এসব অভিযোগের কারণে ২০০৯ সাল থেকে ফারুকের বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র ও মানিলন্ডারিং আইনে ৮টি মামলা হয়। এসব মামলার ভিত্তিতে সোমবার (২৬ নভেম্বর) রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে ফারুক ও তার স্ত্রী আফরোজা আক্তার এ্যানীকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় একটি মাদকের মামলা দায়ের করা হয়েছিলো। সে মামলার সূত্র ধরে তদন্ত করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী নুরুল হক ভুট্টো, তার বড় ভাই, ভাগ্নে এবং বিকাশ এজেন্টসহ ১৭ জনের নামে ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট টেকনাফ থানায় একটি মানিলন্ডারিংয়ের মামলা করা হয়েছিলো। সে মামলায় গোলাম ফারুক ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই মামলায় এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে মোট ৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ফারুকের বিষয়ে তিনি বলেন, গোলাম ফারুক ও তার স্ত্রী এক সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি গ্রামে থাকতেন। তারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ছিলেন না। স্বামী-স্ত্রী ২০০৯ সালে শূন্য হাতে ঢাকায় আসেন। পরে ঢাকার গাজীপুরে একটি গ্রুপের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। সে পরিচয়ের সূত্র ধরে তারা অস্ত্র ব্যবসা শুরু করেন। এর পাশাপাশি তারা একটি গার্মেন্টস ব্যবসা খুলে বসেন। এর কিছুদিন পর তারা ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। তারা প্রথমে টেকনাফের ইয়াবা ব্যবসায়ী নুরুল হক ভুট্টোর চাচা গুড়া মিয়ার কাছ থেকে ইয়াবা এনে ব্যবসা করতেন। পরে এ গোলাম ফারুক নুরুল হক ভুট্টো এবং তার বড় ভাই নুর মোহাম্মদের কাছ থেকে ইয়াবা এনে ব্যবসা করতে থাকেন। ইয়াবার টাকায় গোলাম ফারুক একপর্যায়ে শতকোটি টাকার মালিক বনে যান।
গোলাম ফারুক মাদকের টাকায় সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। তিনি এলেজা এক্সপোর্ট ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি মেশিনারি ফ্যাক্টরি গড়ে তোলেন। যাতে তার প্রায় এক কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে। এছাড়াও তার এবং স্ত্রীর নামে বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে অনেক টাকা সে রেখেছে।
আবার এ টাকা দিয়ে তারা (স্বামী-স্ত্রী) বাড়ি, জমি, মাইক্রোবাস কিনেছেন। আমরা তদন্ত করতে গিয়ে দেখেছি ফারুকের নামে ডিএমপির তেজগাঁও, উত্তরা পূর্ব থানা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদর থানা এবং একই জেলার শিবগঞ্জ থানাসহ বিভিন্ন থানায় ৮টি মাদকের মামলা রয়েছে।
তদন্তকালে তাদের শতকোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। যা শিগগির বাজেয়াপ্ত করে সরকারি কোষাগারে জমা করার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান মোল্লা নজরুল।
সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, গোলাম ফারুক ও তার স্ত্রী গ্রেফতারের আগে মাদকের গডফাদার নুরুল হক ভুট্টোর সঙ্গে অর্থনৈতিক লেনদেনের সূত্র ধরে মিরপুর থেকে আরেক মাদক ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন ইমন, তার স্ত্রী সানিয়া আফরোজ ও ছেলে সালাউদ্দিন প্রিন্সকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। পরে নুরুলের বড় ভাই নুর মোহাম্মদের সঙ্গে অর্থনৈতিক লেনদেনের সূত্র ধরে মিরপুর বিহারী ক্যাম্পের মাদক সম্রাজ্ঞী রুপা ইসলাম, তার স্বামী আল আমিন, সহযোগী রিয়াজ, ফয়সাল এবং বিকাশের এজেন্ট জনি ও কুদ্দুসকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো।
পর্যায়ক্রমে নরসিংদী থেকে মাদকের ডিলার রায়হান, আসাদুজ্জামান, স্বপন, কেরানীগঞ্জের বিকাশ এজেন্ট আব্বাস, টঙ্গীর মাদক সম্রাজ্ঞী রানী, তার সহযোগী নাইম, ইব্রাহিম, বিকাশ এজেন্ট শাহজালাল, নাসির উদ্দিন সোহেলকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও নুরুল হক ভুট্টোর সঙ্গে অর্থনেতিক লেনদেনের সূত্র ধরে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার মুসা মিয়া, জয়পুরহাটের আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। সর্বশেষ এ মামলায় গোলাম ফারুক এবং তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৮
পিএম/আরবি/