সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষে ইয়াছিনকে তার মায়ের কোলেই তুলে দিল পুলিশ।
লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী থানা পুলিশ বৃহস্পতিবার (০৫ জানুয়ারি) দিন গত রাত নয়টার দিকে শিশু ইয়াছিনকে তার মায়ের কোলে তুলে দেয়।
উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের শীববাড়ি এলাকার কৃষ্ণ-সন্ধ্যা দম্পত্তির ঘরেই কেটেছে ইয়াছিনের গত তিনটি বছর। সেখানে মাতৃস্নেহেই বড় হয়েছে ইয়াছিন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা বাংলানিউজকে জানান, তিন বছর আগে কৃষ্ণ ও সন্ধ্যা রানী দম্পত্তি চাকুরীর সুবাদে ঢাকার কেরানিগঞ্জ কালীগঞ্জ এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। তাদের পাশের বাসায় ভাড়া থাকতেন মামুন-সালমা বেগম দম্পত্তি। মামুন প্রবাসী হওয়ায় সালমা একাই থাকতেন ওই বাসায়।
সালমার গর্ভে জন্ম নেয় ফুটফুটে এক ছেলে সন্তান, নাম দেওয়া হয় ইয়াছিন আলী। জন্মের তিন মাস পরেই ইয়াছিনকে বাসায় রেখে পরকীয়ার টানে ঘর ছাড়েন সালমা।
ধর্মীয় বাধা ভুলে তখন এই সন্ধ্যা রাণীই কোলে তুলে নেন শিশু ইয়াছিনকে। তার মাতৃস্নেহে বড় হয় ইয়াছিন। দীর্ঘ দুই বছরেও খোঁজ ছিলো না সালমার।
এরই মধ্যে শিশু ইয়াছিনকে সাথে নিয়ে লালমনিরহাটে গ্রামের বাড়ি আসেন সন্ধ্যা রানী। নিজের অন্য দুই সন্তানের মতই মাতৃস্নেহে বড় করতে থাকে ইয়াছিনকে। ইয়াছিনও সন্ধ্যা-কৃষ্ণ দম্পত্তিকেই বাবা-মা বলেই জানে।
নয় মাস আগে ইয়াছিনের খোঁজে আদিতমারীর শীববাড়ি এলাকায় সন্ধ্যা রানীর গ্রামের বাড়ি আসেন সালমা। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি-বর্গের সিদ্ধান্তে ইয়াছিনকে নিয়ে যান ঢাকায়। কিন্তু সন্ধ্যা রানীর মাতৃত্বের টানে ঢাকায় বেশী দিন থাকা হয়নি ইয়াছিনের। বাধ্য হয়েই সালমা পুণরায় ইয়াছিনকে সন্ধ্যা রানীর ঘরেই রেখে যান।
সেভাবেই কেটে যায় ৯টি মাস। কিন্তু দু’দিন আগে আবারও ইয়াছিনের জন্য সন্ধ্যা রানীর ঘরে আসেন সালমা। দাবি, ইয়াছিনকে নিয়ে যাবেন। কিন্তু এবার গ্রামবাসীও অনড়। তারা ইয়াছিনকে দিতে চান না। অবশেষে আইনের আশ্রয় নেন সালমা। ইয়াছিনকে পেতে লালমনিরহাট জজ কোর্টের বার কাউন্সিলকে অবগত করেন তিনি।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উভয় পক্ষকে নিয়ে আদিতমারী থানায় বসেন বার কাউন্সিলের প্রতিনিধি দল। আইনের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ইয়াছিনকে তুলে দেওয়া হয় সালমার কোলে।
আইন ইয়াছিনকে সালমার কোলে তুলে দিলেও সন্ধ্যা রানীকে ছাড়তে নারাজ শিশু ইয়াছিন। ইয়াছিনের কান্নায় ভারি হয়ে উঠে পুরো থানা চত্ত্বর। শিশু ইয়াছিন ও সন্ধ্যা রানীর কান্নায় থানায় কর্মরত সকল পুলিশ সদস্যসহ আগুন্তুকদের মর্মাহত করে। তৈরি হয় হৃদয় বিদারক দৃশ্যের।
পরে পুলিশের তত্ত্বাবধানে সালমা ও ইয়াসিনকে বাসে তুলে দেওয়া হয়।
এ যেন মাতৃত্বের বিদায়। ইয়াছিনকে বিদায় জানিয়ে বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন সন্ধ্যা রানী। পরিবারের সদস্যরাও কান্নাকাটি করতে থাকেন।
লালমনিরহাট বার কাউন্সিলের প্রতিনিধি দলের সদস্য অ্যাডভোকেট খোকন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, সন্ধ্যা রানী ইয়াছিনের পালক মা ঠিকই, তবে সালমা তার প্রকৃত মা। তাই আইন সম্মতভাবে ইয়াছিনকে সালমার কোলে তুলে দেওয়া হয়েছে।
আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হরেশ্বর রায় বাংলানিউজকে বলেন, আমরাও তো মানুষ। আমাদেরও পিতৃত্ব-মাতৃত্ববোধ আছে। তবে আইনকে শ্রদ্ধা জানাতেই শিশুটিকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে বাসে তুলে দিতে হলো।
বাংলাদেশ সময় ০১০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৬
এমআইএইচ/এমএমকে