ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মোটর সাইকেলের বিপজ্জনক খেলা দেখানোই যার পেশা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৭
মোটর সাইকেলের বিপজ্জনক খেলা দেখানোই যার পেশা! মোফারুল ইসলাম

রংপুর: জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ কতো পেশাকেই না আকঁড়ে ধরে! অনেক সময় দু’বেলা দুমুঠো খাবারের নিশ্চয়তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজকেও পেশা হিসেবে বেছে নিতে হয়। মানুষ বাঁচার তাগিদে বাধ্য হয়েই এমনটা করে।এই রকমই একজন বিপজ্জনক পেশার মানুষ মোফারুল ইসলাম (৩৫)।

মোফারুল প্রথমে ছিলেন এক সহায়-সম্বলহীন যুবক। পরে পেশা হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন কাঠ দিয়ে নির্মিত গর্তের মধ্যে মোটর সাইকেলের খেলা দেখানোর কাজকে।

রীতিমতো জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তিনি মোটর সাইকেলের বিপজ্জনক এই খেলাটি দেখান সাধারণ মানুষদের চিত্ত বিনোদনের জন্য। এ থেকে যে আয় হয়, তা দিয়েই চলে তার ৪ সদস্যের সংসার। শীতের শুরুতে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলাতে যখন মেলা শুরু হয়, তখনই খেলা দেখানোর জন্য নানা দিক থেকে তার ডাক পড়ে। সব মিলিয়ে বছরে মোট ৫ মাস তিনি এই খেলা দেখান। আর বাকি ৭ মাস বাড়িতে থেকে ঘর-গেরস্থালির কাজ করেন।

মোফারুল ইসলামের বাড়ি রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউপির হাজিপুর মুন্সিপাড়া গ্রামে। এই প্রতিবেদক তার বাড়িতে গেলে কথা হয় মোফারুল ইসলামের সাথে।

বাংলানিউজের সঙ্গে তিনি মন খুলে কথা বলেন, প্রায় এক যুগ ধরে দেশের নানা প্রান্তের বিভিন্ন মেলায় মোটর সাইকেলের খেলা দেখিয়ে বেড়াচ্ছি। কাঠের তৈরি গর্তে মোটর সাইকেলের এই খেলা প্রদর্শন করতে হয় প্রতি পলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। মাঝেমাঝে খুব ভয় লাগে। ভয়ে গায়ে কাঁটা দেয়। কিন্তু কি করবো! ছাড়তেও পারি না। এটাই যে আমার পেশা আর নেশা!

তিনি অকপটে বলে যাচ্ছিলেন, এক সময় অভাবের তাড়নায় সিদ্ধান্ত নিই মোটর সাইকেলের খেলা দেখিয়ে আয় রোজগার করবো। শুরুতে বাড়িতে মাটির গর্ত করে, সেই গর্তের ভেতর মোটর সাইকেল চালানোর প্র্যাকটিস করতে থাকি। এক সময় একাজে তাক লাগানোর মতো দক্ষতা এসে যায়। এভাবেই শুরু।

‘জীবনের শুরুতে কৃষিশ্রমিকের কাজ করতাম। অভাব তখন লেগেই থাকতো। এরই মধ্যে আমার ছেলের রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। প্রতি মাসে বাচ্চাকে ব্লাড দিতে হয়। উপায় না পেয়ে সিদ্ধান্ত নিই মোটর সাইকেলের খেলা দেখাব। তা থেকেই বাড়তি আয় রোজগার করবো। ’

‘আজকাল প্রতিবছরই মেলার মৌসুমে মোটর সাইকেলের খেলা দেখিয়ে সব খরচাপাতি বাদ দিয়ে এক লক্ষ টাকার বেশি আয় করি। এই আয় দিয়েই আমার পরিবারের যাবতীয় খরচ, সন্তানের চিকিৎসাসহ সব খরচ মেটাই। বাড়তি এই আয় দিয়ে জমি কিনে নিজস্ব বাড়িও তৈরি করতে পেরেছি। শুধু কৃষিশ্রমিকের কাজ করলে এসব কিছুই আমি করতে পারতাম না। ’

‘আমার এ খেলার বৈশিষ্ট্য হলো,আমি যেখানে খেলা প্রদর্শন করি সেটি কাঠের তৈরি খাড়া ধরনের গর্ত। আর অন্যরা খেলা দেখান একটু ঢালু ধরনের গর্তে। আমার মত আরো যারা এ খেলা দেখান, তারা আমার মতন করে এরকম খাড়া গর্তে সহজে খেলা দেখাতে পারবেন না। এ কারণে আমার খেলাই দেখতেই মানুষ বেশি পছন্দ করে। ’

বদরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বিমলেন্দু সরকার তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, মোফারুল ইসলামকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। সে শুধু অভাবের তাড়নায় এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। এই খেলা প্রদর্শন করে আয় বেশি হয় সত্যি, কিন্তু পরিবার ও সন্তানদের কথা ভেবেই তার উচিত এই বিপজ্জনক পেশা ছেড়ে দেয়া।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৭
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।