ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মোর্শেদার বৈকালী পাঠশালায় আলোকিত তারা

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৭
মোর্শেদার বৈকালী পাঠশালায় আলোকিত তারা বৈকালী পাঠশালায় পড়াচ্ছেন মুর্শিদা। ছবি: আরিফ জাহান / বাংলানিউজ

বগুড়া: মোর্শেদা হক। চাকরি করেন একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায়। কর্মস্থল বগুড়ার ধুনট উপজেলায়। কাজ করছেন স্বাস্থ্য নিয়ে। পেশাগত কারণে তাকে প্রতিনিয়ত ছুটতে হয় নানা স্থানে। 

সেই ধারাহিকতায় একদিন যান চৌকিবাড়ি গ্রামে। সেখানে দেখা পান প্রায় ৪০ জন প্রতিবন্ধীর।

নানা বয়সী এসব মানুষ আবার দারিদ্র্যের কষাঘাতে পিষ্ট।
 
সেই থেকে এই নারী নানা পরিকল্পনা আঁটেন। সুবিধা বঞ্চিত প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। চৌকিবাড়ি গ্রামে গড়ে তুলেন বৈকালী পাঠশালা। পাঠদানের জন্য বিকেলটা বেছে নেন। চাকরি শেষে বিকেলে পাঠশালায় চলে যান সবার প্রিয় মোর্শেদা হক। প্রায় ঘণ্টাখানেক প্রতিবন্ধীদের পাঠদান করেন তিনি।
 
বগুড়ার ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ি গ্রামে দারিদ্র্যের কষাঘাতে পিষ্ট সুবিধা বঞ্চিত প্রতিবন্ধীদের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করতে ২০১৫ সালের ১৫ মার্চ বৈকালী পাঠশালা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন উন্নয়ন কর্মী মোর্শেদা হক।
 
এর আগে সেখানে গড়ে তোলা হয় উজ্জীবিত প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ক্লাব। এই ক্লাবের আওতায় প্রতিষ্ঠা করা হয় বৈকালী পাঠশালা। পাঠশালায় স্বেচ্ছায় স্বাক্ষর জ্ঞান শেখানোসহ প্রতিবন্ধীদের পরিবেশ, পুষ্টি, খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিষয়ে নানা বিষয় শেখানো হয়। প্রতিবন্ধীরা সমাজের জন্য যেন বোঝা হয়ে না দাঁড়ায় সেই লক্ষ্যে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন মোর্শেদা হক।
 
সরেজমিনে দেখা যায়, পাঠশালার ঘরটির বেড়া টিনের আর উপরে ছাউনি। চৌকিবাড়ি গ্রামের একজন ঘরটির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সেই ঘরের মেঝেতে চলে প্রতিবন্ধীদের পাঠদান কার্যক্রম।  

শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শিক্ষা দিচ্ছেন মুর্শিদা।  ছবি: আরিফ জাহান / বাংলানিউজ

সপ্তাহের শনি, সোম ও বুধবার বিকেলে প্রতিবন্ধীরা তাদের প্রিয় পাঠশালায় চলে আসেন। মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে বসে পড়েন সবাই। এখানে পাঁচ থেকে ৪০ বছর বয়সী প্রতিবন্ধীরা পড়েন। প্রত্যেকের কাছে শোভা পায় বই, খাতা, পেন্সিলসহ বিভিন্ন পড়ার সামগ্রী।

তাদের কেউ বাবার হাত ধরে আবার কেউ বা মা, দাদা-দাদি, নানা-নানির কোলে পিঠে চড়ে এই পাঠশালায় আসেন। মেঝেতেই চলে তাদের পাঠদান কার্যক্রম। সেখানে বসে মনের সুখে খেলাধূলা করে কেউ কেউ।  

আবার অনেকেই ছবি এঁকে মনের ভাব প্রকাশ করেন। পড়াশোনার পর্বটা শেষে চলে নেচে গেয়ে আনন্দ করার পালা। এছাড়া প্রায় খেলাধূলা, বনভোজন, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন ধরনের আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়।
 
আপন, তানিয়া, জাকির হোসেন এই পাঠশালার শিক্ষার্থী। তারা সবাই প্রতিবন্ধ। পাঠশালার শিক্ষার্থী তানিয়ার মা হাওয়া বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার মেয়ে এখানে এসে অনেক কিছু শিখেছে। ইশারায় এখন সে বেশ ভালোভাবে কথা বলতে পারে এবং বোঝে। ’
 
আরেক শিক্ষার্থীর মা জাহানারা বেগম বলেন, ‘আমার বাড়ি থেকে এই স্কুলের দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। কোলে নিয়ে পায়ে হেঁটে মেয়েকে স্কুলে দিতে আসি। আবার একই ভাবে বাড়ি ফিরি। তাও মেয়েটা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হোক। ’

ওই পাঠশালায় আসা আরেক শিক্ষার্থীর বাবা শাহীন আলম ও মা আসফুল খাতুন জানান, প্রতিবন্ধীদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়াতে স্কুলটি বিশেষ ভূমিকা রাখছে। তবে সেটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। নিজস্ব কোনো ভবন নেই। শিক্ষা উপকরণ ও আসবাবপত্রের রয়েছে যথেষ্ট অভাব। প্রতিবন্ধীদের স্কুলে আসা যাওয়ার জন্য যানবাহনের প্রয়োজন।
 
পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা মোর্শেদা হক বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবন্ধীদের জন্য ভালো কিছু করার উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই পাঠশালা করেছি। এখান থেকে তারা যেন অক্ষর জ্ঞানসহ নৈতিক শিক্ষা নিতে পারেন-সেজন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।  

তার এ উদ্যোগে বেসরকারি সংস্থা টিএমএসএস প্রতিবন্ধীদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানান তিনি।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৭
এমবিএইচ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।