ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঢাকা-রিয়াদ সম্পর্কের সোনালী যুগ

তৌহিদুর রহমান, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৮
ঢাকা-রিয়াদ সম্পর্কের সোনালী যুগ

ঢাকা: মহাজোট সরকার গত দুই দফা ক্ষমতায় থাকাকালে ঢাকা-রিয়াদ সম্পর্কের নতুন মাত্রা পেয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি আরবের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, সামরিকসহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বেড়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি সফরের মধ্যে দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের আগামী দিনের জন্য শুভ বার্তাও দিয়েছে রিয়াদ।  

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বেড়েছে। তবে সৌদি আরবের নেতৃত্বে সন্ত্রাস বিরোধী সামরিক জোটে অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে এ সম্পর্কে নতুনমাত্রা যোগ হয়েছে।

এছাড়া জনশক্তি রফতানির নতুন সুযোগও তৈরি হয়েছে।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সন্ত্রাস বিরোধী লড়াইয়ের জন্য মুসলিম দেশগুলোকে নিয়ে সামরিক জোট গঠন করে সৌদি আরব। এ জোটে ৩৪ টি মুসলিম দেশ যোগ দেয়। তবে সামরিক জোটে যোগ দেওয়ার বিষয়ে শুরুতেই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলো বাংলাদেশ। পরে অনেক ভেবে চিন্তে এ জোটে বাংলাদেশ যোগ দেয়। সৌদি নেতৃত্বে সামরিক জোটে যোগ দিলেও বাংলাদেশ বলেছে, যুদ্ধের জন্য এ জোটে কোনো সৈন্য পাঠানো হবে না। সামরিক প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা বিনিময়, সামরিক মহড়ার জন্য সৈন্য পাঠাবে বাংলাদেশ। তবে মুসলিমদের মক্কা ও মদিনার দুই প্রধান মসজিদ আক্রান্ত হলে বাংলাদেশ যুদ্ধের জন্য সৈন্য পাঠাবে। সামরিক জোটে যোগ দেওয়ার মধ্যে দিয়ে ঢাকা-সৌদি আরব সম্পর্কে নতুন মাত্রা পায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল-সৌদের আমন্ত্রণে গত ১৭-১৮ অক্টোবর সৌদি আরব সফর করেছেন। এ সফরে সৌদি আরবের বাদশাহ প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ সম্মান দেখিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি রাজপ্রাসাদে গেলে সৌদি বাদশা স্বয়ং রাজপ্রাসাদের দরজায় এসে শুভেচ্ছা জানান। আবার বৈঠক শেষে রাজপ্রাসাদের দরজায় এসে বিদায়ও জানান সৌদি বাদশা। যেটা সচরারচর কোনো বারই হয় না।  

সৌদি আরবে চলতি বছর ১৮ মার্চ-১৬ এপ্রিল একটি যৌথ সামরিক মহড়ায় বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে। এ মহড়ায় মোট ২৩টি দেশ অংশ  নেয়। সৌদি বাদশাহরে আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী চলতি বছর ১৬ এপ্রিল যৌথ মহড়ার সমাপনী ও কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি বাদশার আমন্ত্রণে রিয়াদে গত বছর ২১ মে অনুষ্ঠিত আরব ইসলামিক আমেরিকান সামিটে অংশ নেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালের ৪-৭ জুন সৌদি বাদশার আমন্ত্রণে সে দেশ সফর করেন। এসব সফরের মধ্যে দিয়ে ঢাকা-রিয়াদ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।  

এদিকে সৌদি আরব বাংলাদেশের সবচেয়ে শ্রম বাজার। তবে নানা অনিয়মের কারণে সৌদি আরবে প্রায় ৬ বছর ধরে শ্রম বাজার বন্ধ ছিলো।  তবে ২০১৫ সালে সৌদি আরবের শ্রম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নারী কর্মী পাঠানোর জন্য চুক্তি হয়। সে অনুযায়ী ১২ ক্যাটাগরিতে নারী কর্মীদের নেয় সৌদি আরব। যদিও সৌদি আরবে নারী কর্মী পাঠানো নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। নারী কর্মীদের সঙ্গে এখন ভাই, স্বামী বা নিকটাত্মীয় পাঠানোর বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। সৌদি আরব এ বিষয়ে রাজিও হয়েছে।  

সৌদির নতুন নেতৃত্ব দেশটিকে এখন ঢেলে সাজাতে চাইছেন। বিভিন্ন  খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি। সৌদির মধ্যে পরিবর্তনের ধারাও সূচনা হয়েছে। সে কারণে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে শ্রম বাজার প্রসারের পথও খুলেছে। সৌদি আরবের শ্রম মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের উপমন্ত্রী আহমেদ এফ আল ফাহিদ বেশ কয়েক বার বাংলাদেশ সফর করেছেন। আল ফাহিদের সঙ্গে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ থেকে অধিক হারে জনশক্তি নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন।  

পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে  সৌদি আরবের ভ্রাতৃপ্রতীম সর্ম্পক বিদ্যমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরর্দশী নেতৃত্বে ও দক্ষ কূটনৈতিক তৎপরতায় সাম্প্রতকি বছরগুলোতে বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি আরবের সর্ম্পক আরো জোরালো ও বহুমুখী হয়েছে। আবহমান ধর্মীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের পাশাপাশি সামরিক ক্ষেত্রেও সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সম্প্রসারতি হচ্ছে। আগামী দিনেও দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরালো হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ০২৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৮
টিআর/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।