ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মৈত্রীর টিকিট যেন মহার্ঘ্য

সুকুমার সরকার, সিনিয়র স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০১৮
মৈত্রীর টিকিট যেন মহার্ঘ্য মৈত্রীর টিকিট যেন মহার্ঘ

ঢাকা: প্রায় দ্বিগুণের কাছে ভাড়া বাড়লেও ঢাকা কলকাতার মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট পাওয়া দুষ্কর। দিনে দিনে মৈত্রীর টিকিট যেন মহার্ঘ্য হতে চলেছে।

কমলাপুর রেল স্টেশনে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের আলাদা একটি টিকিট কাউন্টার রয়েছে। কিছু আসন রয়েছে চট্টগ্রাম যাত্রীদের জন্য।

তাই সেখানেও রয়েছে মৈত্রীর টিকিট কাউন্টার।

কমলাপুর মৈত্রী টিকিট কাউন্টারটি সকাল নয়টায় খোলা হয় এবং বিরতিহীনভাবে রেলের দু’জন সেলসম্যান সন্ধ্যা সাতটা অবধি টিকিট বিক্রি করেন। টিকিট সংগ্রহের জন্য ভোর পাঁচটায় লাইনে দাঁড়ান। দেরি করে গেলে টিকিট না মেলার সম্ভাবনাই বেশি।  

বৃহস্পতিবার বিকেলে টিকিট কাউন্টারে গিয়ে জানা গেল ২০ জানুয়ারির আগে কোনো টিকিট নেই। তাই অনেক যাত্রীকে খালি হাতে ফিরতে হলো। বিমানের ভাড়া বেশি বলে সিংহভাগ মানুষ তা চিন্তাও করতে পারেন না। আবার সড়ক পথে যাওয়া মানে একরাশ কষ্ট সহ্য করা। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের কথা মনে এলে চোখের সামনে হাজির হয় অসহ্য যন্ত্রণা আর বেদনা। এখন কুয়াশার কারণে প্রায় রাতেই বন্ধ থাকছে ফেরি চলাচল।  

অপেক্ষায় থাকতে হয় পরদিন সকাল অবধি। গাড়ির লম্বা লাইনের দরুণ যথাসময়ে ফেরি মেলে না। ৮-১০ ঘণ্টা ফেরিঘাটে অপেক্ষা কী যে কষ্টের, তা কেবল বোঝেন ভুক্তভোগীরাই। আবার বর্ষাকালে ঘাট ডুবে যাওয়া বা বদল করার কারণেও ফেরি চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। যানবাহনের বিপুল চাপতো রয়েছেই।

অন্যদিকে বাংলাদেশের বেনাপোল এবং পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোলে কাস্টমস-ইমিগ্রেশন সারতেও ৪-৫ ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়।  

কেননা এখন প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজারেরও বেশি যাত্রী ভারত ভ্রমণে যাচ্ছেন। যে কারণে বেনাপোল-পেট্রাপোলে ভ্রমণ পিপাসুদের জট লেগেই থাকছে। এরপর পথে রয়েছে তীব্র যানজট, প্রাকৃতিক ডাকে সারা দেওয়ার বিপত্তি। কিন্তু রেলে সে বালাই নেই। উল্টো রয়েছে জম্পেশ খাওয়া-দাওয়া আর টয়লেটের ব্যবস্থা। যাত্রীদের হয়রানিও কমে গেছে।

রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর যোগাযোগের একমাত্র রুট এই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। এই ঘাটের নানাবিধ বিড়ম্বনার কারণে কলকাতা বা ভারতে যেতে ইচ্ছুক যাত্রীরা এখন ঝুঁকেছেন মৈত্রী এক্সপ্রেসের দিকে। কিন্তু তিন সপ্তাহের আগে মিলছে না কোনো টিকিট। তাই আশাহত হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে যাত্রীদের। মৈত্রীর টিকিট যেন মহার্ঘমৈত্রী চালু হওয়ার সাড়ে ৯ বছর বাদে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয় ৮ ডিসেম্বর থেকে। ঢাকা-কলকাতা  ৫৩৮ কিলোমিটার রেলপথের যাত্রী ভাড়া এখন কেবিন ২ হাজার ৫২২ টাকা। সঙ্গে ভ্যাট ৩৭৮ টাকা, ট্রাভেল ট্যাক্স ৫০০ টাকাসহ মোট ভাড়ার পরিমাণ ৩ হাজার ৪শ’ টাকা। আগে ট্রাভেল ট্যাক্সসহ কেবিন ভাড়া ছিল ২ হাজার ৩৮৬ টাকা।
 
