২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুরে সনি সিনেমা হলের সামনে অবৈধ পার্কিং অবস্থায় পাওয়া যায় ঢাকা মেট্রো-চ-১৫ সিরিয়ালের একটি মাইক্রোবাস। সেখানকার দায়িত্বরত ট্রাফিক সদস্য গাড়ির চালক বা মালিককে না পেয়ে ভিডিও রেকর্ড করেন।
রাজধানীতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় এমন ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে দায়িত্বপালনরত প্রায় সব ট্রাফিক সার্জেন্টের কাছেই রয়েছে ‘বডি অন ক্যামেরা’। এই অ্যাকশন ক্যামেরায় সবকিছুই রেকর্ড হতে থাকে সার্বক্ষণিক। এছাড়াও ট্রাফিকের চারটি বিভাগের (উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম) প্রতিটি জোনেই আছে ভিডিও টিম। পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো আছে স্থায়ী ক্যামেরা। ক্যামেরায় ধরা পড়ে মামলার জরিমানা দিতে হয়েছে প্রভাবশালী ব্যক্তিদেরও।
প্রতিটি বিভাগে প্রতিদিন আলাদা আলাদাভাবে যাচাই-বাছাই করা হয় এসব ভিডিও। ভিডিও থেকে ট্রাফিক আইন অমান্য করা যানবাহন শনাক্ত করে সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ডিএমপির মুখপাত্র উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ২০১৫’র শুরুর দিকে এভাবে মামলা করা ও জরিমানা আদায় শুরু হয়। এখন এটি বেশ নিয়মিত ঘটনা। ভিডিওতে যখন ট্রাফিক আইন ভঙ্গের কোনো ঘটনা ধরা পড়ে তখন আমরা বিআরটিএ থেকে ওই মোটরযানের মালিকের পরিচয় এবং ঠিকানা সংগ্রহ করি। তখন তাকে চিঠি দিয়ে নোটিশ আকারে জানাই। তার সন্দিগ্ধ অপরাধ চিঠিতে উল্লেখ করে একটি নির্দিষ্ট তারিখে তাকে সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক বিভাগে উপস্থিত থাকতে বলা হয়।
নির্দিষ্ট দিনে ট্রাফিক কার্যালয়ে উপস্থিত হলে মোটরযানের মালিককে আইন ভঙ্গের ভিডিও বা স্থিরচিত্র দেখানো হয়। এরপর তার কোনো বক্তব্য থাকলে সেই বক্তব্য সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এছাড়াও অনেক সময় মোটরযানের চালক বা মালিক আইন ভঙ্গের বিষয়টি স্বীকার করতে চান না। তাই অপরাধের একটি প্রমাণস্বরূপ এমন ভিডিও করা হয় বা স্থিরচিত্র তুলে রাখা হয়।
ডিএমপির চিঠির জবাবে কার্যালয়ে না আসলেও নিস্তার নেই। মোটরযানের মালিক কোনো যোগাযোগ না করলে সেই প্রতিবেদন পাঠানো হয় বিআরটিএ-তে। স্থগিত করে দেওয়া হয় মোটরযানটির কাগজ। ফলে মোটরযানের কোনো ধরনের হালনাগাদ আর করতে পারবেন না সেটির মালিক।
ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ডা. মোহাম্মদ মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, আমরা সাধারণত পাঁচ ধরনের আইন ভঙ্গে ভিডিও মামলা করি। এগুলো হলো- উল্টোপথে আসা, অবৈধ পার্কিং, গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বলা, সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি এবং সিগন্যাল অমান্য করা। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অবৈধ পার্কিং করা মোটরযানের চালক বা মালিককে যখন আমরা ঘটনাস্থলে পাই না তখন ভিডিও মামলা করা হয়।
ট্রাফিকের পল্লবী জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার ইয়াসমিন সাইকা পাশা বলেন, অনেক সময় আমরা এমন কিছু কাজে ব্যস্ত থাকি যে আশপাশে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের বিষয় নজরে থাকলেও ব্যবস্থা নিতে পারি না। আবার কিছু কিছু আমাদের চোখও এড়িয়ে যায়। তখন এই ভিডিও থেকে আমরা ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীদের শনাক্ত করি এবং আইনের আওতায় আনি।
ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর চারটি ট্রাফিক বিভাগে গেলো অক্টোবর মাসেই ভিডিও ফুটেজের সূত্রে মামলা হয়েছে মোট ২৫ হাজার ২১২টি (পূর্বে ৭১৬০টি, পশ্চিমে ৫০০৫টি, উত্তরে ৬৫১৫টি এবং দক্ষিণে ৬৫৩২টি)। পুলিশ বলছে, ভিডিও মামলার ঘটনায় ন্যূনতম জরিমানা হয় ৭০০ টাকা। যদিও পুলিশের কাছে এসব মামলায় আদায় করা মোট জরিমানার সঠিক অংক জানা নেই, তবে অক্টোবর মাসের মামলাগুলো যদি সর্বনিম্ন ৭শ টাকারও হয় তাহলে এ মাসেই আদায় করা জরিমানার পরিমাণ হয় পৌনে দুই কোটি টাকারও বেশি। আর এটিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৮
এসএইচএস/এএ