সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ের করবী হলে তার সঙ্গে যৌথ বিবৃতি দিচ্ছিলেন সুইস রাষ্ট্রপতি।
এর আগে দুপুর ৩টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শিমুল হলে একান্ত বৈঠকে বসেন শেখ হাসিনা ও বেরসে।
বেরসে বলেন, রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশ যে মানবিক ভূমিকা পালন করছে, সেটাকে সাধুবাদ জানাচ্ছে সুইজারল্যান্ড। এই সংকটের সঙ্গে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের প্রশ্ন জড়িত। মানবতা, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের স্বার্থে এই সংকটের সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকবে সুইজারল্যান্ড।
রোহিঙ্গাদের সহায়তায় সুইজারল্যান্ড এর আগে ৮০ লাখ ফ্রাংক দিয়েছে জানিয়ে দেশটির রাষ্ট্রপতি বলেন, এ দফায় আমরা আরও ১২ মিলিয়ন (১ কোটি ২০ লাখ) ফ্রাংক দেবো বিপদগ্রস্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তায়।
তিনি রোহিঙ্গাদের দেখার জন্য কক্সবাজার যাবেন বলেও জানান বিবৃতিতে।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে সুইস রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে দু’দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চার দশকেরও বেশি সময় ধরে। এই সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে সুইজারল্যান্ড প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। উন্নয়ন ও বাণিজ্যখাতে বাংলাদেশের সঙ্গে আরও গভীর সম্পর্ক গড়তে চাই। তিনি বলেন, ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ যেভাবে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে, তা প্রশংসনীয়। সবুজ অর্থনীতি, তথ্যপ্রযুক্তি খাতসহ একাধিক বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বেরসে বলেন, বাংলাদেশ গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করতে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় যে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সুইজারল্যান্ড তা গুরুত্ব দেয়। কেননা গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন দুই দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের মূল ভিত্তি। সুইজারল্যান্ড এই নীতিতে বাংলাদেশ সরকার, সুশীল সমাজ এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বিবৃতিতে বলেন, আমরা দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা করেছি। মিয়ানমার এই সমস্যা তৈরি করেছে, তাই মিয়ানমারকেই এর সমাধান করতে হবে। এর জন্য দ্রুত কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। রোহিঙ্গাদের নিরাপদে সম্মানের সঙ্গে তাদের দেশে ফেরত নিতে হবে।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সুইজারল্যান্ড জাতিসংঘে যে ভূমিকা রেখেছে তার জন্যও দেশটির রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডের দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে আমরা একমত হয়েছি। আমি খুবই আনন্দিত, দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের ব্যাবসায়িক প্রতিনিধি দল ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়ে মতবিনিময় করেছে।
সুইস রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা উভয় দেশই একমত হয়েছি যে, ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে যে বিষয়গুলো রয়েছে, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী সুইস ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, সুইজারল্যান্ডের অনেক বহুজাতিক কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা করছে। আশা করি আরও সুইস কোম্পানি আমাদের দেশে ব্যবসায় আগ্রহী হবে। আমি তাদের তেল ও গ্যাস, নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, অবকাঠামো উন্নয়ন, আইসিটি, ব্যাংক, বিমা এবং ফার্মাসিউটিক্যালসে বিনিয়োগের আহ্বান জানাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৮
এসকে/এইচএ/
** প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সুইস রাষ্ট্রপতি