নতুন হারে এসি চেয়ারকোচের   ভাড়া বেড়েছে ১ হাজার ৭৪৮ টাকা। ভ্যাট ২৫২ টাকা ও ট্রাভেল ট্যাক্স ৫০০ টাকাসহ মোট আড়াই  হাজার টাকা। আগে ট্রাভেল ট্যাক্স ৫০০ টাকাসহ ভাড়া ছিল ১ হাজার ৬৩২ টাকা।  

একলাফে এতো ভাড়া বাড়লেও যাত্রী সংখ্যা হ্রাস পায়নি। স্বচ্ছন্দ্যের কারণে বরং দিন দিন মৈত্রীর চাহিদা বাড়ছে।

দু’দেশের স্থল পথের যাত্রীদের কাছ থেকে বাংলাদেশ সরকার ৫০০  টাকা ট্রাভেল আদায় করলেও ভারত কোনো ট্রাভেল ট্যাক্স আরোপ করেনি। ভারতীয় নাগরিকদেরও বাংলাদেশ থেকে দেশে ফেরার পথে ট্রাভেল ট্যাক্স গুণতে হয়।

বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ রেলওয়ের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, যাত্রী বৃদ্ধির কারণে ভাড়া বাড়ানো হয়নি। রেলের ওই কর্মকর্তা মৈত্রীর ভাড়া বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে উল্লেখ করলেন। তিনি জানান, মৈত্রী থেকে বিপুল আয় করে রেল মন্ত্রণালয় বছরে লাভের মুখ দেখছে।

তবে মৈত্রীতে যারা নিয়মিত যাতায়াত করেন তারা বলছেন, যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি দেখেই বাংলাদেশ রেল মন্ত্রণালয় ভাড়াবৃদ্ধি করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। তাই কলকাতা ভ্রমণে এখন আরামদায়ক হচ্ছে মৈত্রী। আগে রেলে ১১ ঘণ্টা সময় নিলেও এখন কাস্টমস-ইমিগ্রেশন প্রান্তিক স্টেশন ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন এবং কলকাতার চিৎপুর স্টেশনে তা সমাধা করায় সময় লাগছে ৮ ঘণ্টা।

মৈত্রী ট্রেন বর্তমানে সপ্তাহে ৪ দিন ঢাকা-কলকাতার মধ্যে চলাচল করছে। এখন মৈত্রী প্রতি সপ্তাহের রোববার, বুধবার, শুক্রবার ও শনিবার কলকাতায় যাচ্ছে। যদিও দাবি উঠেছে সপ্তাহের সাতদিনই চলাচলের।  

ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন এবং কলকাতা স্টেশনে (চিৎপুর) স্টেশনে ইমিগ্রেশন-কাস্টমস সার্ভিস চালু হওয়ায় মৈত্রীর চেয়ার ও কেবিনের ৪৫৬টি আসনের সবগুলোই বিক্রি হয়ে যায়।  

এতোদিন ভারতের গেদে স্টেশন এবং বাংলাদেশের দর্শনা স্টেশনে যাত্রীদের ইমিগ্রেশন-কাস্টমস করা হতো। এমনকি রোগী বা বৃদ্ধদেরও ট্রেন থেকে মালপত্রসহ নেমে ইমিগ্রেশন-কাস্টমস পরীক্ষা করাতে হতো। সেই বিড়ম্বনা দূর হয়েছে।

মৈত্রীর পাশাপাশি গত ১৬ নভেম্বর থেকে সপ্তাহে একদিন বৃহস্পতিবার খুলনা-কলকাতা রুটে ‘বন্ধন’ এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হয়েছে। সময় নিচ্ছে সাড়ে ৫ ঘণ্টা। আগামীতে বেনাপোল রেল স্টেশনের পরিবর্তে খুলনা রেলস্টেশনে ইমিগ্রেশন-কাস্টমস সারা হলে ২ ঘণ্টা সময় সাশ্রয় হবে।

দু’দেশের রেল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক দিল্লি বৈঠকে ২০১৮ সালের মধ্যে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করারও তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১৮
এসএস/এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।