ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কঙ্গোর দুর্গম-পাহাড়ি অঞ্চলে যাচ্ছি, দোয়া করবেন…

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৭
কঙ্গোর দুর্গম-পাহাড়ি অঞ্চলে যাচ্ছি, দোয়া করবেন… ফ্লাইট লেফটেন্যাট তামানা-ই-লুৎফী এবং ফ্লাইট লেফটেন্যাট নাইমা হক

ঢাকা: দেশের আকাশে সফল উড্ডয়নের পর সীমানা পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে পাড়ি জমাচ্ছেন নাইমা ও তামান্না। তারা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর নারী পাইলট। এই দুই নারী পাইলট প্রথমবারের মতো আফ্রিকান দেশ কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অপারেশন পরিচালনা করবেন।

অপারেশনাল পাইলট হিসেবে শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ বাংলাদেশ বিমান বাহিনী তথা দেশের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। এ ঘটনা নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে একটি মাইল ফলকও।

বিমান বাহিনীর দু’জন নারী পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যাট নাইমা হক এবং ফ্লাইট লেফটেন্যাট তামানা-ই-লুৎফী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগদান উপলক্ষে সোমবার (০৪ ডিসেম্বর) ঢাকা সেনানিবাসে বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার, ৩১ স্কোয়াড্রনে গণমাধ্যমে কথা বলেন। এসময় তারা এয়ারক্রাফট উড্ডয়ন করেন।

৭ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) রাতে এক বছরের জন্য কঙ্গোর উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন তামান্না ও নাইমা।  

অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে তামান্না বলেন, জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে যাচ্ছি। এ জন্য বাংলাদেশ বিমান বাহিনী আমাদের সব ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। কঙ্গো একটি পার্বত্য এলাকা। পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা প্রশিক্ষণ নিয়েছি।

‘কঙ্গো মিশনে বিভিন্ন ধরনের অপারেশন করতে হবে। ক্যাজুয়ালিটি ইভাকুয়েশন, মেডিকেল ইভাকুয়েশন, পেশেন্ট মিশনসহ বিভিন্ন ধরনের অপারেশন। বিমান বাহিনী আমাদের সব ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়েছে’।

তামান্না বলেন, বিমান বাহিনীর ৩১ নং, ১ নং বহর এবং হেলিকপ্টার স্কোয়াড্রন এমআই সিরিজ হেলিকপ্টার গত ১৪ বছর ধরে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অপারেট করে আসছেন। সেখানে নানা ধরনের মিশন পরিচালনা করা হচ্ছে, অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জিং মিশন বিমান বাহিনী হেলিকপ্টার দিয়ে অপারেট করেছে।

‘এরই ধারাবাহিকতায় বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে শান্তিরক্ষা মিশনে যাচ্ছি। যা যা প্রশিক্ষণ প্রয়োজন বিমান বাহিনী তা দিয়েছে। কঙ্গোর পরিবেশ ও আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের ক্যাম্পগুলোতে মিশন পরিচালনা করেছি। ইনশাআল্লাহ, আমরা বিশ্বাস রাখি। আমাদের জন্য দোয়া রাখবেন যেন স্বেচ্ছাসেবী কাজটি সফলভাবে করে দেশ ও বাহিনীর সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে পারি’।

ফ্লাইট লেফটেন্যাট তামানা-ই-লুৎফী এবং ফ্লাইট লেফটেন্যাট নাইমা হকনারী বৈমানিক হিসেবে হেলিকপ্টার চালানোর অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তামান্না বলেন, পাইলট হিসেবে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে জাতিসংঘের মিশনে ফ্লাই করার জন্য বিমান বাহিনী আমাদের দু’জনকে নির্বাচিত করেছে। একজন নারী হিসেবে আমি গর্বিত।

