সময় স্বল্পতার অজুহাতে প্রতিযোগিতা করে রিকশা, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন ছুটছে সেখান দিয়ে। ‘ট্রেন আসছে’ বলে চিৎকার-চেচামেচি করছেন কেউ কেউ।
হাত দিয়ে ইশারা করে থামিয়ে দেওয়া হলো যানবাহন। গত শনিবারের (১৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার এ ঘটনা নিত্যদিনেরই।
অননুমোদিত এ লেভেল ক্রসিংয়ে সতর্কবার্তা সম্বলিত কোনো সাইনবোর্ড নেই। গেটম্যানও না থাকায় পথচারী ও বিভিন্ন যানবাহন নিজ দায়িত্বেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
অরক্ষিত রেলক্রসিংগুলো নিয়মিত পরিদর্শনের নিয়ম থাকলেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ রয়েছে। ফলে যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
এটির মতোই মৃত্যুফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে ময়মনসিংহের বিভিন্ন রেলক্রসিং। নগরীর ভেতরে দু’একটি ক্রসিংয়ে ডিভাইস পদ্ধতির সিগন্যাল সিস্টেম থাকলেও বেশিরভাগ ক্রসিং আধুনিক পদ্ধতির আওতায় আসেনি।
স্থানীয় রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ-ঢাকা, ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা-মোহনগঞ্জ, ময়মনসিংহ-জামালপুর রুটের বিদ্যাগঞ্জ ও ময়মনসিংহ-ভৈরব রেলপথের মোট ২০২ কিলোমিটার ময়মনসিংহ রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের অন্তর্ভুক্ত।
এসব রুটে রেলের মোট লেভেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা ২০৫টি। যার মধ্যে অনুমোদিত লেভেল ক্রসিং ৬৫টি, অননুমোদিত বাকি ১৪০টি। অনুমোদিত ৬৫ ক্রসিংয়ের মধ্যে আবার গেটম্যান ও গেটবেরিয়ার আছে ৪৮টিতে।
দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ১৫৮টি ক্রসিংয়ে নেই কোনো গেটম্যান ও প্রতিবন্ধক। ফলে এসব ক্রসিং সব সময় খোলা থাকে। দেখার মতোও নেই কেউই।
অননুমোদিত ক্রসিংয়ের বেশিরভাগই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি), সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ও বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নিজেদের প্রয়োজনে তৈরি করেছে এসব অবৈধ ক্রসিং- এ অভিযোগ করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
সূত্র মতে, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই ঝুঁকিপূর্ণ এসব রেলক্রসিং তৈরি করা হয়েছে। যারা নিজেদের উদ্যোগে এ কাজ করছেন, তাদেরকেই গেট নির্মাণ এবং কমপক্ষে তিনজন নিরাপত্তাকর্মীর খরচ বহন করার নিয়ম রয়েছে।
অথচ রেললাইনের ওপর দিয়ে সরকারের অন্য বিভিন্ন বিভাগ থেকে রাস্তা করা হলেও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কোনো উদ্যোগ নেই। এমনকি এসব রেলক্রসিংয়ে প্রাণহানি ঘটলেও কোনো দায় নেয় না রেল কর্তৃপক্ষ।
ময়মনসিংহ রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজ জান্নাত বাংলানিউজকে জানান, ‘অননুমোদিত রেলক্রসিংগুলোর বিষয়ে কিছুই করার নেই। এসব ক্রসিংগুলোতে আমরা চলাচলের কোনো অনুমতি দেইনি’।
‘এসব রেলক্রসিং বন্ধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ সেকশনে ঝুঁকিপূর্ণ ৫০টি লেভেল ক্রসিংয়ে গেট নির্মাণের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে গেটবেরিয়ারসহ গেটম্যান পদায়ন করা হবে’।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলের একজন কর্মকর্তা বলেন, রেলের রীতি অনুসারে গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিংগুলোতে ৬ জন করে নিরাপত্তা প্রহরীকে দিন-রাত দায়িত্ব পালন করতে হয়। ছোট ক্রসিংগুলোতে কমপক্ষে একজন করে নিরাপত্তা প্রহরীর দায়িত্ব পালনের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু জনবলের অভাবে বাস্তবে এটি সম্ভব হচ্ছে না।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট হরিগোপাল বাংলানিউজকে বলেন, ‘ময়মনসিংহ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন ১০টি আন্ত:নগর, ৬টি কমিউটার ট্রেন, মালবাহী ট্রেনসহ বেশ কয়েকটি ট্রেন আসা-যাওয়া করে। আমার অধীনে ৫টি রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান ও গেটবেরিয়ার আছে। বাকিগুলোর বিষয়ে কোনো তথ্য আমার কাছে নেই’।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৭
এমএএএম