মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় এ দৃশ্য দেখা গেছে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত রাজধানীর গুলশান এক নম্বরের ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেটের সামনে। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সময় বিভিন্ন দোকান থেকে কোনোমতে বের করে আনা পণ্যগুলো ফুটপাতে পানির দরে বিক্রি করে দিচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা।
কয়েকদিন আগেও যাদের ছিল কাঁচঘেরা ও আলোকসজ্জিত দোকান, সর্বস্ব হারিয়ে তারাই এখন ফুটপাতের ব্যবসায়ী।
সরেজমিনে ডিএনসিসি মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, মার্কেটের নিচের খালি জায়গায় আগুনের লেলিহান শিখা থেকে রক্ষা পাওয়া বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। প্রত্যেকটি পণ্য নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে। লাভ তো দূরের কথা, এখন চালান ওঠাতেই গলদঘর্ম হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
পণ্য কিনতে উপচেপড়া ভিড় মার্কেটের সামনে। বিক্রি হচ্ছে শিশুদের খেলনা, জুতা, পোশাক ও ডায়াপার, বড়দের জুতা, কসমেটিকস, রান্নাঘরের বিভিন্ন পণ্য, বেডিং, কম্বল ও শীতের কাপড়সহ আরো বিভিন্ন ধরনের পণ্য।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী আবু তাহের বাংলানিউজকে জানান, মনি এন্টারপ্রাইজ নামে ডিএনসিসি মার্কেটে একটি দোকান ছিল তার। দোকানে শিশুদের পোশাক, জুতা, খেলনাসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিক্রি করা হতো। আগুনে লাগার খবরে পেয়ে তাড়াহুড়ো করে কিছু পণ্য সরিয়ে আনতে পেরেছিলেন তিনি। এখন সেগুলোই ফুটপাতে বিক্রি করছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের তো সব শেষ হয়ে গেছে। আগুন পথের ফকির বানাইয়া দিছে। এখন এই গুলান বিক্রি করে যদি কিছু টাকা পাওয়া যায়, সে চেষ্টাই করছি’।
১২শ’ টাকার জুতা ১০০ টাকায় বিক্রি করছেন বলেও জানান তিনি।
ডিএনসিসি মার্কেটের নূর বেডিং স্টোরের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম ও মনির মিয়া জানান, বেডিংয়ের দু‘টি দোকান ছিল তাদের। আগুনে প্রায় ৮০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আগুনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া কিছু পণ্য ছিল, সেগুলোই এখন বিক্রি করছেন তারা।
তারা বলেন, ‘কাঁচে ঘেরা ঘর থেকে এখন ফুটপাতের ব্যবসায়ী হয়েছি। কোটি টাকার জিনিস এখন হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। সবই কপাল’।
মার্কেটে কসমেটিকস ও জুতা কিনতে আসা মেহেরুন নেসা ও মালেক মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, ‘পণ্যের মান ভালো, দামও অনেক কম। তাই যা কিছু প্রয়োজন সবই কেনার চেষ্টা করছি’।
দামি পণ্য কম দামে কিনতে পেরে খুশি ওই দম্পতি।
পাকা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহ সভাপতি তালাল রেজভি বাংলানিউজকে জানান, মার্কেটের প্রায় ৫০টির মতো দোকানের সংস্কার কাজ চলছে। কাজ শেষ হলেই আনুষ্ঠানিকভাবে দোকানগুলো খোলা হবে।
তিনি বলেন, ‘মেয়র আনিসুল হক আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। তিনি কথা দিয়েছেন, আমাদের পাশে থাকবেন’।
গত ০২ জানুয়ারি দিবাগত রাত আড়াইটায় ডিএনসিসি মার্কেটে আগুন লাগে। পুড়ে যায় গুলশান কাঁচা ও পাকা মার্কেটের ৬ শতাধিক দোকান।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তাদের তুলে দিতে ষড়যন্ত্র করে আগুন লাগানো হয়েছে। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা কর্নেল মোশাররফ হোসেনকে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনার পরদিন থেকেই এ কমিটি তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৭
আরএটি/এএসআর