মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলেন এসব তথ্য জানায় সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
সংস্থাটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দিলিপ কুমার লিখিত বক্তব্যে বলেন, দেশের ৬১ জেলায় (তিন পার্বত্য জেলা ব্যতীত) জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল দেয় নির্বাচন কমিশন।
বিজয়ী প্রার্থীদের সম্পদের তথ্য তাদের জমা দেওয়ার হলফনামা বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে বিজয়ী ৫৯ চেয়ারম্যানের মধ্যে ৩ জনের বার্ষিক আয় কোটি টাকার ওপরে।
এরা হলেন-জামালপুর জেলা পরিষদের চেয়াম্যান ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী, বরিশাল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মইদুল ইসলাম ও গাজীপুরের জেলা পরিষদ পরিষদ চেয়াম্যান আখতার উজ্জামান। এদের মধ্যে আবার ফারুক আহাম্মদ চৌধুরীর আয় সবচেয়ে বেশি।
তিনি বছরে ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৬৪ হাজার ৭১৭ টাকা আয় করেন। অন্য দু’জনের আয় যথাক্রমে ২ কোটি ৮৪ লাখ ৯৪ হাজার ৩২৩ টাকা এবং ১ কোটি ১১ লাখ ৭১ হাজার ১০০ টাকা।
চেয়ারম্যানদের মধ্যে ৫ কোটি টাকার বেশি সম্পদ দুই জনের। এক্ষেত্রে শীর্ষে ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী, যার সম্পদের পরিমাণ ৬ কোটি ৯ লাখ ৩ হাজার ২২৭ টাকা। অন্যজন পিরোজপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মহউদ্দীন মহারাজ, যার সম্পদের পরিমাণ ৫ কোটি ৫৯ লাখ ১৩ হাজার ১৫৬ টাকা।
অন্যদিকে, চেয়ারম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে ঋণগ্রস্ত হচ্ছে দিনাজপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুল ইমাম চৌধুরী। যার ঋণের পরিমাণ ৬ কোটি ৭৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
চেয়ারম্যানদের মধ্যে কর দেন মাত্র ২৪ জন। এদের মধ্যে সাত জন ১০ হাজার টাকার কম এবং ৫ জন লক্ষাধিক টাকা কর দিয়েছেন। সবেচেয়ে বেশি কর দিয়েছেন ঝিনাইদহের জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাস। তিনি ২০ লাখ ৫৩ হাজার ৬০৪ টাকা কর দিয়েছেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ৫৯ জেলায় ২১ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এতে চেয়ারম্যান পদে মোট ১৪৫ জন, সংরক্ষিত সদস্য পদে ৮০৬জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ২ হাজার ৯৮৬জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
চেয়ারম্যানদের মধ্যে ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ প্রার্থী নন এসএসসি, ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ প্রার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পাস। স্নাতক পাস ৫৭ দশমিক ৬২ শতাংশ, স্নাতকোত্তর পাস ১৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ প্রার্থী। অবশিষ্ট ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ প্রার্থী হলফনামায় কিছু উল্লেখ করেননি।
৫৯ জন নির্বাচিত চেয়ারম্যানের মধ্যে ৩৮ জন অর্থাৎ ৬৪ দশমিক ৪০ শতাংশের পেশা ব্যবসা। ১৩ শতাংশ আইনজীবী। অবশিষ্টরা অন্যান্য পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
অপরদিকে ৫৯ চেয়ারম্যানের মধ্যে দুইজনের বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা রয়েছে। ১৫ জনের বিরুদ্ধে অতীতে মামলা ছিল। একজনের বিরুদ্ধে অতীতে এবং বর্তমানে মামলা রয়েছে। এছাড়া ৩০২ ধারায় অতীতে মামলা ছিল দুইজন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এরা হলেন- মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মহউদ্দিন এবং মেহেরপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. গোলাম রসুল।
তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী কোনো প্রার্থী হলফনামায় কোনো তথ্য না দিলে, তা তথ্য গোপনের শামিল। এতে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু বাতিল তো হয়নি, বরং যারা শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্য না দিয়ে এবং কর দেওয়ার নির্দিষ্ট তথ্য না দিয়ে তথ্য গোপন করেছেন, তারা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
আবার যারা সম্পদের তথ্য উল্লেখ করেছেন, তাও বর্তমান মূ্ল্য অনুযায়ী নয়। নির্বাচন কমিশন কোনো প্রার্থীর সম্পদের তথ্যই যাচাই করেনি। সুতরাং এখানেও নির্বাচন কমিশনের দুর্বলতা রয়েছে।
এ সময় অন্যদের মধ্যে সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সহ-সম্পাদক জাকির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জাকির হোসেন বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন নির্দলীয়। কিন্তু যারা ভোট দিয়ে প্রার্থী নির্বাচন করছেন, তারা দলীয় নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছেন। কাজেই জেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো ধরনের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত? এছাড়া এতে জনগণের ভোট দেওয়ার যে সার্বভৌম অধিকার, এখানে তাও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই জেলা পরিষদ আইনটি সংশোধন করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা ভোট দিয়েছেন। কিন্তু তাদের অনেককে আবার টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে। অনেকে নির্বাচিত হতে না পেরে সে টাকা ফেরতও নিয়েছেন বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৭
ইইউডি/পিসি