিনি জামালপুর থেকে; আজই।
 
স্বামী মারা গেছেন, এক ছেলে বিয়ে করে সংসারী। কিন্তু একটি দুর্ঘটনার পর কেটে ফেলতে হেয়েছে ছেলের এক পা। মেয়ের বিয়ের সময় হয়েছে। বাড়িবাড়ি কাজ করতেন, কিন্তু এখন কাজের মৌসুম নয়, তাই এসেছেন ঢাকায়।
 
ঢাকায় এসে সন্ধ্যায় ঠাই নিয়েছেন শিক্ষাভবন এলাকায় হাইকোর্টের সামনে বটতলায়। এর আগেও ঢাকায় এসে বাসাবাড়িতে কাজ করেছেন তানিয়া। সন্ধ্যায় কম্বল বিতরণ করতে আসা লোকজনের কাছ থেকে পেয়েছেন একটি। সেই কম্বলটি গায়ে জড়িয়েছেন তানিয়া, কিন্তু কাটছে না শীত।
 
ততক্ষণে ক্যামেরায় ছবি উঠল তানিয়ার, সঙ্গের আরও কয়েকজনের ছবি ক্যামেরাবন্দি হলো।  
 
এবার তানিয়ার প্রশ্ন, ‘কম্বল কবে পাব? কাল পাব তো? কখন আসবে?’
 
তানিয়ার পাশের জন আয়শা। এসেছেন নাটোর থেকে। হাইকোর্ট মাজারে ঝাড়ু দিয়ে দিন চলে তার। শীতে এবার একটিমাত্র কম্বল পেয়েছেন। কম্বল দরকার তারও।
 
আয়শা বললেন, ‘দ্যাখেন না, মেয়েকে নিয়ে কীভাবে এক কম্বল নিয়ে আছি। শীত বাড়ছে, এখন কম্বল দরকার। ’  
 
তানিয়া ও আয়েশার মত ছিন্নমূল মানুষ হাইকোর্ট এলাকা ও জাতীয় ঈদগাহের পাশের ফুটপাতে থাকেন নিয়মিত। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় কম্বল আসে না। তাই তানিয়ারা কাঁপছেন শীতে। এদের বেশিরভাগের গায়েই নেই ভারি কাপড়।
 একটি কম্বল গায়ে দিয়ে কষ্টে রাত কাটাচ্ছেন ছিন্নমূল মানুষেরা
অন্তত একশ’ ছিন্নমূল মানুষের নিয়মিত রাত কাটে বটতলায়। রাত সোয়া দুইটার দিকে ঘুমিয়ে পড়েছেন বেশির ভাগ, জেগে আছেন মাত্র কয়েকজন। এদের সবারই দরকার কেবল কম্বল।
 
‘আমরা আর কিছু চাই না, শুধু কম্বল চাই’—শীতে কাঁপতে কাঁপতে সমস্বরে বললেন তানিয়া ও আয়শা।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৫০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬
এমআইএইচ/এনটি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।