নিম্নমান ও নম্বরবিহীন এসব ইটের খোয়া ব্যবহার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্স কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন চোখের সামনে ভেস্তে যাচ্ছে এলাকাবাসীর।
খুলনা মহানগরীর মোক্তার হোসেন সড়কটির সংস্কার ও পুননির্মাণ কাজের মান নিয়ে এমন অভিযোগ করেন ওই এলাকার বাসিন্দা বেল্লাল হোসেন।
মহানগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের লবণচরা এলাকার এ সড়কটিতে সরেজমিনে গেলে বেল্লালের মতো অনেকেই অভিযোগ করেন, রাস্তা তৈরির নামে এখানে চলছে পুকুর চুরি।
তারা জানান, সড়কটি নিম্নমানের জিনিস দিয়ে তৈরি করায় অনেক বার বাধা দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কাজ। করা হয়েছে মানববন্ধন। অভিযোগ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
আব্দুল্লাহ নামের এক পথচারী জানান, দীর্ঘদিন ধরে দেখছি রাস্তার কাজ চলছে অত্যন্ত ঢিলেঢালাভাবে। তারপর আবার দেওয়া হচ্ছে নিম্নমানের খোয়া, যা চুলার মাটির চেয়েও নরম। পা দিয়ে চাপ দিলেই ভেঙে যায়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দুর্দশা দূর করতে রাস্তা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু ঠিকাদারের চুরির কারণে আমরা এর সুফল থেকে বঞ্চিত হবো।
তিনি অভিযোগ করেন, নম্বরবিহীন ইটের খোয়া দিয়ে রাস্তার কাজ চলছে। পিচের পরিমাণও কম। এ রাস্তা বেশি দিন টিকবে কীভাবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটির পাশ দিয়ে পানি নামার জন্য উভয় পাশে ড্রেন থাকার কথা থাকলেও অনেক স্থানে তা নেই। তিনরাস্তার মাঝখানে বৈদ্যুতিক খুঁটি। নব নির্মিত সড়কে নির্দিষ্ট পরিমাণে সিমেন্ট, বালু ও খোয়ার মিশ্রণ দেওয়া হয়নি। বরং সড়কটির পুরনো ইট নতুন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এলাকার সচেতন মানুষের দাবি, দ্রুত তদন্ত করে শিডিউল অনুসারে উপকরণ দিয়ে যেন রাস্তার কাজ হয়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) সূত্রে জানা যায়, নগর অঞ্চল উন্নয়ন (সিআরডিবি) প্রকল্পের আওতায় মোক্তার হোসেন সড়ক তৈরি হচ্ছে। যার ১১টি লেন রয়েছে। যার দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার। জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। কাজটি করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্স। ২০১৫ সালের মার্স মাসে কাজ শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে।
জানা যায়, মোক্তার হোসেন সড়কটির সংস্কারের কাজ কয়েক দফা বন্ধ করে দিয়েছিলেন স্থানীয়রা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীকে মারধর করে যন্ত্রপাতি পানিতে ফেলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে।
শ্রমিক দিয়ে রাস্তার কাজ করানোর সময় নরম খোয়ার উপর দিয়ে পথচারী হেঁটে গেলে ভেঙে যাওয়ার দৃশ্য দেখালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী রুবেল মোল্লা বলেন, ওগুলো এই রাস্তারই পুরনো ইট। আমরা টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছি। এই ইট দিয়ে রাস্তা করবো তার চুক্তি করা ছিল।
মাহবুব ব্রাদার্সের এই সড়ক নির্মাণের তত্ত্বাবধায়ক মনিরুজ্জামান কচি বাংলানিউজকে বলেন, এ রাস্তার কাজ করতে অনেক বাধা এসেছে। তারপরও ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ।
তিনি জানান, কাজের মান নিয়ে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা। এ সড়কে যেসব ইট পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে তা খুবই ভালো মানের।
ভালো কাজ করতে গিয়ে প্রায় ১ কোটি টাকা ক্ষতি হবে বলে দাবি করেন তিনি।
একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, সড়কটির অনেক নির্মাণ সামগ্রী অনেকে রাতে চুরি করে নিয়ে গেছে।
সিআরডিবি প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী ছয়ফুদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, সড়ক নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের কিছুই দেয়নি। যা দিয়েছে তা সবই ঠিক আছে।
তিনি জানান, রাস্তার দু’পাশে ড্রেন করতে এলাকার অনেক জয়গার মালিক জায়গা দেয়নি। যে কারণে করা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ মালিকদের জায়গা নষ্ট না করে মাটির নিচ থেকে পাইপ দেওয়ার কথা বলা হলেও তারা রাজি হননি।
নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়নি, কবে শেষ হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরে মেয়াদ শেষ হলেও এলাকার মানুষের অসহযোগিতার কারণে কাজ শেষ করা যায়নি। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৬
এমআরএম/আরআইএস/এএ