ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বনসাই বাগানে সবুজের সাফল্য  

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৭
বনসাই বাগানে সবুজের সাফল্য   বনসাই উচুঁ করে দেখাচ্ছেন কে এম সবুজ- ছবি: বাংলানিউজ

গাজীপুর: বৃক্ষ প্রেমীরা সব সময়ই বলে থাকেন গাছ প্রকৃতির এক অন্যতম সেরা ও সুন্দর সৃষ্টি। পৃথিবীকে বাসযোগ্য, সবুজ ও শীতল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে গাছ। গাছের বর্ণনা সহজেই শেষ করা যায় না। গাছ পছন্দ করেন না এমন মানুষ নেই বললেই চলে। 

বৃক্ষ প্রেমীদের এমনই একটি গবেষণার ফল হচ্ছে বনসাই। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১০নং ওয়ার্ডের আমবাগ এলাকায় বনসাই বাগান করে সফল হয়েছেন কে এম সবুজ।

 

বর্তমানে তার বাগানে রয়েছে ২০০ প্রজাতির প্রায় দুই হাজার বনসাই গাছ। তিল তিল করে তিনি গড়ে তুলেছেন এ বনসাই বাগান। যার নাম দিয়েছেন ‘লিভিং আর্ট’। প্রায় দেড় বিঘা জমিতে তার এ বনসাই বাগান। তার বাগানে ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫ লাখ টাকা দামেরও বনসাই গাছ রয়েছে। ওইসব বনসাই রাখা হয়েছে বাড়ির ছাদে।  
কাঁঠালিবট বনসাই্- ছবি: বাংলানিউজ বনসাই কি এমন প্রশ্ন থাকতে পারেন অনেকে। বনসাই হচ্ছে, যে গাছ স্বাভাবিকভাবে বিশাল আকৃতির হয় এবং দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকে ওইসব গাছ ছোট করে অল্প জায়গাতে দীর্ঘ দিন বাঁচিয়ে রাখার নামই হচ্ছে বনসাই। যে গাছের বয়স হবে অনেক বছর কিন্তু হাতের তালুতে নিয়ে রাখা যায়। বনসাইয়ের দিকে তাকালে এর বয়সের ছাপ বুঝা যায়।  

কে এম সবুজের গার্ডেনে রয়েছে ৩০ বছরেরও বেশি বয়সের একটি বনসাই আমবট গাছ। যার উচ্চতা প্রায় দুই থেকে আড়াই ফুট। টবে রাখা বয়স্ক এ আমবটের বনসাই গাছটি হাতের তালুতে নিয়ে উচু করা যায় সহজেই। এ বনসাইটির দাম উঠেছিল ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। তার এ গার্ডেনে রয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ প্রজাতির বট গাছ যার মধ্যে আম বট, কাঠালী বট, কৃষ্ণ বট, চায়না বট, রাবার বট ও পাকর বট। এছাড়া মহুয়া, তমাল, কামিনী, বিলশ, ছাতিম, হিজল, বাবলা, জিলাপী, গোল্ডেনপান্ডা, ক্যালেন্ডা, জগডুমুর, বইচি, সুন্দরী, গেওয়া, কেওড়া, ঝুমুরসহ আম, জাম, কাঁঠাল, করমচা গাছ। কে এম সবুজের এ বাগানে রয়েছে পৃথিবীর সব চেয়ে উঁচু জাতের গাছ বাওবাব।  

বৃক্ষ প্রেমী সবুজ বাংলানিউজকে জানান, প্রকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় বনসাই বিশাল ভুমিকা রাখতে পারে। ২১ বছর ধরে তিনি বনসাই নিয়ে গবেষণা করছেন। অল্প জায়গাতে বিভিন্ন প্রজাতির অনেক বনসাই গাছ রাখা যায়। গাছ অনুযায়ী এ থেকে ফুল-ফল ও অক্সিজেন পাওয়া যায়। অনেক বছর বয়সের বনসাই ঘরের ভেতর ও অফিসের টেবিলসহ বিভিন্ন স্থানে রাখা যায়। এতে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পায়।  
বনসাই উচুঁ করে দেখাচ্ছেন কে এম সবুজ- ছবি: বাংলানিউজকে এম সবুজ মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার চরপাথালিয়া এলাকার নূর মোহাম্মদ খাঁনের ছেলে। তিনি বর্তমানে বসবাস করেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১০নং ওয়ার্ডের আমবাগ পশ্চিমপাড়া এলাকায়।  

