কে জানতো, এটাই হবে তার শেষ ইচ্ছাপূরণ।
২০১৫ সালের ০২ ফেব্রুয়ারির দিনগত রাত।
মাইশার মা মাফরুহা বেগম তখন দিশেহারা। চোখের সামনেই আগুনে পুড়ে মারা যেতে দেখেন স্বামী আর মেয়েকে।
সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনও তাড়িয়ে বেড়ায় মাফরুহাকে। ঘুমোতে পারেন না। ঘোরের মধ্যেও কেবল শুনতে পান মাইশার আতর্নাদ।
সোমবার (১৬ জানুয়ারি) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় খণ্ডচিত্র প্রদর্শনীতে এসেছিলেন মাফরুহা। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-পরিষদ খণ্ডচিত্র প্রদর্শনীটির আয়োজন করে।
সেখানেই মাফরুহা বেগম সেদিনের ঘটনার বর্ণনা করতে এসেছিলেন।
পেট্রোলবোমার আগুনে স্বামী-সন্তানহারা মাফরুহার আহাজারিতে মুহূর্তেই ভারি হয়ে ওঠে চিত্রশালার পরিবেশ। এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ অন্য অতিথিদের চোখও ভিজে ওঠে।
মাফরুহা বলতে থাকেন, ‘যে আগুন দেখেছি সেদিন, যতোদিন বেঁচে থাকবো, সে আগুন বুকের মধ্যে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকবে। এ জ্বালা নিয়েই বেঁচে থাকবো’।
‘কি অপরাধ ছিল আমার স্বামী, সন্তানের?....আমি ঘুমাতে পারি না। সারারাত মাইশার সে আর্তনাদ আমার কানে বাজে- মা আমাকে বাঁচাও, মা আমাকে বাঁচাও। আমি তো ওকে বাঁচাতে পারলাম না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন, যারা আমাদের এই নির্মম, নির্দয় অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে, তাদের যেন বিচার করেন। একমাত্র ছেলে মাথিনকে বুকে আগলে বেঁচে আছি’।
কান্না ভেজা কণ্ঠে তিনি বলতে থাকেন, ‘আমি তো এভাবে মাইশার মা হয়ে বেঁচে থাকতে চাইনি। মাইশার ইচ্ছা ছিল, ও বড় হয়ে ডাক্তার হবে। আমি তো ডাক্তার মাইশার মা হয়ে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম। মৃত মাইশার মা হয়ে বেঁচে থাকতে চাইনি। হে আল্লাহ.... যারা জীবন্ত মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে, তুমি তাদের বিচার করো’।
‘...দল বুঝি না, রাজনীতি বুঝি না, কেন আমরা সাধারণ মানুষ রাজনীতির শিকার হবো?’
মাইশা যশোর পুলিশ লাইন স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলেন।
২০১৫ সালের ০১ ফেব্রুয়ারি থেকে ০৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হরতালের ডাক দেয় বিএনপি। সে কর্মসূচি চলাকালে ২ ফেব্রুয়ারি রাতে মাইশাদের বাসে পেট্রোলবোমা ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। এতে মাইশা ও তার বাবাসহ মোট ৭ যাত্রী নিহত হন।
প্রদর্শনীতে মাফরুহা ছাড়াও পেট্রোলবোমায় ক্ষতিগ্রস্ত ছয়জন তাদের ওপর অন্যায় আচরণের শাস্তির দাবি জানান। তাদের সকলকেই আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে প্রদর্শনীতে নির্বাচন পর্যবেক্ষক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৬
ইইউডি/আরআর/এএসআর