মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) বিকেল সুন্দরগঞ্জের সর্বানন্দ ইউনিয়নের শাহবাজ (মাস্টারপাড়া) গ্রামের বাড়িতে সাংবাদিকদের এ কথা বলছিলেন আততায়ীর গুলিতে নিহত গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের স্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগ নেত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি।
এসময় স্মৃতি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ১৯৯৮ সালের ২৬ জুন সুন্দরগঞ্জ ডি ডাব্লি¬উ ডিগ্রি কলেজ মাঠে জামায়াত-শিবির আয়োজিত জনসভায় গোলাম আজমের বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল।
‘সেই থেকে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারা লিটনকে হত্যার টার্গেট করে রেখেছিল। সেসময় তার গুলিতে আহত জামায়াতের ফতেখাঁ গ্রামের ক্যাডার হেফজসহ আরও দুর্ধর্ষ জামায়াত ক্যাডার লিটনকে মোবাইলে ম্যাসেজ পাঠিয়ে ও ফোন করে দীর্ঘদিন থেকেই হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। ’
লিটনকে ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় গুলি করে এই নির্মম হত্যা সে ঘটনারই জের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই গোলাম আজমের জামায়াত-শিবিরের খুনিরাই আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আমি এ হত্যার বিচার চাই।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্মৃতি বলেন, ২০১৫ সালের ২ অক্টোবর ভোরে শিশু শাহাদত হোসেন সৌরভকে গুলি ছোড়ার একটি পরিকল্পিত মিথ্যা ঘটনা কেন্দ্র করে এমপি লিটনের লাইসেন্স করা রিভলবার ও শর্টগান জব্দ করা হয়। খুনি জামায়াত-শিবির চক্র জানতো তার বাড়িতে তাদের প্রতিরোধ করার মতো কোনো অস্ত্র নেই। সেই সুযোগে তারা বাড়িতে এসে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করতে সাহস পায়।
প্রতিদিন বিকেলে অনেক নেতাকর্মী বাড়িতে থাকতো। তার বাড়িতে পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা ছিল রাতে। সাধারণত সন্ধ্যার আগেই নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে লিটন তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে বামনডাঙ্গা রেল স্টেশন সংলগ্ন অফিসে রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত থাকেন। কিন্তু কেন জানি না সেদিন কোনো নেতাকর্মী তার বাড়িতে ছিল না। আক্ষেপের সুরে বলেন স্মৃতি।
ঘটনার দিন বাড়িতে তার ভাই সৈয়দ বেদারুল আহসান বেতার, ভাগ্নি শিমু, চাচি স্মৃতি খাতুন ও বাড়ির কেয়ার টেকার ইসমাইল, ইউসুফ ও সৌমিত্র ছিলেন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সুন্দরগঞ্জে দলীয় কোনো কোন্দল নেই। লিটন এমপি হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। তবে তার একমাত্র শত্রু ছিল স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির চক্র। যাকে তিনি আওয়ামী লীগের আদর্শে অনুপ্রাণিত রাজনীতিতে কোণঠাসা করে ফেলেছিলেন। যার প্রতিশোধ তারা এই ত্যাগী নেতার রক্ত ঝরিয়ে নিয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এমপির শ্যালক সৈয়দ বেদারুল ইসলাম বেতারও সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন। তিনি বলেন, যে দু’জন খুনি লিটনের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ জানিয়ে তার সঙ্গে ঘরে ঢোকেন তারা গিয়ে সামনের সোফায় বসেন। খুনি দু’জনার মুখ খোলা থাকলেও মাথা ও কান মাপলারে ঢাকা ছিল। তাদের পরনে ছিল কালো জ্যাকেট ও কালো প্যান্ট।
খুনিরা বহিরাগত ছিল না, কারণ তারা গাইবান্ধা এলাকার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছিল। আহত লিটনকে নিয়ে যখন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছিলাম তখন তার শেষ দুটো কথা ছিল, তিনি নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না। তার অক্সিজেনের দরকার। এরপর তিনি চিৎকার করে স্ত্রী স্মৃতিকে বলছিলেন, স্মৃতি হাসপাতাল কতদূর।
বাংলাদেশ সময়: ২২৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৬
এএ