সবুজ জানান, ১৯৯৬ সালে তিনি সিলেট যান। সেখানে এক নার্সারি বাগানে একটি বনসাই দেখেন। এ থেকে তার আগ্রহ জন্মায় টবের মধ্যে এতো বছর বয়সের গাছ কি ভাবে বেঁচে আছে। তখনই ১০০ টাকা দিয়ে চারটি তেঁতুল গাছ কিনেন। ওই চারটি গাছ দিয়ে তিনি বনসাই গার্ডেন শুরু করেন। সব মিলিয়ে তার গার্ডেনে বনসাই আছে দুই হাজারের বেশি। বর্তমানে যার আনুমানিক মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা। সখের বসে তিনি এটা শুরু করেন। পরে সফলতা মুখ দেখে ২০০৯ সাল থেকে এটাকে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তুলেন। বাগান দেখাশোনার জন্য বেতন দিয়ে ৪ জন লোক রাখা হয়েছে। বনসাই বিক্রি করে কে এম সবুজ প্রতি মাসে এখন এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করেন। বিদেশেও বনসাই রপ্তানি করছেন তিনি।  

সবুজ আরো বলেন, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে তারা মালয়েশিয়ায় ২০০টি বিভিন্ন প্রজাতির বনসাই গাছ নেবে। এরই মধ্যে কিছু গাছ মালয়েশিয়ার পাঠানো হয়েছে। এসব বনসাই রপ্তানি করতে অনেক ঝামেলা হয়। সরকার যদি সহজ পদ্ধতিতে বনসাই রপ্তানির সুযোগ করে দেন তাহলে ভবিষতে আরো ভালো কিছু করা সম্ভব।
বনসাই উচুঁ করে দেখাচ্ছেন কে এম সবুজ- ছবি: বাংলানিউজকিভাবে বনসাই করবেন: প্রথমে একটি চারা গাছ বনসাইয়ের কোন স্টাইল বা মডেল দিতে চান তা নির্বাচন করতে হবে। এবার গাছের গোড়া মোটা করার জন্য চারা গাছের পাতা ফাল্গুন বা বর্ষার শুরুতে ফেলে দিতে হবে। এরপর যখন নতুন পাতা গজিয়ে এক ইঞ্চি হবে তখন গাছটিকে মাটি থেকে তুলে পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার করে কিছু সময় রোদে শুকাতে হবে। পরে গাছের মূল শিকড় এক ইঞ্চি পরিমান রেখে কেটে ফেলুন। পরে তামার তার দিয়ে মূলের শেষ প্রান্তে পেচিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিন এবং বড় টবে প্রচুর সার দিয়ে রোপন করুন। এতে আস্তে আস্তে গাছের গোড়া মোটা হতে থাকবে এবং সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। কাণ্ড ছাড়া বনসাই তৈরি হতে পারে না।
 
প্রতিটি গাছের কাণ্ডকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। বনসাইয়ের শাখা প্রশাখা বিন্যাসের ওপর সৌন্দর্য নির্ভর করে। প্রতিটা বনসাইয়ের অগ্রভাগ বা শীর্ষ বিন্দু থাকা আবশ্যক। তবে অগ্রভাগ ছাড়াও বনসাই হতে পারে। প্রকৃতিতে প্রতিটি গাছের অগ্রভাগ বা শীর্ষ বিন্দু আছে। তাই আমরা বনসাই করবো প্রকৃতিকে ফলো করে। বনসাইয়ের ফুল বা ফল থাকলে বাড়তি সৌন্দর্য উপস্থাপন হয় এবং এটি সহজে মানুষকে আকর্ষণ করে। চীন, জাপানে ফুল ফলের ওপর অধিক বনসাই হয়ে থাকে। বনসাইয়ের শিকড় হতে হবে মাটির উপর ভাসমান যা দেখতে সুন্দর লাগবে। গাছের গোড়া মোটা হলে শিকড়ও মোটা হতে হবে। বনসাইয়ের পাতার উপর গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। কেননা বনসাই একটি ছোট গাছ। তাই এর পাতাও ছোট হওয়া চাই। কোনো বনসাইকে ফাইনাল টবে বসানো হলে বছরে অন্তত চারবার পাতা কাটা উচিৎ। এভাবে পাতা আস্তে আস্তে ছোট হয়ে আসবে। সেই সঙ্গে প্রচুর জৈবসার প্রয়োগ করলে পাতার উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৭     
আরএস/বিএস 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।