বিগত দিনে সিলেটে শপিং মল তৈরির নামে জামায়াত নেতাদের ওয়ানসিটি কেলেংকারি ও সেভেন স্টার হোটেল করার নামে পাতা হয়েছিল ‘সিলেট প্যারাডাইস’ নামক ‘ভূইফোঁড়’ কোম্পানির প্রতারণার ফাঁদ। এবার অভিযোগের তর্জনী বিএনপি ও খেলাফত মজলিস নেতাদের মালিকানায় হলি আরবান হাউজিং প্রাইভেট লিমিটেডের দিকে।
নিজের নামে বিনিয়োগ না থাকলেও স্ত্রীর নামে বিনিয়োগকৃত হলি আরবান প্রকল্পে চেয়ারম্যান পদে আছেন সুনামগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপির সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন মিলন। কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন ২০ দলীয় জোটের দল খেলাফত মজলিসের (ইছহাক) সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাসির আলী।
এছাড়া ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে আছেন খেলাফত মজলিস সিলেট জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিল্ওয়ার হোসেন। তিনজনই এবার নিজ নিজ দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী।
উদ্যোক্তা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন কোম্পানীগঞ্জের বাসিন্দা সিলেটের প্রভাবশালী সাংবাদিক সিরাজুল ইসলাম। তাদের নেতৃত্বে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছেন মোট ৩১ জন। এদের মধ্যে ১৫ জন পরিচালক ও ১৬ জন শেয়ার হোল্ডার।
প্রকল্পের মালিকদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে ভূমি আত্মসাতের অভিযোগ এনে সিলেটের যুগ্ম জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতে ২০ নভেম্বর স্বত্ব মোকদ্দমা (নং-২৪৯/২০১৭) দায়ের করেন সিলেটের দক্ষিণ সুরমা, উপর হাজরাই গ্রামের মো: গিয়াস উদ্দিন। পরদিন ২১ নভেম্বর ওই ভূমির ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন আদালত।
মামলায় বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সিলেট বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি সভাপতি কলিম উদ্দিন মিলনের স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম হেনাসহ ১৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
বাদি গিয়াসের অভিযোগ, তিনি প্রকল্পের ৯৯ শতক জমির মধ্যে ৭৮ শতক এসএ রেকর্ডীয় মালিকের উত্তরাধিকারীদের কাছ থেকে কিনেছেন। কিন্তু হলি আরবান প্রকল্পের লোকজন বিভিন্ন ব্যক্তিকে মালিক সাজিয়ে ২০১৭ সালের ৯ জানুয়ারি ১২৪২ নং দলিল-মূলে এক কোটি ৭৯ লাখ টাকায় জমিটি ক্রয় দেখিয়েছে।
বাদিপক্ষের দাবি, এর আগে গত ১৯ এপ্রিল সিলেট শহরের একটি অভিজাত কমিউনিটি সেন্টারে প্রকল্পের বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করে আলোচনায় আসে হলি আরবান প্রপার্টিজ প্রাইভেট লিমিটেড। এরপরই প্রবাসীদের টার্গেট করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গিয়ে প্রবাসীদের বিনিয়োগ করাচ্ছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে স্বত্ব মোকদ্দমাটি দায়ের করার পরপরই বাদী পক্ষ এই প্রকল্পে কোনোরূপ বিনিয়োগ করা বা ফ্লাট কেনা থেকে সংশ্লিষ্টদের বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমে এক সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে। কোনোরূপ আর্থিক লেনদেন বা দলিল না করার অনুরোধ জানানো হয় এতে।
হলি আরবান প্রপার্টিজের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালতে দায়ের করা স্বত্ব মামলার বাদী গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজেকে বলেন, জায়গার প্রকৃত মালিক হিসেবে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। আদালত বিবেচনা করবেন আমি সঠিক মালিক নাকি বেঠিক ।
তিনি বলেন, হলি আরবার প্রপার্টিজে ৯৯ শতক জমির মধ্যে ৭৮ শতক ২০০৫ সলে হাসিনা বিবি স্বামী মশরফ আলীর কাছ থেকে ক্রয় করা। অথচ প্রকল্পের লোকজন বিক্রেতার নাম হাসিনা বিবি দেখালেও মহিলার স্বামীর নাম দেখান ইসকন্দর আলী।
অন্যদিকে, মামলার ১ম বিবাদী ফেরদৌসী বেগম হেনার স্বামী হলি আরবান প্রপার্টিজের চেয়ারম্যান কলিম উদ্দিন মিলন ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, কারো স্বত্ব থাকলে সেটা আদালত নির্ধারণ করবেন। আমরা ১৯৬৮ সন থেকে পর্যায়ক্রমে ভোগ দখল করে আসা বৈধ মালিকের কাছ থেকেই ভূমি কিনে ফ্লাটবাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। নামজারিসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া স্বাভাবিক নিয়মেই হয়েছে। আমরা সব প্রসেস সম্পন্ন করেই জায়গা কিনেছি। ওখানে কোনো ভেজাল নেই।
স্ত্রীর নামে কেনা প্রকল্পে চেয়ারম্যান হওয়ার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে ব্যক্তির নামে ক্রয় করে আম মোক্তারনামার (পাওয়ার অ্যাটর্নি) মাধ্যমে আমাকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে। ’
কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালক সিরাজুল ইসলামও দাবি করেন, প্রকল্পের জায়গা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কেনা হয়েছে। আদালত থেকে স্থিতাবস্থা জারির কোনো আদেশ তাদের হাতে এখনো এসে পৌঁছেনি বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৭
এনইউ/জেএম