নওগাঁ শহরের যমুনা নদীর কোল ঘেষে প্রায় সাড়ে ৪ একর জমির উপর গাঁজা সংরক্ষণের জন্য ১৯০৫ সালে নির্মাণ করা হয় গাঁজা গুদাম। সেসময় গাঁজা সোসাইটির মাধ্যমে সংগ্রহ করা গাঁজা এসব গুদামে সংরক্ষণ ও মেশিনে বাচাই করে প্রক্রিয়াজাত করা হতো।
জেনেভা কনভেনশনে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকার গাঁজা উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণন বন্ধ রাখার চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ফলে ১৯৮৭ সাল থেকে বন্ধ হয়ে যায় নওগাঁর গাঁজা চাষ। এতে গাঁজাচাষী পরিবারগুলো বেকার ও কর্মহীন হয়ে পড়েন।
ভারতের রাইটার্স বিল্ডিংয়ের আদলে নির্মিত হয় নওগাঁ গাঁজা উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির প্রধান কার্যালয়। ২০০৬ সাল পর্যন্ত সমিতির সদস্যদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এর দেখাশোনা করলেও তাদের নির্বাচনী জটিলতায় পরবর্তী সময়ে স্থানীয় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সমবায় অধিদফতরের কর্মকর্তারা পরিচালনার দায়িত্ব পান। গাঁজাচাষীরাই অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ‘নওগাঁ গাঁজা উৎপাদনকারী পুনর্বাসন সমবায় সমিতি’র মালিক। কিন্তু গাঁজা উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পর সেই সদস্যরা এখন অবহেলিত।
বর্তমানে সমিতির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে ২৫. ৬৬৩৭ একর আবাদি জমি, ২৭টি বাড়ি, ৯টি জলাশয়, ১০টি মার্কেট ও ১টি হিমাগারসহ প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ। সম্পদগুলোর বেশকিছু এখন বেদখল।
নিজের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন আর দেশের রাজস্ব বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে মাঠে কঠোর পরিশ্রম করে গাঁজা উৎপাদন করতেন নওগাঁর চাষীরা। তাই ১৯১৭ সালে তাদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে গড়ে তোলা হয় গাঁজা উৎপাদনকারী পুনর্বাসন সমবায় সমিতি লিমিটেড। সে সময় ১০ টাকায় একটি করে শেয়ার সার্টিফিকেট কিনতে হয়েছে চাষীদের।
গোলা আছে গাঁজা নেই। এখানে রয়েছে গাঁজা ভুসি পোড়ানো চুল্লি। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাঁজা পোড়ানোর শত বছরের পুরনো চুল্লিটি। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে চুল্লিটি। চুল্লিটির চারপাশ ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে গেছে।
নওগাঁর গাঁজাচাষীদের সমিতিকে বলা হয়ে থাকে এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় সমবায় সমিতি। এক সময় এই সমিতির মাধ্যমেই সরকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করলেও অবহেলিত রয়েছেন এর সঙ্গে সম্পৃক্ত চাষীরা। তাই সমিতির সম্পদগুলো কাজে লাগিয়ে চাষীদের উন্নয়ন করা সম্ভব বলে মনে করেন সদস্যরা।
গাঁজা সমবায় সমিতি ও সম্পদ রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ময়নুল হক মুকুল বলেন, কোটি কোটি টাকার সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া না হলে সেগুলো বিনষ্ট হয়ে যাবে। সম্পদগুলো রক্ষা করে আর্থিকভাবে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতে পারলে এর সদস্যরা সুফল পাবে এবং সদস্যদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।
নওগাঁ জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. আমিনুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ২০০৭ সাল থেকে আমরা এই গাঁজা মহলের দায়িত্ব নিয়েছি। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কোনো ধরনের বেদখল হয়নি। এর আগে হয়েছে কিনা আমাদের জানা নেই।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে বেদখলের কোনো অভিযোগ আসলে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৭
বিএস