ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জেলা প্রশাসনকে জেলা পরিষদের অধীনে আনার সুপারিশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৭
জেলা প্রশাসনকে জেলা পরিষদের অধীনে আনার সুপারিশ সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সংবাদ সম্মেলন/আনোয়ার হোসেন রানা

ঢাকা: জেলা প্রশাসনকে জেলা পরিষদের অধীনে আনাসহ সরকারের প্রতি ছয় দফা সুপারিশ দিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।

মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির সম্বনয়কারী দিলিপ কুমার সুপারিশগুলো উপস্থাপন করেন।

তিনি বলেন, সুজন মনে করে জেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন আনা উচিত।

স্থানীয় সরকারের এ প্রতিষ্ঠানটির জন্য নির্বাচক মণ্ডলী একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা, এ নির্বাচক মণ্ডলীকে সাধারণ ভোটাররা স্ব স্ব এলাকার বিভিন্ন স্তরের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করেছেন; অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনে নির্বাচক মণ্ডলী হিসেবে কাজ করার জন্য নয়।

তিনি আরো বলেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ২০০২ সালে প্রকাশিত তার ‘জেলায় জেলায় সরকার’ গ্রন্থে জেলা পরিষদ আইনের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। তার মতে, এই আইন বাস্তবায়িত হলে একটি ‘অথর্ব জেলা পরিষদ’ গঠিত হবে।

শুধুমাত্র নির্বাচন পদ্ধতিই নয়, আইনে বর্ণিত আরও কিছু বিষয়ের সঙ্গে সুজন একমত নয়। তাই আইনের বিষয়টি মাথায় রেখে ছয় দফা বাস্তাবায়নের সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে-সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জেলা প্রশাসনসহ জেলা পর্যায়ে কর্মরত সরকারের সব বিভাগকে জেলা পরিষদের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। একই ব্যবস্থা উপজেলা পর্যায়েও চালু করতে হবে।

জেলা পরিষদের পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচক মণ্ডলীর পরিবর্তে সরাসরি জনগণের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

সরাসরি নির্বাচনের ক্ষেত্রে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের জন্য নির্বাচনী এলাকাকে বড় মনে হলে, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে সংসদীয় পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ১৫টি ওয়ার্ডে ১৫জন সদস্য এবং ৫জন সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচিত হবেন। সংরক্ষিত আসনের ক্ষেত্রে ঘূর্ণায়মান আসন সংরক্ষণ পদ্ধতির বিধান করা যেতে পারে। এছাড়া ওয়ার্ডের পরিধিও জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্ধরিত হতে পারে।

সংসদ সদস্যদের জেলা পরিষদে উপদেষ্টা রাখার বিধান বিলুপ্ত করতে হবে।

চেয়ারম্যানসহ জেলা পরিষদের সদস্যদের আলাদত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই সাময়িক বরখাস্ত করার বিধান পরিবর্তন করতে হবে অথবা সব ধরনের জনপ্রতিনিধির ক্ষেত্রে একই বিধান প্রবর্তন করতে হবে।

এছাড়া জেলা পরিষদের বাধ্যতামূলক কার্যাবলীতে বর্ণিত (প্রথম তফসিল) উপজেলা পরিষদ এবং পৌরসভার ওপর জেলা পরিষদের তদারকিমূলক ভূমিকা প্রত্যাহার করতে হবে। কেননা, ধারণাগতভাবে স্থানীয় সরকারের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই স্বশাসিত। এছাড়া এই বিধান রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

সুজনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে সঙ্গে আমরা দ্বিমত পোষণ করি না। জেলা পরিষদ নির্বাচনটি নির্বাচনের নামে পায়তারা হয়েছে। তবে যেহেতু স্বাধীন দেশে জেলা পরিষদ নির্বাচন প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাই বিষয়টি ইতিবাচক।

তিনি বলেন, নির্বাচন মানেই হচ্ছে বিকল্পের মধ্যে বেছে নেওয়া। কিন্তু জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়ে গেল জনগণ জানলোই না। আবার নির্বাচন হলো, কিন্তু নির্বাচিতরা জানেনই না তারা কি করবেন? তাদের দায়িত্ব বা কর্মপরিধিই বা কী? জেলা পরিষদ নির্বাচনে শুধু আইনি ক্রটিই নয়, এতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। যার ফলে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংসের ষোল কলা পূর্ণ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। তাই সামনে যে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে, আশা করবো তা একটি শক্তিশালী কমিশন হবে। কেননা, হুদা কমিশন যে আস্থার সৃষ্টি করেছিল, তা ধ্বংস হয়েছে রকিব কমিশনের সময়।

সংবাদ সম্মেরনে সুজনের সহ-সম্পাদক জাকির হোসেন ছাড়া অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৭

ইইউডি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।