ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

প্রথমবার নাতিকে দেখেও আদর করতে পারলেন না নানি

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৮
প্রথমবার নাতিকে দেখেও আদর করতে পারলেন না নানি দুই বাংলার মিলন মেলা। ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: আদরের নাতিকে এক নজর দেখতে ভারতের কুচবিহার থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে ছুটে এসেছেন বৃদ্ধা ননী বালা (৭০)। তবে প্রথমবারের মতো নাতি আকাশ চন্দ্রকে (০১) দেখলেও বুকে জড়িয়ে আদর করতে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

শ্যামা পূজা উপলক্ষে বুধবার (০৭ নভেম্বর) লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের আলাউদ্দিন নগর সীমান্তের ২২নং গেটে বসেছে দুই বাংলার মিলন মেলা। সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে এ মিলন মেলা।

বৃদ্ধা ননী বালার মেয়ে লিপি রানী বাংলানিউজকে জানান, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সাবেক ছিটমহল উত্তর গোগামীতে তার বাবার বাড়ি ছিলো। ছিটমহল বিনিময়ের পর ভারতে পাড়ি জামান তার বাবা-মা ও ভাইসহ পুরো পরিবার। তারা দুই বোন বাংলাদেশে থেকে যান। একই রক্তের হলেও তারা এখন ভিনদেশী। প্রযুক্তির যুগে কথা হলেও সরাসরি দেখা হয় না তাদের।  

শ্যামা পূজা উপলক্ষে আলাউদ্দিন নগর সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ায় বসেছে দু’দেশের মিলন মেলা। এ মেলায় মা-বাবা ও ভাইকে দেখতে তারা ছুটে এসেছেন। তার একমাত্র ছেলে আকাশকে এই প্রথম দেখলেন তার বৃদ্ধ বাবা-মা। কথা হলেও মায়ের বুকে আশ্রয় নিতে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন লিপি রানী। তার সঙ্গে এসেছেন বড় বোন সোভা রানী। ছুঁয়ে দেখতে না পেলেও চোখ মেলে দেখতে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন সোভা রানী।

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ভারতে থাকা শ্যালিকা জয়ন্তী রাণীকে দেখতে এসেছেন দুলাভাই লক্ষ্মী চন্দ্র রায়। তার একমাত্র ছেলে সুশান্তকে (০২) এক নজর দেখতে ভারতের ওপারে কাঁটাতারের পাশে অপলক চোখে দেখছেন জয়ন্তী রানী।  

লক্ষ্মী চন্দ্র বাংলানিউজকে জানান, মোবাইলে ছবি দেখেছেন। কিন্তু বাস্তবে আজ দেখা হলো। এক সঙ্গে বসে খাওয়া না হলেও বাড়িতে রান্না করা খাবার কাঁটাতারের বেড়া ভেদ করে পাঠিয়েছেন ওপারে।  

ভারতে থাকা মা সিন্দু বালা ও ভাই বিষাদু চন্দ্রকে এক পলক দেখতে ছুটে এসেছেন পাটগ্রামের জগৎবেড় এলাকার রাধিকা রাণী। মায়ের জন্য পৌষ পার্বণের পিঠা তৈরি করে নিয়ে এসেছেন। ইচ্ছা ছিল নিজ হাতে মাকে খাইয়ে দেওয়ার। কিন্তু দুই দেশের কাঁটাতারের বেড়ার কারণে সেই ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে গেলে রাধিকা রাণীর।  

চোখের পানি মুছতে মুছতে রাধিকা রাণী বাংলানিউজকে বলেন, তার হাতের তৈরি পিঠা মায়ের খুব পছন্দ। ছিটমহল বিনিময়ের পর থেকে মায়ের সেই ইচ্ছা পূরণ করতে পারছেন না তিনি। নিজ হাতে মাকে পিঠা খাওয়ানোর স্বাদ থাকলেও তা পূরণ হয়নি। তার হাতে তৈরি পিঠা মায়ের হাতে পৌঁছে দিতে পেরে বেজায় খুশি রাধিকা রাণী।

সনাতন ধর্মলম্বীদের শ্যামা পূজা উপলক্ষে পাটগ্রাম আলাউদ্দিন নগর সীমান্তের ২২নং গেটে বসে দুই বাংলার মিলন মেলা। বাংলাদেশের দর্শণার্থীরা কাঁটাতারের বেড়া ভেদ করে খাদ্য সামগ্রী ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আদান প্রদান করছেন ভারতীয় আত্নীয়দের সঙ্গে। এ সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাদের সকল পুটলি তল্লাশি করলেও বডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তল্লাশির কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৮
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।