ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রাবেয়াকে ঋণমুক্ত করলেন ইউএনও

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০১৮
রাবেয়াকে ঋণমুক্ত করলেন ইউএনও ঋণ শোধ করে রাবেয়ার হাতে সনদ তুলে দিচ্ছেন ইউএনও দেওয়ান মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম

জামালপুর: জামালপুরের বকশীগঞ্জে অভাবের তাড়নায় সন্তান বিক্রি করতে হয়নি রাবেয়াকে। রাবেয়ার সমস্ত ঋণ পরিশোধ করেছেন বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেওয়ান মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

মঙ্গলবার (৬ নভেম্বর) বেসরকারি সংস্থা গ্রামীন ব্যাংক ও আশার সমস্ত দায়-দেনা পরিশোধ করে একটি সনদ তুলে দেন রাবেয়ার হাতে।  

স্থানীয়ভাবে জানা যায়, বকশীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমপাড়ার ৪ সন্তানের জননী হতদরিদ্র রাবেয়া (৩০) স্থানীয় গ্রামীণ ব্যাংক ও আশা অফিস থেকে নিজ নামে সাপ্তাহিক কিস্তিতে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নেন।

 

ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে রাবেয়ার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম স্ত্রী ও সন্তানদের রেখে নিরুদ্দেশ হন। কোনো উপায় না পেয়ে রাবেয়া সন্তানদের নিয়ে বয়োবৃদ্ধ দিনমজুর অচল অন্ধ বাবা আঙ্গুর মিয়ার অভাবের সংসারে এসে ওঠেন। কিন্তু অন্ধ বাবার পক্ষে মেয়ে ও তার ৪ সন্তানের ভরণপোষণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই সন্তানসহ অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটতে থাকে রাবেয়ার। একদিকে অভাব অন্যদিকে এনজিওর ঋণের কিস্তির চাপ রাবেয়াকে অতিষ্ট করে তোলে। ঋণ থেকে বাঁচতে নিজের গর্ভের সন্তান বিক্রি করতে বাধ্য হন রাবেয়া। সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা রাবেয়া নিজের নিঃসন্তান আপন বোন দিলারী বেগমের কাছে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন তার অনাগত সন্তানকে। এরই মধ্যে পাঁচ হাজার টাকাও নিয়েছেন তিনি। বাকি টাকা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর দেওয়ার কথা ছিল।  

এ ব্যাপারে বাংলানিউজে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ৫ সেপ্টেম্বর বকশীগঞ্জ ইউএনও দেওয়ান মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম  রাবেয়ার নিজ বাড়িতে ছুটে যান।  তাকে নগদ ১৫ হাজার টাকা সহয়তা দেন। ইউএনওর কাছে নগদ টাকা সহায়তা পেয়ে গর্ভের অনাগত সন্তান বিক্রির অগ্রীম টাকা ফেরৎ দেন রাবেয়া। রক্ষা পায় গর্ভের সন্তান।

একই সময় ইউএনও রাবেয়ার সু-চিকিৎসা ও ঋণ পরিশোধের  প্রতিশ্রুতি দেন। এর অংশ হিসেবে রাবেয়ার ঋণের ৭০ হাজার টাকা পরিশোধের জন্য দেওয়ান মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তিদের কাছে আবেদন জানালে ১৬ হাজার টাকা সংগ্রহ হয়। বাকি টাকা ইউএনও তাজুল ইসলাম নিজ বেতন থেকে পরিশোধ করে রাবেয়াকে ঋণ মুক্ত করেন। সঙ্গে দেওয়া হয় সরকারি সাহায্য বাবদ ল্যাকটেটিং মাদারের কার্ডও।  

এছাড়া সন্তানের প্রতিপালনের দায়িত্বও নেন ইউএনও দেওয়ান মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

সনদ হস্তান্তরের সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান, যুব উন্নয়ন অফিসার সুলতান মাহমুদ, মহিলা বিষয়ক সুপারভাইজার সুশান্ত বাবু, ইফা সুপারভাইজার মোশাররফ হোসেনসহ গণমাধ্যম কর্মীরা।

** জামালপুরে অভাবের তাড়নায় গর্ভের সন্তান বিক্রি!

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।