সোমবার (২৭ নভেম্বর) কক্সবাজারের ইনানী বিচে আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়া ইমসারেক্স-২০১৭ (আইওএনএস মাল্টিলেটারাল মেরিটাইম সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ এক্সারসাইজ) এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে তিনি এ আহ্বান জানান।
ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়ামের (আইওএনএস) ২৩টি সদস্য ও ৯টি পর্যবেক্ষক দেশের নৌবাহিনীর ৪১টি যুদ্ধজাহাজ, ৩টি মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট ও ৪টি হেলিকপ্টারের অংশগ্রহণে এ মহড়া শুরু হয়েছে।
একটি রাষ্ট্রের একার পক্ষে সমুদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সুনামি ও সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ একটি রাষ্ট্রের একার পক্ষে কার্যকরভবে মোকাবেলার সক্ষমতার বাইরে। একাধিক ঘটনায় স্পষ্ট হয়েছে, এ ধরনের পরিস্থিতিতে সমুদ্রে জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আঞ্চলিক দায়িত্ব হয়ে পড়ে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, যৌথ উদ্যোগ ছাড়া আমরা নিজেদের নাবিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবো না। এজন্য আমাদের এক হয়ে কাজ করতে হবে।
মহড়ার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কমান্ডার বিএন ফ্লিট রিয়ার অ্যাডমিরাল এম আশরাফুল হক ইমসারেক্সের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। আইওএনএসের বর্তমান চেয়ারম্যান নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ এবং আইওএনএস’র প্রতিষ্ঠাতা দেশ হিসেবে ভারতীয় নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল সুনীল লাম্বা শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে ব্লু ইকোনমি বা সমুদ্র অর্থনীতির গুরুত্ব তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোকে সামুদ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে এক হয়ে কাজ করতে হবে।
সমুদ্র সম্পদ উত্তোলন ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ সরকার সমুদ্র খাতের উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে।
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর এই সর্বাধিনায়ক বলেন, সমুদ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলেই সমৃদ্ধ এই সামুদ্রিক অর্থনীতির উন্নতি হতে পারে। তবে সমুদ্র নিরাপত্তার বিভিন্ন দিকও দিন দিন জটিল হয়ে যাচ্ছে। সেসব বিবেচনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর উন্নয়ন ও সক্ষমতা বাড়াতেও কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
সমুদ্র বাংলাদেশ নৌবাহিনী ‘আস্থার প্রতীক’ হিসেবে গড়ে উঠেছে বলেও উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি। আবদুল হামিদ বলেন, সরকারের সমুদ্র অর্থনীতি এজেন্ডা বাস্তবায়নে নৌবাহিনী সাগরে ‘অতন্দ্র অভিভাবক’র মতো কাজ করছে।
এরপর তিনি হেলিকপ্টারযোগে মহড়ায় অংশগ্রহণকারী যুদ্ধজাহাজগুলোর ফ্লিট রিভিউ পরিদর্শন করেন। তারপর রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে অনুষ্ঠিত বর্ণাঢ্য বিচ কার্নিভালের উদ্বোধন করেন।
মহড়ায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর নৌবাহিনী প্রধান, ঊর্ধ্বতন নৌ-কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন দেশের মেরিটাইম বিশেষজ্ঞরাও থাকছেন। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহের নৌবাহিনীর মধ্যকার আঞ্চলিক সম্প্রীতি ও সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনী বঙ্গোপসাগরে এই আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়ার আয়োজন করেছে।
এ মহড়ার অংশ হিসেবে আগামী মঙ্গলবার ও বুধবার (২৮ ও ২৯ নভেম্বর) যুদ্ধজাহাজসমূহে অগ্নিনির্বাপণ মহড়া, দুর্ঘটনা কবলিত জাহাজ হতে জরুরি উদ্ধার অভিযান ও চিকিত্সা সহায়তা প্রদান, গভীর সমুদ্রে নিখোঁজ ফিশিং ট্রলার ও জেলেদের অনুসন্ধান, গভীর সমুদ্রে জরুরি উদ্ধার অভিযান, গভীর সমুদ্রে নিখোঁজ উড়োজাহাজ অনুসন্ধান ও বাণিজ্যিক জাহাজের অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা প্রদান, দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজকে পোতাশ্রয়ে ফিরিয়ে আনা এবং ফ্লিট রিভিউ অনুষ্ঠিত হবে।
মহড়ায় অংশগ্রহণকারী আইওএনএসের ২৩ সদস্য দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কেনিয়া, মালদ্বীপ, মরিশাস, মোজাম্বিক, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সেসেলস, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, তাঞ্জানিয়া, থাইল্যান্ড, তিমুর লেসেথ, সংযুক্ত আরব অমিরাত এবং যুক্তরাজ্য। অন্যদিকে ৯টি পর্যবেক্ষক দেশ হিসেবে রয়েছে চীন, জার্মানি, ইতালি, জাপান, মাদাগাস্কার, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস, রাশিয়া এবং স্পেন।
আয়োজকরা আশা করছেন, আন্তর্জাতিক এই সমুদ্র মহড়া ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্ব বৃদ্ধি ও মেরিটাইম সহযোগিতার ক্ষেত্রে সদস্য দেশসমূহের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও জোরালো করবে। এছাড়া এ অঞ্চলের সদস্য দেশসমূহের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে ব্লু-ইকোনমি ধারণাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি এই মহড়া এ অঞ্চলে সমুদ্র নিরাপত্তার ঝুঁকি মোকাবেলা ও সমুদ্র বাণিজ্য রক্ষায় বহুপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও সুদৃঢ় করবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৭
এমইউএম/এইচএ/
** কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়ার উদ্বোধন রাষ্ট্রপতির