পূর্বসূরীদের ধারাবাহিকতায় হেলিকপ্টার পাইলট হিসেবে আমরাও যাচ্ছি জানিয়ে অপর পাইলট নাইমা বলেন, আমরা প্রথমবার পাইলট হিসেবে গেলেও নারী অফিসাররা ৭/৮ বছর থেকে অপারেট করে আসছেন।

‘ওই অঞ্চলটিতে বিমান বাহিনীর যে জায়গাগুলোতে অপারেট করবে সেগুলো দুর্গম অঞ্চল, ওখানে অনেক চ্যালেঞ্জ। বৈরি পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর জন্য যে ধরনের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন, বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে তা দেওয়া হয়েছে। ইনশাআল্লাহ সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আমরা প্রস্তুত’।

দেশের সুনাম বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের বাহিনী ১৪ বছর ধরে অপারেট করে দেশের সুনাম বয়ে এনেছেন। আমরা তারই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করবো। বিমান বাহিনী যে ভরসা ও বিশ্বাস করে পাঠাচ্ছে সেটি অক্ষুণ্ন রেখে দেশের সম্মান ধরে রাখবো।

যেসব মেয়ে বিমান বাহিনীতে যোগ দিতে চায় তাদের উদ্দেশে তামান্না বলেন, মেয়েদের জন্য বিমান বাহিনী যথেষ্ট সহায়ক। কাজের পরিবশে চমৎকার। তবে নিজেকে এগিয়ে আসতে হবে। যে কোনো চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। মেয়েরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং পেশায় রয়েছে। মেয়েরা এগিয়ে এলেই চ্যালেঞ্জিং জবে যোগ দিতে পারবে।

পরিবার থেকে কোনো বাধা এসেছে কিনা জানতে চাইলে নাইমা বলেন, পরিবারের মা, বাবা, ভাইবোন, আত্মীয়-স্বজন সবাই অত্যন্ত আন্তরিক সমর্থন করেছেন, করছেন। মেয়ে হিসেবে আমাদের সুযোগ কম দেওয়া হয়েছে, কথনো এমন অনুভব করিনি।

পেছনের কথা
বিমান বাহিনী ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ১৮ নং স্কোয়াড্রনে বেল-২০৬ হেলিকপ্টারে বেসিক কনভার্সন কোর্সের জন্য মনোনীত হওয়া এই দুই নারী ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট থেকে তাদের গ্রাউন্ড প্রশিক্ষণ শুরু করেন এবং ২৩ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ শুরু করেন। পরবর্তীতে ২৫ ঘণ্টা সফল প্রশিক্ষণ উড্ডয়ন শেষে তারা একক উড্ডয়ন শেষ করেন। তারা ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বর প্রশিক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অতিক্রম করে বৈমানিক হয়ে ওঠার প্রাথমিক পর্যায় শেষ করেন।

প্রশিক্ষণরত এই বৈমানিকদ্বয় বেল-২০৬ হেলিকপ্টারে ৬৫ ঘণ্টা উড্ডয়নের প্রাথমিক ধাপ শেষ করার পর পরবর্তীতে বিমান বাহিনীর বিভিন্ন হেলিকপ্টার স্কোয়াড্রনে দায়িত্ব পালন করেন। তারা ২০৬ হেলিকপ্টার কনভারশন কোর্স, এমআই-১৭, এমআই-১৭১ এবং এমআই-১৭১ এসএইচ হেলিকপ্টার প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন। তারা ভারত থেকে এভিয়েশন মেডিসিন-এ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। দুজনই পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশন্স উত্তরণে অপারেশনাল পাইলট হিসেবে দায়িত্ব করেছেন।

দেশের গন্ডি পেরিয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে তাদের যোগদান বাংলাদেশের সামরিক ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

তিন ভাইবোনের মধ্যে তামান্না দ্বিতীয়। তার বাড়ি যশোরে। আর নাইমার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহবাজপুরে। তবে তারা দু’জনই ঢাকায় বেড়ে উঠেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৭
এমআইএইচ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।