সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি-অর্গানাইজড ক্রাইম) মোল্যা নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, অবস্থাসম্পন্ন মানুষদের টার্গেট করে পুরস্কার ও পার্সেল দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চক্রটি প্রতারণা করছে।
এর জন্য তারা ফেসবুকে একাউন্ট খুলে নিজেদের ইউরোপিয়ান ও আমেরিকান বলে পরিচয় দিয়ে প্রথমে বন্ধু তৈরি করে। এরপর প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় কোটি টাকা।
সম্প্রতি নাদিরা আক্তার নামে এক চিত্রশিল্পী ইংল্যান্ডের একটি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ছবি পাঠান। প্রতারকরা নাদিরার যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে তাকে ফোন করে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছেন বলে জানায়। চট্টগ্রাম বন্দরে তার জন্য একটি পার্সেল রয়েছে বলে প্রতারক চক্রের সদস্য থমাস কিং তাকে জানান। সেখানে ৩ লাখ পাউন্ড (বাংলাদেশি প্রায় ৩ কোটি টাকা) ও আকর্ষণীয় পুরস্কার আছে।
এরপর শামীমা রহমান নামে এক নারী চট্টগ্রাম বন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়ে নাদিরাকে ফোন করেন। পার্সেলটিতে পাউন্ড থাকায় সেটি আটক করে মামলা করা হয়েছে বলে জানান। এটি ছাড়িয়ে নিতে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা দিতে বলেন। পরবর্তীতে নানা কথা বলে আরও ২ লাখ টাকা আদায় করেন। কয়েক দফায় সব মিলে মোট ১ কোটি ১ লাখ ৯৮ হাজার ৪০০ টাকা আদায় করেন।
ভুক্তভোগী টাকা পরিশোধের পর থমাস কিং-এর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি নাদিরাকে পার্সেলটি আর পাওয়া যাবে না বলে জানান এবং তাকে হুমকি দেন। এরপর নাদিরা রাজধানীর বনানী থানায় মামলা করেন।
মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতারের পর তাদের ২০টি ফেসবুক একাউন্ট পাওয়া গেছে। এগুলো ব্যবহার করে তারা প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করতো। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকে ১৯টি একাউন্ড পাওয়া গেছে, যেখানে টাকা লেনদেন হয়েছে। সেসব একাউন্টধারীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, নাইজেরিয়ান আসামিদের সবাই ফেনী সকার ক্লাবের ফুটবলার। তারা মোহামেডন ও আবহানীর পক্ষেও ফুটবল খেলেছেন।
এই চক্রের সদস্যদের এর আগেও প্রতারণার অভিযোগে মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সদস্যরা গ্রেফতার করে। তারা জামিনে বের হয়ে আবারও প্রতারণার ফাঁদ পাতে।
আমরা তাদের পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করবো। সেই সঙ্গে অর্গানাইজেশন অব মাইগ্রেশনের সঙ্গেও লিখিতভাবে যোগাযোগ করা হবে।
তারা যেসব ক্লাবে ফুটবল খেলেছে, সেখানে কিভাবে এবং কতদিন আগে এসেছে সে বিষয়ে তদন্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, এই চক্রের অন্য সদস্য কথিত চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্মকর্তা শামীরা রহমানকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা ধারণা করছি, ওই নারী কোনো আসামির স্ত্রী বা প্রেমিকা।
এই ঘটনায় মানি লন্ডারিং আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন। একাউন্ট হোল্ডারদেরও এই মামলায় আসামি করা হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৮
এসজেএ/আরআর