ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রাজাকারমুক্ত সংসদের দাবি সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৮
রাজাকারমুক্ত সংসদের দাবি সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সংবাদ সম্মেলন/

ঢাকা: রাজাকারমুক্ত সংসদ গঠনের দাবি জানিয়েছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ৭১। 

শনিবার (১০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত এক নাগরিক সংলাপে ফোরামের পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়। ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ ও নির্বাচন-২০১৮' শীর্ষক এ নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

 

সংলাপের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার।

মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭৫ সালের পর আমরা যে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলেছিলাম সেটি ফিরে পাবার টার্নিং পয়েন্ট এবারের নির্বাচন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে বিজয়ী করতে হবে। আমরা চাই বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের। স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পরীক্ষিত শক্তিকে বিজয়ী করে শোষণহীন দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, স্বাধীনতার বিরোধী শক্তিকে প্রতিরোধ করতে হবে। ১৯৭৫ সালে যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছে তাদেরই পুনর্গঠিত একটি ফোরাম হচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট। এরা বঙ্গবন্ধুর কথা বলে আসলে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীদের সংগঠিত করছে। তাই নতুন ভোটারদের কাছে যেতে হবে। তাদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলতে হবে। সর্বোচ্চ ঐক্যবদ্ধ হয়ে শেখ হাসিনার সরকারকে পুনর্নির্বাচিত করতে হবে।

সাবেক ডাকসু ভিপি অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেন, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের আজকের বক্তব্য তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছাতে হবে। এটি সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের পুনর্বাসন করেছিল। তারপর তার প্রত্যেকটি কাজই ছিল মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী। সংবিধানের নানা পরিবর্তন করেছেন তিনি। তারা মূলত নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের কথা ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। এ কারণেই তারা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের দিনকে জন্মদিন হিসেবে পালন করেছেন।

তিনি আরো বলেন, ড. কামালের সাত দফার প্রথম দফা আদালতে বিচারাধীন একজন অপরাধীর মুক্তির দাবি। আমি মনে করি এটিই তার মূল দাবি। তাই আগামী বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে হলে আসন্ন নির্বাচনে এ সরকারকে ফিরিয়ে আনতে যা করার তাই করতে হবে।  

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হারুন হাবীব তার বক্তব্যে বলেন, এবারের নির্বাচনে একটি রাজাকারমুক্ত সংসদ দেখতে চাই। সংসদে সরকারি দল এবং বিরোধীদল সবই  হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির। এর আগে আমরা রাজাকারদের গাড়িতে পতাকা উড়তে দেখেছি। তা আর দেখতে চাইনা। মুক্তিযুদ্ধের পরীক্ষিত শক্তিকে বিজয়ী করতে হলে, যুদ্ধাপরাধীদের যে বিচার শুরু হয়েছিল তা চলমান রাখতে হলে বর্তমান সরকারকে পুনরায় নির্বাচিত করতে হবে।  

জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. শফিকুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন- তিনি বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সংলাপ করবেন না। তিনি তার কথা রেখেছেন। তিনি বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে সংলাপে বসেন নি। তিনি সংলাপ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সঙ্গে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন জোটকে আবার ক্ষমতায় আনতে হবে। যে উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে, পদ্মা সেতু মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেল তা সম্পূর্ণ করতেই এ সরকারকে আবার ক্ষমতায় আনতে হবে। আমি মনে করি পিয়ারু সরদারের মোরগ-পোলাও খাইয়ে আপ্যায়ন করে প্রধানমন্ত্রী যে সংলাপ সম্পন্ন করেছেন তারপরে মনে হয় না বিএনপি নির্বাচন বয়কট করবে।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, আ স ম রব'রা ঐক্যফ্রন্টের নামে কার্যত ২০দলীয় জোটের প্রতিনিধিত্ব করছে। এ জোটকে এবার নির্বাচনে আসতেই হবে। সেখানে জামায়াতের যে প্রতিনিধি রয়েছে তাদের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেন তারা সেটাও দেখতে হবে। তারা যদি একাত্তরের দালালদের মনোনয়ন দেন। তাহলে মুখ লুকানোর কোন সুযোগ পাবেন না। নির্বাচন কমিশনকে ধিক্কার জানিয়ে তিনি বলেন, জোটগতভাবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি দলের প্রতীক নেওয়ার যে বিশেষ সুযোগ কমিশন দিয়েছে সেটা কাদের স্বার্থে দেওয়া হল? মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির কারো নির্বাচন করার সুযোগ থাকা উচিত না। এটা নিশ্চিত করতে হবে।  

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ড. সারোয়ার আলী বলেন, গণতন্ত্রের মূল বিষয় হলো নির্বাচন। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও সেটি কীভাবে হবে তা এখনো ঠিক হলো না। প্রতি পাঁচ বছর পর পর এ নিয়ে একটি সমস্যা তৈরি হয়। সংবিধানে যে সমাধান দেওয়া আছে, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেভাবে নির্বাচন হয় সেভাবে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।  

সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার উল আলম শহীদের সঞ্চালনায় নাগরিক সংলাপে আরো বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ, লায়লা হাসান, নারী নেত্রী রোকেয়া কবির, ফোরামের ঢাকা বিভাগীয় সভাপতি আবুল হাসিম ভুঁইয়া, ড. মনসুর আহমেদ, সাবেক সচিব ড. খন্দকার শওকত হোসেন প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৮
এমএএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।