ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রেকার বিল যেখানে ‘রুট পারমিট’!

প্রশান্ত মিত্র, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৮
রেকার বিল যেখানে ‘রুট পারমিট’! সিএনজি চালিত অটোরিকশা

ঢাকা: সিএনজি চালিত অটোরিকশায় চালকের আসন ভাগাভাগি করে যাত্রী বসানোর নিয়ম নেই। নগরীর মধ্যে মিটারে চলাচলেরও রয়েছে বাধ্যবাধকতা। তবে এসব নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা গুলশানেই নিয়মিত চলাচল করছে এসব সিএনজি।

আর এসব অবৈধ সিএনজিগুলোকে কৌশলে চলাচলের সুযোগ করে দিচ্ছে খোদ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। সিএনজি আটকে রেকার বিলের নামে আদায় করা হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।

সেই টাকা পরিশোধের রশিদ দেখিয়েই দিনভর বিনা বাধায় চলাচলের অনুমতি পান বলে জানিয়েছেন চালকরা। ট্রাফিক পুলিশের রেকার বিলই যেন এখানে সিএনজি চালিত অটোরিকশার ‘রুট পারমিট’!

শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে বনানী মোড় থেকে গুলশানের সড়ক ধরে খানিকটা এগুতেই গুলশান-২, নতুনবাজারগামী যাত্রীদের দৃষ্টি আকর্শন করতে সিএনজি চালকদের হাঁক-ডাক দেখা যায়। তবে বনানী থেকে গুলশান ২ নম্বর চত্ত্বর পর্যন্ত ১ কিলোমিটারের কিছুটা বেশি দূরত্বের পথের জন্য যাত্রীপ্রতি ১৫ টাকার কথা শুনে যাত্রীরা অনেকেই ভ্রু কুঁচকালেন।

প্রতিনিয়ত গুলশান-২ পর্যন্ত ১০ টাকা ভাড়া নিলেও আজ ভাড়া বেশির কারণ জানতে চাইলে সিএনজি চালক রুবেল বাংলানিউজকে বলেন, ‘মামা গত একমাস ধরে রাস্তায় সিএনজি চলতে দেয়না। একটু আগে পুলিশরে ১২শ’ টাকা দিয়া আসছি। ১৫ টাকার কমে যাইতে পারমু না। ’
সিএনজি আটকের রেকার বিল
চলক রুবেলের কথা শুনেই এক যাত্রী রেগে গিয়ে বলেন, ‘পুলিশরে টাকা দিস কেন তোরা? অনিয়ম করবি তোরা, জরিমানা দিবি তোরা। আর সেই জরিমানা যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করবি? তোদের না পোষালে গাড়ি চালাস কেন?’

উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়-অসন্তোসের পরও নিরুপায় যাত্রীদের চালক রুবেলের নির্ধারিত ভাড়াতেই সিএনজিতে উঠতে দেখা গেলো।

নিয়ম ভঙ্গ করে চালকের দুই পাশে দু’জনসহ মোট পাঁচজন যাত্রী উঠিয়ে চলাচল করছে সিএনজিগুলো। একইসঙ্গে নিজেদের ইচ্ছে অনুযায়ী যেমন খুশি ভাড়া আদায় করার অনিয়মগুলোই নিয়মে পরিণত করেছেন এসব চালকরা।
 
চালক রুবেলের কাছে পুলিশকে টাকা দেওয়ার বিষয়ে আবারও জানতে চাইলে তিনি ডিসি ট্রাফিক কার্যালয়ের একটি রশিদ দেখান। রশিদে উল্লেখ অনুযায়ী শর্ত ভঙ্গের অপরাধে রেকার ভাড়া বাবাদ তার কাছ থেকে ১২শ’ টাকা আদায় করা হয়েছে।

তিনি জানান, আজ একবার রেকার ভাড়া নেওয়ায় সারাদিন ওই রুটে সিএনজি চালাতে কোনো সমস্যা হবে না। আবার আটকালে এ রশিদ দেখালেই তিনি ছাড়া পেয়ে যাবেন।
 
প্রতিদিনই টাকা দিতে হয় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশ ধরলে অনুরোধ করে যতোটা সম্ভব জরিমানা কম দিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করেন চালকরা। গাড়ি চালাতে হবে তাই বাধ্য হয়ে জরিমানা দিয়েই চলাচল করেন।

এ বিষয়ে ডিএমপি ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) প্রবীর কুমার রায় বাংলানিউজকে বলেন, ‘অবৈধ গাড়ির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অবৈধ গাড়িগুলো ধরে আমাদের ডাম্পিংয়ে পাঠানোর কথা। কিন্তু আমাদের কোনো ডাম্পিং প্লেস নেই। তাই ডাম্পিংয়ের বিকল্প হিসেবে আমরা রেকার বিল আদায়সহ মামলা করি। কিন্তু সেই রশিদ দেখিয়ে তাদের চলাচলের কোনো সুযোগ নাই। ’

অনেকেই রেকার বিলের রশিদ দেখিয়ে চলা ফেরার করছে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মামলা হলে চালক নির্দিষ্ট পরিমাণ জরিমানার টাকা পরিশোধ করে। এটাতো কোনো রুট পারমিট না। ’

আজ (শনিবার) ভিভিআইপি মুভমেন্টের কারণে আমাদের অন্যদিকে ব্যস্ততা ছিলো। কিন্তু বিষয়টা আরও কঠোরভাবে দেখার আশ্বাস দেন তিনি।

এদিকে, ওই রুটে গাড়ির স্বল্পতা রয়েছে উল্লেখ করে ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার বলেন, ওই পথে লোকজনের অনেক কষ্ট হয়। বনানী থেকে গুলশান বা বাড্ডাগামী মানুষগুলো কীভাবে যাবেন? ঢাকার চাকা বাস কয়টা? যেখানে ডিমান্ড থাকবে সেখানে সাপ্লাই হবেই।

তবে মোটরযান আইন অনুযায়ী যারা আইন অমান্য করছে তাদের বিরুদ্ধে ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান ডিসি প্রবীর কুমার।

বাংলাদেশ সময়: ০৩২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৮
পিএম/জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।